বুধবার, ২৫ জুন, ২০১৪

হাক্কানী কথা - ২




হাক্কানী কথা - ২
 

 সংলাপ ॥ সূফী সাধক আনোয়ারুল হক বলে গেছেন - 'দুনিয়াতে মিথ্যা বলে কিছু নেই'। আমি বলছি - সত্য পথের যাত্রী আর হাক্কানী। প্রশ্ন উঠতে পারে - মিথ্যা বলে যখন কিছু নেই তখন সত্য নিয়ে এতো কথা কেন? দুনিয়াতে মিথ্যা বলে কিছু নেই - এটা উপলব্ধির একটা স্তর, চেতনার একটা স্তর। হাক্কানীতে চেতনার স্তরকে সাতটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। চিন্তা জগতের সাতটি স্তরের সাথে এর সমন্বয় আছে। চেতনার একটি স্তরে উপলব্ধি হয় - দুনিয়াতে মিথ্যা বলে কিছু নেই, সবই সত্য। তখন ঐ স্তরে চলে আসে আত্মদর্শনের ব্যাপার। যে নিজেকে, সত্যকে ধারণ-লালন-পালন করতে গিয়ে একটা স্তরে চলে আসে, যার আপাদমস্তক সত্য ছাড়া কিছু নেই তার কাছে তো সবই সত্য। এ স্তরে উদ্ধরণ সহজসাধ্য নয়। এজন্য প্রথমেই জীবনে একটা সত্য নির্ধারণ করতে হবে। প্রশ্ন আসতে পারে কেন একটা সত্যকে নির্ধারণ করবো জীবনে? পৃথিবীতে এমন কোন ধর্ম কি আছে যে এক-কে ছাড়া চলছে? সেই এক-কে যখন আমি ধারণ করবো নিজের মধ্যে, তাকে লালন করতে হবে। একাত্ম ঘোষণা করার মানেই হলো আমি তার মধ্যে ঢুকে গেলাম। আল্লাহ এক, সত্যও এক। পৃথিবীতে যত মানুষের সংস্পর্শে আমি এসেছি তার মধ্যে কাকে আমি বেছে নিলাম যাকে আমি ধারণ করবো, লালন করবো, পালন করবো?
সত্য কি মিথ্যা এটা দেখার ব্যাপার না, যারা ধারণ ও লালন করে তাদের কাছে সবই সত্য। যে সত্যের অন্বেষণ করতে গিয়ে ইসলাম ধর্মের প্রথম খলিফা আবু বকর 'সিদ্দিক' হলেন। নবী মোহাম্মদ (সা.)  আবু বকরকে সম্মানসূচক 'সিদ্দিক' বলে ডাকলেন। এ সম্মান কিন্তু আর কেউ পায় নি। সত্যকে নিয়ে যখন আমরা যাবো, আমরা কথা বলবো, তখন প্রত্যেকে নিজস্ব চিন্তার মধ্যে একটা সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। হতে পারে বিষয়, হতে পারে সম্পদ, হতে পারে একজন ব্যক্তিত্ব। যেখান থেকে 'হাক্কানী স্কুল অফ থট' বের করলেন লক্ষ্য। তোমার জীবনের লক্ষ্য কি? চূড়ান্ত লক্ষ্য কি? আশু লক্ষ্য কি? সেই আশু লক্ষ্যের সাথে চূড়ান্ত লক্ষ্যের কোন সমন্বয় তুমি সাধন করতে পারছো কি-না। না, এটা তোমার মুখের কথা, কথার কথা। এই সত্য নিয়ে সূফীতত্ত্ব তৈরি হলো। সূফীতত্ত্বের উৎপত্তি সত্যকে নিয়ে আর একাত্ম নিয়ে। সূফীতত্ত্বের মূল কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে - 'ওয়াননেস ওয়িথ ওয়ান'। কেন্দ্রবিন্দু কোন্‌টি হবে তার প্রথম দিক নির্দেশনা দিলেন হযরত আজান গাছী তাঁর ভাবশিষ্যদের মধ্যে। আরেকদিকে তিনি প্রতিষ্ঠিত করলেন হাক্কানী আঞ্জুমান এবং প্রাতিষ্ঠানিকভাবে তাঁরা এগিয়ে গেলেন। হযরত আবু আলী আক্তার উদ্দিন তা দিয়ে গেলেন সূফী সাধক আনোয়ারুল হক এঁর কাছে। সূফী সাধক আনোয়ারুল হক সূফীতত্ত্বকে প্রতিষ্ঠিত করার দায়িত্ব প্রাপ্ত হলেন। তাঁর কাছে যারা যেতেন, তাদের মধ্যে কয়েকজনকে বেছে নিয়ে তিনি বললেন যে, প্রতিষ্ঠান কর। ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত হলো হাক্কানী মিশন, প্রতিষ্ঠিত হলো হাক্কানী খানকা শরীফ। হাক্কানী মিশন আসার পর একে একে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া আরম্ভ হলো। এদের সঙ্গে কারো ঝগড়া নাই, কোন হানাহানি নাই, যার যার ধর্ম তার তার কাছে। সবার উপরে মানুষকে প্রাধান্য দেয়া হয় হাক্কানীতে, তার যোগ্যতা অনুসারে। তাই বলে পার্থিব যেসব যোগ্যতা নিয়ে আমরা পৃথিবীর বুকে আছি এটা না। হাক্কানীতে যোগ্যতা দেখা হয় সত্যের সাথে একাত্ম হয়ে কে কতটুকু পথ এগিয়ে গেছেন এবং জীবন চলার পথে কে কতটুকু পরিবর্তন আনতে পেরেছেন, সত্যের কাছে কে কতটুকু সমর্পিত হয়েছেন - এর ভিত্তিতে।
কোনটাই করতে হাক্কানীতে বাধা নাই। যেটার মধ্য দিয়ে যাবেন সেটার মধ্যেই সত্য অন্বেষণ করেন, নিজের মতো করে। পৃথিবীর বুকে যতগুলো তরিকা এসেছে কেউ সত্যকে ছাড়া চলতে পারবে না, শান্তি ছাড়া চলতে পারবে না। সত্যের সঙ্গে একাত্ম ঘোষণা করতে গেলেই কেবল অনুধাবন করতে পারবেন যে বেশির মানুষই ধর্মের নামে যা করে যাচ্ছে তা মিথ্যাচার, পরিপূর্ণ মিথ্যাচার। (চলবে)।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন