মঙ্গলবার, ১৯ আগস্ট, ২০১৪

বঙ্গোপসাগরের তলদেশে বসছে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন


বঙ্গোপসাগরের তলদেশে বসছে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন

শামসুর রহমান ॥ লোডশেডিং এর অসহনীয় জ্বালা থেকে মুক্ত করতে সরকার একের পর এক প্রকল্প হাতে নিয়ে বাস্তবায়নে এগিয়ে চলেছে। প্রতিবেশি দেশ ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানীর কথা প্রায় পাকা করে এনেছে সরকার। অন্যদিকে দেশের ভেতরেই বিদ্যুৎ উৎপাদনের সব ধরনের প্রচেষ্টাই করে চলেছে। এর ফলশ্রুতিতে দেশের  গুরুত্বপূর্ণ দ্বীপ সন্দ্বীপকে জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিডের আওতায় আনা হচ্ছে। বঙ্গোপসাগরের তলদেশ দিয়ে ৮০ কিলোমিটার সাবমেরিন বিদ্যুৎ কেবল স্থাপনের মাধ্যমে জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিডে সংযুক্ত করা হচ্ছে এই দ্বীপবাসীকে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম অঞ্চলের পাঁচ জেলায় নতুন করে দেড় হাজার কিলোমিটার বিদ্যুতের নতুন বিতরণ লাইন নির্মাণ ও তিন হাজার কিলোমিটার লাইনের সংস্কার করা হবে। এ জন্য এক হাজার ৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে 'চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন' নামে একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে সরকার। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।
এ বিপুল ব্যয়ের মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১ হাজার ৩০ কোটি আর মাত্র ২৪ কোটি টাকা পিডিবির তহবিল থেকে জোগান দেয়া হবে। শিগগির প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় সরকার চূড়ান্ত অনুমোদন দিতে পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বর্তমানে চট্টগ্রামে ১৩০০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে মাত্র ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দেয়া হয়।
সরকার মনে করে, ২০২১ সালের মধ্যেই চট্টগ্রামে চার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন হতে পারে। বর্ধিত এ চাহিদা পূরণের জন্য সরকারি প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এ প্রকল্পটি নেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া সম্প্রতি অনুমোদন পাওয়া মাতারবাড়ী ১২০০ মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎ  কেন্দ্র ছাড়াও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে ১ হাজার ৩০০ ও  কোরিয়ার একটি কোম্পানির ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের আরও একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ বেশ কিছু বিদ্যুৎ প্রকল নির্মাণের প্রস্তাব রয়েছে। এসব প্রকল্পের আগে বিতরণ ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করার উদ্দেশ্যেই প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে। তবে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুৎ সঞ্চালনে আরও বড় ধরনের প্রকল্প  নেয়া হবে বলে জানা গেছে।
সম্প্রতি প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনের প্রকল প্রাক-মূল্যায়ন কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হয়। সভায় সন্দীপের জন্য সাবমেরিন কেবল স্থাপনের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ কোনো ধরনের সম্ভাব্যতা যাচাই করেছে কি-না জানতে চাওয়া হয়। এটি প্রযুক্তিনির্ভর ও আধুনিক কাজ। কমিশন মনে করে, এ ধরনের কাজ দেশে নতুন। এর আগে এ ধরনের কাজ খুব বেশি হয়নি। তাই সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলা হয়, যাতে করে প্রযুক্তির স্থাপনায় দেশীয় প্রকৌশলীদের প্রাধান্য দেয়ার অবকাশ থাকে। কমিশনের  এধরণের মনে করার পেছনে দেশীয় প্রকৌশলীদের আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা হলে পরের প্রকলের গুলোর জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা কামনা করতে হবে না। এ বিষয়টি মাথায় রেখেই পিডিবি বিষয়ের উপর ভালো করে যাচাই করে দেখার পক্ষে মত দেয়।

সূত্র জানায়, প্রকলে সন্দ্বীপকে জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিডে যুক্ত করতে ৮০ কিলোমিটার মেরিন কেবল স্থাপনে প্রায় ১১০  কোটি টাকা ব্যয় হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন জানান, সন্দীপকে জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে ওই দ্বীপের অর্থনৈতিক ও সামাজিক ব্যাপক পরিবর্তন হবে। দেশে মৎস সম্পদ নতুন মোড় নেবে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষ করে দ্বীপটির মৎস্য সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি নতুন করে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড  আরো জোরদার হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন