সময়ের সাফ কথা
....
গুরুই যথার্থ সারথি
আরিফিন হক ॥ যারা বুদ্ধিমান তারা ইন্দ্রিয়গুলিকে
নিয়ন্ত্রিত করে জীবনযাপন করে। আর যারা নির্বোধ
তারা ইন্দ্রিয়ের দাস হয়ে জীবনযাপন করে। ইন্দ্রিয়ের দাস হয়ে জীবনযাপন করলে যতো কিছুই
প্রাপ্তি হোক না কেন পরিণামে তৃপ্তি হয় না। আর অতৃপ্তি হচ্ছে দুঃখের কারণ। যদি কারও
অর্থ বিত্ত নাও থাকে কিন্তু অন্তরে তিনি যদি তৃপ্ত হন তাহলে তিনি সুখেই আছেন, আর কারও
কাছে প্রচুর অর্থ বিত্ত থাকা সত্ত্বেও যদি তিনি অন্তরে অতৃপ্ত হন তাহলে তিনি দুঃখেই
আছেন। তাহলে সুখ বা দুঃখের মূল কারণটি হচ্ছে তৃপ্তি এবং অতৃপ্তি, অন্তরের সন্তুষ্টি
এবং অসন্তুষ্টি। অন্তরে যিনি সন্তুষ্ট তার কাছে যদি কিছু নাও থাকে, তবুও তিনি সুখী।
আর অন্তরে যিনি অতৃপ্ত, অন্তরে যিনি অসন্তুষ্ট ও অশান্ত, তার কাছে সবকিছু থাকলেও তিনি
অসুখী।
যারা ইন্দ্রিয়ের দাসত্ব করে তারা সর্ব অবস্থাতেই অতৃপ্ত
থাকে, কেন না ইন্দ্রিয়ের অবস্থাটিই এই রকম। ইন্দ্রিয় সব সময়ই ভোগ চাইছে। সে সর্বদা
বলে আমি এটা চাই, আমি ওটা চাই। কিন্তু সে যতই পায় কখনও কি সে তৃপ্ত হয়? উপভোগের দ্বারা
কখনই ইন্দ্রিয়গুলিকে সংযত করা যায় না বা তৃপ্ত করা যায় না। অগ্নিতে ঘি ঢেলে অগ্নি নেভানো
যায় না। যত ঘি ঢালা হবে আগুন ততই উদ্দীপ্ত হয়ে উঠবে। অর্থাৎ যারা ইন্দ্রিয় উপভোগের
মাধ্যমে তৃপ্তি সাধন করতে চায় তারা কখনও তৃপ্ত হতে পারে না।
আমাদের দেহটিকে যদি একটি রথের সঙ্গে তুলনা করি, ইন্দ্রিয়গুলিকে
যদি পাঁচটি ঘোড়ার সঙ্গে তুলনা করি তাহলে এই রথটি কিভাবে আমাদের চালাতে হবে? ঘোড়াগুলিকে
সংযত করার জন্য লাগাম দরকার। লাগামটি হলো চিন্তা। আবার লাগামটাকে সংযত করতে হলেও একজন
সারথি বা চালক প্রয়োজন। সেই সারথি কে? - 'আমি'। কিন্তু 'আমি' কে? তা আমরা জানি না।
তাই এমন এক 'আমি'র সাথে সংযোগ দরকার যে 'আমি' 'আমি'-কে চিনে। এই 'আমি'ই গুরু।
রথ তা জীবনেরই হোক কিংবা যুদ্ধের গুরুই যথার্থ সারথি। সুতরাং
- ‘হে মানবজাতি! তোমরা যে ধর্মাবলম্বীই হও না কেন দ্বীন-দুনিয়ার শান্তি ও মঙ্গল হাসিল
করার জন্য মুর্শিদ/গুরু/পথ-প্রদর্শক তালাশ কর এবং সংযোগ স্থাপন কর। যদি সংযোগ স্থাপন
করতে না পার তাহলে অন্ততঃপক্ষে সংযোগ রক্ষা করে চল।’
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন