হাক্কানী
কথা
সংলাপ ॥
সূফী সাধক আনোয়ারুল হক বলেছেন - 'এ জগতে যে যত বেশি বুঝতে গেছে, সে তত পড়ছে পিছে।
অজ্ঞান হলে থাকতো কাছে। পেয়ে যেতো সাথে সাথে, চলার পথে।' হাক্কানী শব্দের উৎপত্তি
হক থেকে। হক অর্থ সত্য। মানুষের ব্যক্তিস্বার্থ এবং গোষ্ঠীস্বার্থের মধ্যে যখন
দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে তখন সত্য আস্তে আস্তে উদ্ভাসিত হয়েছে। যে সকল ব্যক্তিত্ব তা
উপলব্ধি করতে পেরেছেন তাঁরা সত্যকে নিয়ে এগিয়ে গেছেন পৃথিবীতে শান্তি আনার জন্যে।
ধারাবাহিকভাবে এটা চলে আসছে এবং রূপান্তরিত হয়ে আরবি ভাষায় 'হক' থেকে আসলো
'হাক্কানী' শব্দটি। হাক্কানী অর্থ সত্য। অপর দিকে হকের দুটো দিক আছে। একটি হচ্ছে
আল্লাহর প্রতি হক আরেকটি হচ্ছে আমি যে পরিবেশে আছি সেখানে আমার হক। এর বিশ্লেষণ
দেয়া হলো যখন ইসলাম ধর্ম আসলো। মহানবী (সা.) যখন বললেন, মুসলিমদের জন্যে ধর্ম
হচ্ছে শান্তি। নবী মোহাম্মদ (সা.) পৃথিবীতে সর্বশ্রেষ্ঠ নবী তার একমাত্র কারণ -
তিনি এমন শব্দ প্রয়োগ করলেন, ধর্ম হিসেবে যা আর কেউ করতে পারবে না। ইসলাম অর্থ
শান্তি। মানুষের অন্বেষণ হচ্ছে শান্তিকে নিয়ে। এই জন্যে তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ নবী।
মানবজাতির ইতিহাসে যত নবী-রসুল এসেছেন সবাই শান্তির কথা বলেছেন, সত্যের কথা বলেছেন
কিন্তু ধর্ম 'শান্তি' একথা নবী মোহাম্মদ (সা.) ব্যতীত আর কেউ বলেন নাই। ধর্ম যখন
শান্তি হিসেবে আসল তার মধ্যে নিহিত আছে হক।
এ
উপমহাদেশে সূফী সাধক আজানগাছী তা উপলব্ধি করেছেন এবং সত্যকে তিনি তাঁর আদর্শ ও
দর্শন হিসেবে গ্রহণ করে এগিয়ে গেলেন। তৎকালীন সময়ে যতগুলো তরীকা ছিল, বিশেষ করে
চারটি তরিকা এবং অন্যান্য তরিকার সাথে তিনি সমন্বয় সাধন করলেন। প্রত্যেকের কাছে
তিনি গিয়েছেন, তাদের আদর্শ, নীতি এবং তাঁরা কোন্ পথে চলছেন তা তিনি জেনেছেন।
জানার পর তিনি তৈরি করলেন 'হাক্কানী' যা সকল তরিকার সারোৎসার। সত্য হলো দর্শন। সেই
সত্যের ধারাবাহিকতায় তিনি দুটি দিকে অগ্রসর হলেন। একটি প্রাতিষ্ঠানিক দিক অন্যটি
আধ্যাত্মিক। আধ্যাত্মিক দিকে তাঁরই স্নেহধন্য হযরত আবু আলী আক্তার উদ্দিন
'হাক্কানী' নিয়ে আসলেন বাংলার বুকে। তিনি লালন পালন করলেন সত্য দর্শনকে নিজ জীবনে।
প্রতিটি মুহূর্তে চলার পথে তিনি সত্যকে আলিঙ্গন করে নিলেন। হযরত আবু আলী আক্তার
উদ্দিন তাঁর প্রধান খলিফা হিসেবে বেছে নিলেন সূফী সাধক আনোয়ারুল হক-কে। হাক্কানী দর্শনকে
তাঁর হাতে তুলে দিলেন। তিনি তা নিয়ে চলা আরম্ভ করলেন। পৃথিবীতে এমন কোন তরিকা নাই
যে তরিকার সারোৎসার হাক্কানী তরিকায় নাই। সূফী সাধক আনোয়ারুল হক প্রথমেই উপলব্ধি
করলেন, বর্তমান পৃথিবীতে গতানুগতিক যে ধারা চলছে সে ধারায় হাক্কানীকে প্রতিষ্ঠিত
করা যাবে না এবং ইসলাম 'শান্তি' এটাকেও প্রতিষ্ঠিত করা যাবে না। তিনি ক্ষমতায় আসার
পর হাক্কানী তরিকা হিসেবে প্রথম নিয়ে আসলেন। তাঁর কাছে যারা গেছেন তাদেরকে তিনি
যার যার যোগ্যতা অনুসারে বিভিন্ন তরিকার মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। যারা হাক্কানী
হতে চেয়েছে তাদেরকে তিনি প্রাতিষ্ঠানিক ও আধ্যাত্মিকতা এই দুটি দিকে পথ প্রদর্শন
করেছেন। সত্যকে আলিঙ্গন করবে যে সে হাক্কানী। সত্যকে যে নিজের জীবনের সঙ্গে একাত্ম
করবে সে হাক্কানী। জীবন চলার পথে একটি সত্যকে যিনি ধারণ করেছেন এবং লালন করেছেন
তিনি হাক্কানী পথের যাত্রী। যত কর্মকা- আমরা প্রতিদিন করি তার মধ্যে অন্তত একটিকে
বেছে নিয়ে যিনি সত্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি হাক্কানী পথের যাত্রী। আর যিনি
পরিপূর্ণভাবে লক্ষ্য নির্ধারণ করলেন যে আমি হাক্কানী হবো, সকল কর্মকাণ্ডের মধ্যে
'আমি' সত্য প্রতিষ্ঠিত করার জন্যে নিয়োজিত থাকবো তিনি হবেন হাক্কানী। হাক্কানী
পথের যাত্রীও কালক্রমে হাক্কানী হতে পারেন। পৃথিবীতে যতদিন মানবজাতি থাকবে ততদিন সত্যের
ধারাবাহিকতা চলতে থাকবে। কখনো বা জোয়ারে অনেক দূর চলে যাবে কখনো বা ভাটির টানে
স্তব্ধ হয়ে যাবে অথবা কিছুটা পিছিয়ে আসবে। (চলবে)।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন