সময়ের সাফ কথা ....
সত্য প্রতিষ্ঠার প্রয়াসে হতাশার
স্থান নেই
আরিফিন হক ॥ মানব সভ্যতার জন্মলগ্ন থেকেই সত্য-মিথ্যার দ্বন্দ্ব
শুরু হয়েছিল যা এখনো চলছে এবং চলতেই থাকবে যতদিন পৃথিবীতে মানব জাতি থাকবে। কুরআন মতে
হাবিল ও কাবিলের দ্বন্দ্বের মধ্য দিয়ে এ যাত্রা শুরু হয়েছিল। এখনো পৃথিবীতে এমন কোন
অঞ্চল নেই যেখানে সত্য প্রতিষ্ঠিত আছে। এ পরিস্থিতিতে সত্যানুসন্ধানীদের মধ্যে হতাশা
সৃষ্টি হওয়ারই কথা। অনেকের কাছেই সত্য প্রতিষ্ঠার প্রয়াসে সম্মুখে এগিয়ে যাওয়া দুরূহ
হিসেবে প্রতিপন্ন হয়।
সত্যানুসন্ধানীদের কাছে প্রকৃত সফলতা হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টি
অর্জন করা ও তাঁর নির্দেশিত পথে এগিয়ে চলা। ইসলাম বলে 'আকিমুদ্দীন' অর্থাৎ দ্বীন প্রতিষ্ঠিত
করো, ব্যক্তি জীবনে শান্তিকে জীবন ব্যবস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত রাখো। শান্তি প্রতিষ্ঠিত
না করতে পারলেও প্রয়াস থেকে অব্যাহতি নেয়ার জো নেই। তাতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। আল্লাহ
বলেন, 'যে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে, সে তার ভালোর জন্যই করবে' (সুরা আনকাবুত-৬)। অন্য
আয়াতে আল্লাহ বলেন -'আর যারা আমার খাতিরে প্রচেষ্টা করবে তাদের আমি অবশ্য অবশ্যই আমার
পথ দেখাবো। আর নিশ্চয় আল্লাহ সত্যানুসন্ধানীদের সাথেই আছেন' (সুরা আনকাবুত-৬৯)।
সত্যানুসন্ধানীদের পথচলা যতই কঠিন হোক না কেন আল্লাহর পথে
অবিচল থাকতে হবে আমৃত্যু। যারা লক্ষ্যময় জীবন শুরু করেছেন লক্ষ্যের দিকে অগ্রসর হওয়া
ব্যতীত অন্য কোন পথ ও মত তাদের কাছে নেই। কারণ লক্ষ্য নির্ধারণ করার অর্থ কেবল লক্ষ্য
নির্ধারণ করা নয়, লক্ষ্যহীন বিষয়গুলোকে বর্জন করাও। নিজের লক্ষ্যের প্রতি সমর্পিত তারাই
যারা লক্ষ্য নির্ধারণের পর এতে কোন সন্দেহ করে না এবং লক্ষ্য অর্জনের জন্য সর্বশক্তি
দিয়ে প্রয়াস করে। প্রকৃত প্রস্তাবে তারাই সত্যানুসন্ধানী।
যারা এ পথে চলতে গিয়ে সাময়িক বিজয় পেয়ে উল্লসিত হয় অথবা
বিপদের সম্মুখীন হয়ে হত-বিহ্বল হয় তাদের জীবনেই নেমে আসে হতাশার তমসা। যারা অবিরত চলতে
থাকেন তাদের মধ্যে লক্ষ্য অর্জনে কোন সন্দেহ সংশয় থাকার অবকাশই নেই।
নিজের জন্য 'এক' সত্য নির্ধারণের পর একজন ব্যক্তি মুমিন
হয়ে যান। আর যিনি মুমিন হয়ে যান তার জন্য লক্ষ্য ব্যতীত এদিক সেদিক দৃষ্টি ক্ষেপণের
প্রয়োজনীয়তা থাকে না। কিন্তু তবু পার্থিব প্রাপ্তি, লোভ-লালসা, ক্ষমতার আকাঙ্খা মানুষকে লক্ষ্য থেকে
বিচ্যুত করে ফেলে। নিজের মধ্যেই কুমন্ত্রণা তৈরি হয়। এ কারণে মহান আল্লাহ তায়ালা শান্তিকে
পরিপূর্ণভাবে চর্যা করার তাগিদ দিয়েছেন। হতাশা তার মধ্যেই আসে যে সম্পদ, ক্ষমতা ও দুনিয়ার
হাতছানিকে অস্বীকার করতে পারে না। 'সময়ের কসম! নিশ্চয় মানুষ ক্ষতির মাঝে নিমজ্জিত!
তারা ছাড়া যারা বিশ্বাস করে, সৎ কাজ করে, সৎ কাজের উপদেশ দেয় এবং ধৈর্য ধারণ করার জন্য উপদেশ দেয়' (সূরা আল আসর)।
মুসলিম মিল্লাত আজ মহাসংকটাপন্ন অবস্থায়। এ অবস্থার জন্য
আমরাই দায়ী। আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করার পরিবর্তে দুনিয়ার সাময়িক ক্ষমতাধরদের কাছে
মুসলিম মিল্লাতের নেতৃবৃন্দ মাথানত করে ক্ষমতার স্বাদ আস্বাদন করছেন। তাদের দায়িত্ব
ও কর্তব্যের ব্যাপারে বেমালুম ভুলে গিয়ে শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করছেন প্রতিনিয়ত। যে
কারণে ইসলামের স্বরূপ অমুসলিমদের কাছে পরিষ্কার নয়। তাই বিশ্বব্যাপী ইসলামের বিরুদ্ধে
যে প্রচারণা চলছে তা বিশ্বাসযোগ্যতা লাভ করছে। এতে ইসলামের চিরন্তন শাশ্বত সৌন্দর্য
থেকে বিশ্বমানবতা বঞ্চিত হচ্ছে। মৌলবাদী, জঙ্গি, পশ্চাৎপদ ইত্যাদি নামে মুসলমানদেরকে
অভিহিত করা হচ্ছে।
সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে পৃথিবীর সকল মানুষও যদি বিরোধিতা
করে, বাধা দেয় তাতেও প্রকৃত সত্যানুসন্ধীদের পথ চলা বন্ধ হবে না। যারা বিরোধিতা করে
বা যারা না বুঝে ঝামেলা পাকায় তারা সত্য পন্থীদের জীবনাচরণের মধ্যেই অনেকগুলো উত্তর
খুঁজে পাবে। তারপরও যদি তারা নিবৃত্ত না হয় তা হলে কি হাল ছাড়ার উপায় আছে? প্রথমে মক্কার
লোকেরা নবী মোহাম্মদ (সা.) এঁর কথায় কর্ণপাত করেনি, তাদের সত্যের পথে বারবার আহ্বান
জানানোর পরও প্রত্যাখ্যান করেছিল, আবার কখনও রাগান্বিত হয়ে- নবী (সা.)-কে নানাভাবে
অপমানিত করেছে, নির্যাতন করেছে। কিন্তু তিনি প্রচেষ্টা থামাননি। অবিরত প্রচেষ্টার ফলেই
নবী মোহাম্মদ (সা.) চূড়ান্তভাবে সফল হয়েছিলেন।
সত্যের পথে চলতে গিয়ে বাধা-বিপত্তি আসলে গন্তব্য পানে চলা বন্ধ করার কোন সুযোগ
নেই। আরবীতে একটি প্রবাদ প্রচলিত আছে -“মান লাহুল মাওলা ফালাহু কুল' মানে যার জন্য
আল্লাহ তার জন্য সব। মুমিনদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। আল্লাহর নৈকট্য সহজে প্রাপ্তির
বস্তু নয়। এজন্য অনেক কষ্ট ও ক্ষতি স্বীকার করতে হয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন