বুধবার, ৪ জুন, ২০১৪

প্রত্যেক ক্রিয়ারই সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে

সময়ের সাফ কথা ....
প্রত্যেক ক্রিয়ারই সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে

আরিফিন হক ॥ প্রতিটি কৃত কর্মের জন্য ফল ভোগ করতে হবে। বিধাতা ন্যায় বিচারের জন্য অপেক্ষা করেন না। যখনই আমরা কোন কর্ম সম্পাদন করি তখনই তিনি কর্মের ফল দিতে শুরু করেন। এর দৃশ্যমান প্রভাব কখন আমরা প্রত্যক্ষ করতে পারবো তা নির্ভর করে কৃতকর্ম এবং আমাদের সংবেদনশীলতার মাত্রার উপর। যখন কোন কর্মফল দেরিতে আমরা প্রত্যক্ষ করি তখন আমরা বলে থাকি যে এটা পূর্ব কর্মের ফল হিসেবে হচ্ছে। কিন্তু প্রকৃত সত্যটি হচ্ছে যখন কর্মটি সম্পাদিত হয়েছিল ঠিক তখন থেকে অবিরাম ভাবেই ফল প্রাপ্তির প্রক্রিয়াটি চলতে শুরু করেছিল। এটা বহুমূত্র রোগের মতো, যার প্রক্রিয়াটি শুরু হয় অবিরামভাবে আমাদের খাদ্যের মধ্য দিয়ে যা আমরা খাচ্ছি অথবা শরীর চর্চা করা না করার মধ্য দিয়ে অথবা কঠিন চাপ নেয়া ও না নেয়ার মধ্য দিয়ে। কিন্তু এর সুফল ও কুফলের প্রভাব হয়তো একটা সময়ের পরে স্পষ্টরূপে প্রকাশ পাবে। ক্ষমা চাইলেই যদি বিধাতা কৃতকর্মকে মুছে ফেলতেন তাহলে তিনি ন্যায় বিচারক হতে পারতেন না। যদি এমন হতো তাহলে পাপ করার প্রবণতা এবং পরবর্তীতে ক্ষমা চেয়ে পার পেয়ে যাবার প্রবণতাকে উৎসাহিত করা হতো। বিধাতা ক্ষমাশীল কেবল তাঁর প্রতি কৃতকর্মের ত্রুটির জন্য। বিধাতা যদি মানুষের প্রতি কৃত মানুষের অপরাধ ক্ষমা করে দেন তাহলে যারা কখনই অপরাধ করেনি তারাও অপরাধ করার জন্য উৎসাহিত হবে। তাই বিধাতা দয়ালু ও ন্যায়বান হয়ে এই বিষয়টি নিশ্চিত করেন যে, প্রত্যেকেই ভোগ করবে তার কর্মফল এবং সেটা কমও না আবার বেশিও না, সেটা হবে সমান এবং বিপরীত। 'প্রত্যেক ক্রিয়ারই সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে'- ধর্মবিজ্ঞানের এই সূত্রটি বিজ্ঞানী নিউটন বস্তুজগতে প্রমাণ করেছেন। বিজ্ঞানী নিউটনের অনেক আগে যে সাধক প্রথম তা বলেছিলেন তিনিও অবশ্যই বিজ্ঞানী অর্থাৎ বিশেষ জ্ঞানী ছিলেন।
প্রতিদিন আমরা কর্ম করি অর্থাৎ ধর্ম পালন করি। সকল কর্মে আমরা শতভাগ সফল হই না। কোন কোন ক্ষেত্রে শতভাগ ব্যর্থও হই। কিন্তু এই ব্যর্থতা আমাদের অধার্মিক করে না। আমরা ততক্ষণ পর্যন্ত ধার্মিক থাকি যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের আত্মসংশোধনের সংকল্প থাকে। ব্যর্থতা কিংবা ভুল পাপ নয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যর্থতাই আমাদের প্রাপ্য হয় অভ্যাস কিংবা চিন্তা ও কর্মের সমন্বয়হীনতার কারণে।
মিথ্যাকে বর্জন ও সত্যকে গ্রহণ করার জন্য তপস্যা করতেই হবে। সংসার ছেড়ে বন জঙ্গলে গিয়ে ধ্যান করাকে তপস্যা বলে না। তপস্যার অপর নাম গবেষণা। জীবনের যে কোন উদ্দেশ্য সাধনের জন্য চিন্তাকে দৃঢ় সংকল্পিত করে কঠোর অধ্যবসায়ের মাধ্যমে ধীরে ধীরে সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য চিন্তার যে একাগ্রতা তাকে-ই বলে তপস্যা। অজানাকে জানা, অচেনাকে চেনা, একমাত্র তপস্যা বা গবেষণা দ্বারাই সম্ভব। অনাদিকাল থেকে মানুষ বিভিন্ন বিষয়ের উপর তপস্যা করে অজানাকে জেনেছে, অসম্ভবকে সম্ভব করে মানব কল্যাণে নিয়োজিত করেছে, তপস্যা করেই সত্য বা পরমতত্ত্ব সম্মন্ধে জেনেছে।
তপস্যার মাধ্যমে সকল বাধা বিপত্তিকে অতিক্রম করে মানুষ রহস্য ভেদ করতে পারে এবং নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে সত্যের উপর। যখন কেউ সত্যের প্রতি দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হয় তখন সে সত্য ও শান্তি লাভের যোগ্যতা অর্জন করে। আর যখন সে যোগ্যতা অর্জন করে তখন পুরস্কার হিসেবে লাভ করে জ্ঞান ও পরিতৃপ্তি। এই পুরস্কার তার সংকল্পকে এবং সত্যের সন্ধানের প্রতি তার বিশ্বাসকে আরও দৃঢ় করে। যা পরিশেষে আত্মার মুক্তির দিকে নিয়ে যায়।
শাস্ত্রে উল্লেখ আছে, নবী মোহাম্মদও (সা.) প্রতিদিন একশত বার সংশোধনের সংকল্প করতেন। সংশোধনের সংকল্প হলো আত্মবিরোধী কর্ম থেকে ফিরে গিয়ে আত্মা বা আমি'র আনুগত্য পথের দিকে ধাবিত হওয়া। ভুল ধরা পরা মাত্রই সংশোধনের সংকল্প করা আবশ্যক। কারণ বারবার আত্মবিরোধী কর্মের মাধ্যমে আত্মবিশ্বাস দুর্বল হয়ে যায়। সংশোধনের সংকল্প একনিষ্ঠতার সাথে হওয়া চাই। একই ভুল বারবার করে বারবার সংশোধনের সংকল্প করায় কোন লাভ নেই। ধরা যাক, কেউ মিথ্যা কথন থেকে বিরত থাকার সংকল্প করল কিন্তু সর্বদা মিথ্যাচারে লিপ্ত থাকল এমন প্রকারের সংশোধনের সংকল্প দ্বারা কোন লাভ হবে না। বরং তার সংশোধনের সংকল্প হাসি-ঠাট্টা ও বিদ্রুপ করার মতো হবে। কোন মানুষ যদি যে কোন প্রকারে অন্যের অধিকার হরণ করে তাহলে তার অধিকার ফিরিয়ে না দেয়া পর্যন্ত সংশোধনের সংকল্প করা সঠিক হবে না। একইভাবে কেউ যদি কারো আমানতের খেয়ানত করে থাকে তাহলে সংশোধনের সংকল্প শুরু হয় তার আমানত ফিরিয়ে দেয়ার মধ্য দিয়ে।

ক্ষমা চেয়ে সাথে সাথে পাপ মোচন এবং পাপ করার প্রবণতা দূর করা যায় না। তার জন্য প্রয়োজন নিরলস প্রচেষ্টা, যতক্ষণ না সে অবস্থানে পৌঁছায়। কোন মানুষই ত্রুটিমুক্ত নয়। প্রত্যেকেরই ভুল হয়, ভুলে কোন দোষ নেই। দোষ হলো বারবার একই ভুলের পুনরাবৃত্তি করা। ভুল সংশোধনের আন্তরিক প্রচেষ্টার মাধ্যমেই মানুষ ধার্মিক হয়ে ওঠে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন