মঙ্গলবার, ২৬ আগস্ট, ২০১৪

দুর্নীতি প্রতিরোধে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়কে আরও তৎপর হতে হবে

দুর্নীতি প্রতিরোধে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়কে 
আরও তৎপর হতে হবে

শেখ উল্লাস ॥  সমাজে দুর্নীতিবাজচক্র সক্রিয় ও শক্তিশালী হয়ে উঠলে সৎ মানুষেরা কোণঠাসা ও মর্যাদাহীন হয়ে পড়ে। এরই একটি উদাহরণ - ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ার সরাইল থানার শাহবাজপুর গ্রামের মালেকা বেগম। স্বাধীনতা যুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করলেও এখন পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাননি তিনি। (জামুকায় তার সর্বশেষ আবেদনের নম্বর: ডিজি ১৫৮৫৪, তারিখ-২৩/১০/২০১৩)। বিগত সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও সচিব যখন মালেকা বেগমের নিজ জেলার লোক ছিলেন তখনও মালেকা বেগমের চেষ্টা সফল হয়নি। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি একজন অসহায় ও দরিদ্র নারী হিসেবে তার অনেক কাজে আসতো। নিজের জীবনকে তিনি সার্থক মনে করতে পারতেন।  মালেকা বেগমের মুক্তিযোদ্ধা সনদ পেতে ৪৩ বছর পার হয়ে যায়, অথচ মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও নিজের ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে সনদ পেয়ে যান মন্ত্রণালয়েরই সচিব, উপসচিব, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালকের মতো পদে থেকে রাষ্ট্রীয় সুবিধা ভোগকারী অনেক কর্মকর্তা। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরে দীর্ঘদিন ধরে জালিয়াত চক্র সক্রিয় থাকার কারণেই যে এমনটি হচ্ছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে ১৯৭১ সালের ১৯শে মার্চ জয়দেবপুরে পাকিস্তানী সৈন্যদের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থানের (জয়দেবপুর চৌরাস্তার জাগ্রত চৌরঙ্গী আজও যে স্মৃতি বহন করছে) অন্যতম নায়ক আ.ক.ম মোজাম্মেল হক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর সনদ জালিয়াতিসহ বিভিন্ন দুর্নীতি তদন্তে যে পদক্ষেপ নিয়েছেন তা সচেতন মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অর্থাৎ, আমলাতন্ত্রে দুর্নীতিবাজরা যেভাবে ঘাপটি মেরে বসে আছে তা মোকাবেলার জন্য মুক্তিযুদ্ধের একজন বলিষ্ঠ সংগঠককে যথাযথ শক্তি ও কৌশল প্রয়োগ করেই এগোতে হবে এবং লক্ষ্য অর্জনে একনিষ্ঠ হলে অবশ্যই তিনি সফল হবেন।
ইতোমধ্যে সনাক্ত করা হয়েছে বেশ কয়েক জন উর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাকে যারা দুর্নীতির মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়ে নিজেদের কায়েমী স্বার্থ আদায়ে লিপ্ত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব এইচ মাসুদ সিদ্দিকী তার চাকরির মেয়াদ এক বছর বাড়াতে গত বছর নিজের মন্ত্রণালয় থেকে নিজেই মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়েছিলেন। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদান রাখার জন্য বিদেশি অতিথিদেরকে ক্রেষ্ট প্রদান ও সনদে জালিয়াতি করার জন্য তাকে সচিবের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে ওএসডি করা হয়েছে। জালিয়াতি করে মুক্তিযোদ্ধা সনদ তোলার জন্য এ পর্যন্ত পাঁচ হাজারেরও বেশি সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিকে সনাক্ত করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। সাম্প্রতিককালে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর পদক্ষেপ গ্রহণের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয় যে, সঠিক জায়গায় সঠিক লোক থাকলে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ চিন্তা-চেতনায় ও কর্মে আন্তরিক হলে যে-কোনো দুর্নীতিবাজকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব।

সরিষা দিয়ে ভূত তাড়াতে হয় বলে একটি কথা প্রচলিত আছে। কিন্তু  সর্ষের ভেতরেই যদি ভূত থাকে সে ভূত কে তাড়াবে? মন্ত্রণালয়ের ভেতরেই জালিয়াত চক্র যদি ভুঁয়া সনদ তৈরিতে সক্রিয় থাকে, তাদের দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা প্রদানে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ ব্যর্থ হতে বাধ্য। সেই পরিপ্রেক্ষিতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর সাম্প্রতিক পদক্ষেপ দেশে দুর্নীতিবাজদের সনাক্তকরণের পথে একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ -যা দেশের বিবেকবান মহল কর্তৃক অভিনন্দিত হবে-এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়। তবে মন্ত্রণালয়কে দুর্নীতি প্রতিরোধে আরও তৎপর হতে হবে। দুর্নীতিবাজরা সকল নৈতিক মূল্যবোধ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ থাকবে এটাই স্বাভাবিক। ৭১' এর পরাজিত শক্তি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিভ্রান্ত, বিতর্কিত ও অমর্যাদাকর করে তোলার জন্য সব সময় তৎপর এবং এই চক্রটি থাবা বিস্তার করে আছে সর্বস্তরে। এই চক্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়লাভ করাও তাই এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। দুর্নীতি ও দুর্নীতিবাজদের কারণেই দেশে বৈষম্য, সন্ত্রাস, ধর্মান্ধতা ও অশান্তি সৃষ্টি হয়, এরাই  মানুষকে মিথ্যাচারের পথে ঠেলে দিতে প্ররোচনা দেয়। আজ দেশের নতুন বাস্তবতায় মহান মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস, চেতনা ও মুক্তিযোদ্ধাদের মান-মর্যাদা প্রতিষ্ঠার বিরাট দায়িত্ব মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের ওপর অর্পিত হয়েছে। সঠিক জায়গায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ সঠিক ব্যক্তিত্বকে বসিয়ে সুষ্ঠু প্রশাসনিক ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মন্ত্রণালয় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণ ও আদর্শ বাস্তবায়নে এগিয়ে যাবে-এটাই আজ জাতির প্রত্যাশা। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন