বুধবার, ২৫ জুন, ২০১৪

বিষমুক্ত খাদ্য চাই



সময়ের সাফ কথা ....
বিষমুক্ত খাদ্য চাই

আল্লামা সাদেক নূরী ॥ আমি, আপনি এবং আমরা সকলেই বিষমুক্ত খাদ্য চাই; আসলে সব জীবপ্রাণীই তা চায়। এটা সকলের জন্মগত অধিকার। এ অধিকার হরণ কিংবা অস্বীকার করার অধিকার কারো নেই। কিন্তু কেউই কি আমরা বিষমুক্ত খাদ্য পাই?
দেশময় ফসলের কীটনাশক, অগ্রিম পাকানো, অধিক সময় সংরক্ষণ উৎপাদন বৃদ্ধি কিংবা খরিদ্দার আকর্ষণ ইত্যাদি উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত অপরিমিত কীটনাশক ও ফর্মালিন প্রভৃতি ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য খাদ্যপণ্যে মিশে ঘাতক বিষ হয়ে সর্বজনীন বিষযুক্ত খাদ্যে পরিণত হচ্ছে; এ বিষের মরণ গ্রাস থেকে উক্ত ক্ষতিকর দ্রব্যাদি ব্যবহারকারী নিজে অথবা তাদের সন্তানাদি সহ কোন আপনজন কি রেহাই পাচ্ছে! তিনি অথবা তারা বা তাদের স্বজনরা কোথাও যখন ফল ফলাদি বা কোন খাদ্যপণ্য গ্রহণ করেন কেউ কি তখন তাৎক্ষণিকভাবে বিষমুক্ত খাদ্য পরখ করে নিতে পারেন! অবশ্যই তা পারেন না। দেশময় যখন খাদ্যপণ্যাদি একই পক্রিয়ায় উৎপাদিত, প্রক্রিয়া ও বাজারজাতকৃত তখন কারো পক্ষে অনুরূপ চিন্তা ও দাবি করা ডাহা মিথ্যাচার এবং আত্মপ্রবঞ্চনা ছাড়া কিছুই নয়।
দেশের জীববৈচিত্রসহ মানবজীবনে আলোচ্য বিষযুক্ত খাদ্যাগ্রাসনের তাৎক্ষনিক স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি মারাত্মক এবং জীবনঘাতী পরিণতিসমূহ বাংলাদেশ বিষমুক্ত খাদ্য আন্দোলন এর আনুষ্ঠানিক উদ্যোক্তা লে. কর্ণেল (অবঃ) সেলিম উদ্দিন দেশের পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত তার বিভিন্ন লেখা এবং টিভি কথোপকথনে বিস্তারিত করার চেষ্টা করছেন; এ জন্য তাকে অশেষ সাধুবাদ।
যা হোক, আমি অত্যন্ত সচেতনতা ও দায়িত্ববোধের সঙ্গে দাবি করি যে, দেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, সর্বোচ্চ বিচারালয়ের বিচারকসহ সবাই কমবেশি আলোচ্য বিষযুক্ত খাদ্যাগ্রাসনের শিকার। তাছাড়া, যে বা যারা এ আগ্রাসন নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিকারের দায়িত্বে নিয়োজিত এবং যাদের অচেতন দায়িত্বহীনতা বা সচেতন দায়িত্ব অবহেলার দরুণ বিষযুক্ত খাদ্যাগ্রাসন দেশময় সংক্রমিত, তারাও যদি মনে করেন যে, তারা কোন ভাবেই এ সংক্রমনের গ্রাস থেকে সম্পূর্ণমুক্ত তা হলে তারাও আত্মপ্রবঞ্চনার শিকার।
এমতাবস্থায়, সকলকে বিষমুক্ত খাদ্য পেতে হলে তথা বিষমুক্ত খাদ্য খেতে হলে, এ বিষয়ে সকলকে সক্রিয় প্রতিবাদ এবং প্রতিরোধ গড়ে তোলার কোনই বিকল্প নেই। এতো হলো একটা সস্তা ধর্মোপদেশ। তবে, স্মরণীয় যে, ‘চোরে না শুনে ধর্মের কাহিনী'। অপরদিকে স্বার্থান্ধকে হিতোপদেশ আরো ক্রোধান্ধ করে । অতএব এ মড়ক প্রতিরোধে কঠোর সরকারি আইনি নিয়ন্ত্রণ বাস্তবায়ন ছাড়া অন্য কিছু ভাবা বাতুলতা বই নয়। বলা বাহুল্য যে, এ ব্যাপারে সরকার যতো কঠোর হবে জনগণপ্রতিরোধও ততই শক্তিশালী এবং সফল হবে।
উল্লেখ্য যে, এ বিষয়ে সরকারের কঠোর নিয়ন্ত্রণ পদক্ষেপাদি উক্ত দ্রব্যাদি আমদানি লাইসেন্স পর্যায় থেকে শুরু করে আমদানিকারকদের তা বাজারজাত করার তদারকি পর্যন্ত সততা এবং স্বজ্ঞতার সঙ্গে ক্ষমাহীন দৃঢ়তায় কার্যকর করতে হবে।
এ পর্যায়ে আইন লঙ্ঘনের অপরাধে সর্বোচ্চ মেয়াদে জেল জরিমানা ছাড়াও ক্ষেত্রবিশেষে মৃত্যুদণ্ডের বিধানও অযৌক্তিক হবে না; কারণ আলোচ্য অপরাধটি চূড়ান্ত বিশ্লেষণে সার্বজনীন প্রাণঘাতীই বটে।
মোদ্দাকথা, উক্ত দ্রব্যাদি কঠোরভাবে আমদানি, বাজারজাত নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি এবং প্রয়োজনে শাস্তির ব্যবস্থা না করে সরকারের তরফ থেকে বাজার বা মাঠ পর্যায়ে যাই করা হোক, সবই হবে জাতীয় অর্থ, সম্পদ ও সময়ের অপচয় এবং জনগণের জন্য ধাপ্পা এবং ধোঁকা। তবে, ইতোমধ্যে কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতা ও অবহেলার দরুণ বাজারে ছড়িয়ে পরা উক্ত শ্রেণীর দ্রব্যাদি নিয়ন্ত্রণের জন্য মাঠ পর্যায়ের সরকারি কার্যক্রম অবশ্যই চালু থাকতে হবে।
এ পর্যায়ে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, সরকারের যে কোন বিভাগ বা দপ্তরের দায়িত্ব কর্তব্য সম্পর্কে গণমাধ্যমে বিরূপ কথাবার্তা শুরু হলে একটি সস্তা এবং বাজে অজুহাত দেখিয়ে কর্তাব্যক্তিরা দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার অপচেষ্টা করে থাকেন এবং এড়িয়ে যানও বটে। সে অজুহাতটি হলো, আইনের অপ্রতুলতা এবং লোকবলের অভাব। এটা শুনে শুনে জনগণ বিরক্ত ও বিক্ষুব্ধ।
জনবলের প্রয়োজন বা আইনের অপ্রতুলতা থাকতেই পারে। তাই বলে যারা আছেন এবং যে আইনি ব্যবস্থা রয়েছে, তার প্রাপ্য কার্যকারিত জনগণ দেখতে চায়। এ পর্যায়ে জনগণ জানতে চায় এবং জনগণের সে অধিকারও অবশ্যই রয়েছে - সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বিভাগ বা দপ্তরে যারা রয়েছেন তারা এ পর্যন্ত আমদানি পর্যায়ে আইন ভঙ্গকারী ক'জনকে আইনের আওতায় সোপর্দ করেছেন? আইন কি করেছে, তা নিয়ে পরবর্তীতে কথা বলার ইচ্ছা রইল। সাধু সাবধান।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন