মঙ্গলবার, ২৬ আগস্ট, ২০১৪

রাজনীতির বিবর্তন ও সৈয়দ আশরাফের আক্ষেপ

রাজনীতির বিবর্তন ও সৈয়দ আশরাফের আক্ষেপ


বর্ষা ॥ তথ্য প্রযুক্তি ও ডিজিটাল বাংলাদেশের ডামাডোলের এ সময়ে রাস্তাঘাটের দিকে এক নজর তাকালেই বোঝা যায় এদেশের রাজনীতি কতটা বদলে গেছে। আগের দিনে একজন ছাত্র নেতা কিংবা রাজনৈতিক নেতা বক্তৃতা করতেন ছাত্রসভায় বা জনসভায়, ছাত্র-ছাত্রী, সাধারণ মানুষ মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তার কথা শুনতো, যে দৃশ্য এখন দেখা যায় না বললেই চলে।  সেই জনসভায় বক্তৃতা বা ভাষণ দেয়ার আগে সেই নেতাকে কত রকমের যোগ্যতা ও প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হতো- সে সব কথা সংশ্লিষ্ট সচেতন মানুষেরা এখনো ঠিকই স্মরণে রেখেছে। আগের দিনে নেতা হতো জনপ্রতিনিধি হিসেবে বিভিন্নভাবে নির্বাচিত হয়ে, নির্বাচনে অংশ নেয়ার আগেও দেশ ও জনগণের দাবি-দাওয়া নিয়ে কতো আন্দোলন-সংগ্রামেই না তাদেরকে যোগদান করতে হতো। কতো ত্যাগ-তিতিক্ষাই না ছিলো একজন নেতার জীবনে। এখন রাজনীতি করা যেন শুধুই পাওয়ার জন্য। অবশ্য ভুঁইফোড় নেতা কিংবা সংগঠন তখনো যে ছিলো না তা নয়। তবে তারা রাজনৈতিক ক্ষেত্রের নিয়ামক শক্তি ছিলো না। এখন ডিজিটাল ব্যানার আর অসংখ্য টিভি চ্যানেলের কারণে অনেক ক্ষেত্রে ভুঁইফোড় নেতাদেরকেই রাজনীতির প্রধান শক্তি হিসেবে দেখা যায়। দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি এখন এমন অবস্থাতেই পৌঁছেছে যে, নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণ 'নেই বললেই চলে' অবস্থা। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫৩টি আসনে নির্বাচন হয়নি বলে সেখানে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত দেখানো হয়েছে। দেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখন ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় না। আগের দিনের জনসভার স্থান আজ যেন দখল করে নিয়েছে মানববন্ধন, কিংবা জনসভার চাইতে অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ডিজিটাল ব্যানার। কিছু টাকা খরচ করে বড় বড় ছবি ছাপিয়ে রাস্তার এপাশ-ওপাশ দখল করে টাঙ্গিয়ে দিলেই হলো। মানুষ তার ছবি না দেখে যাবে কোথায়? এই জাতীয় ছবি টানানোর পেছনে যে কতো রকমের বাণিজ্য ও মিথ্যাচার আছে তাও এদেশের রাজনীতির ইতিহাসের এক দুঃখজনক অধ্যায়। বড় বড় নেতা-নেত্রী এমনকি স্বাধীনতার মহান স্থপতির ছোট্ট ছবির পাশে নিজের একখানা বড় ছবি ছাপিয়ে পোষ্টার-ব্যানার টাঙ্গিয়ে দেয়া হচ্ছে রাস্তার পাশে। এই অবস্থায় আক্ষেপ করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এবারের ১৫ই আগষ্টে রাজধানীতে জাতীয় শোক দিবসের এক আলোচনা সভায়  নিজ দলের নেতাকর্মীদের দ্বারা তাকে না জানিয়ে তার ছবি দিয়ে পোষ্টার ছাপানোর জন্য আক্ষেপ করে চাঁদাবাজি, টেণ্ডারবাজি ও অন্তর্দলীয় কোন্দল থেকে বিরত থাকতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। একজন সৎ রাজনৈতিক নেতা হিসেবে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের এই আক্ষেপ, এই জাতীয় উপলব্ধি সংশ্লিষ্ট সকলের মধ্যে সঞ্চারিত হলে দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি উন্নতি হবে। নচেৎ রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্খা থেকে আরও দূরে সরে যাবেন-এই আশঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে যা দেশের জন্য আরও অকল্যাণ বয়ে আনতে পারে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন