বৃহস্পতিবার, ৯ জুলাই, ২০১৫

দেশসেবাই দেশপ্রেম কবে হবে?


দেশসেবাই দেশপ্রেম কবে হবে?

শেখ উল্লাস ॥ বর্তমান দুনিয়ায় একজন মানুষের নিজস্ব দেশ বা নাগরিকত্ব না থাকলে তার কী অবস্থা হতে পারে তা হয়তো ছিটমহলের বাসিন্দারাই বুঝতে পারেন! অপরদিকে, নিজের দেশে সুবিধামতো কাজ না পেয়ে যারা বিদেশে গিয়ে কাজ করছেন তারা ওই দেশটির উন্নয়ন তথা দেশগঠনের কাজেই অংশ নিচ্ছেন। মালয়েশিয়া বা মধ্যপ্রাচ্য বা ইউরোপ-আমেরিকার যেখানেই আজ এদেশের দক্ষ-অদক্ষ শ্রমিক বা শিক্ষিত মানুষেরা কাজ করছেন, দেশে টাকা পাঠাচ্ছেন বা ওই দেশে স্থিত হচ্ছেন, তারা শুধুই কাজ করেন, কাজের জন্যই তারা সেখানে যান, দুর্নীতি করলে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হয় তাদের। অথচ এই মানুষদেরই স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও নিকট আত্মীয়রা যারা এদেশে সরকারি বা বেসরকারি চাকুরি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন, তাদের মধ্যে এখনো ‘দেশসেবাই দেশপ্রেম’ এই মনোবৃত্তি (ইচ্ছা) জাগ্রত করা যায়নি বা হয়নি। এটা দুঃখজনক হলেও বাস্তব। তারা শুধুই চাকরি করেন, অর্থাৎ, বেতনের বিনিময়ে কাজ করেন। বাস্তবতা এই যে, দেশসেবার মহান ব্রতে নিজেদের কর্মে নিজেদের মধ্যে বেশিরভাগ অংশকেই নিয়োজিত থাকতে দেখা যায় না যদিও তারা মুসলমান বলে নিজেদেরকে জাহির করতে দ্বিধাবোধ করেন না। বরং ধর্মের আনুষ্ঠানিকতার ছত্রছায়ায় থেকে তাদের অনেকের মধ্যে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে রাতারাতি ‘বড়লোক’ হওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়েছে - হচ্ছে। সমাজের অবস্থাটাও আজ এ রকম যে, দুর্নীতি করে রাতারাতি বাড়ি-গাড়ির মালিক হওয়া যায়। এই প্রবণতাই এখন বেশির ভাগ চাকুরিজীবীর মধ্যে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। এ সমস্যা শুধু আজকের নয়, স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত কোনো সময়েই এ অবস্থার ব্যতিক্রম ছিল না। বঙ্গবন্ধু নিজেই বলতেন, ‘যেদিকে তাকাই সব খানেই চোর, .... সবাই পায় সোনার খনি, আমি পেয়েছি চোরের খনি”। নিজের এতটুকু স্বার্থের জন্য দেশের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেলেও এই চোরদের কিছু যায় আসে না। অথচ এই মনোবৃত্তির সম্পূর্ণ বিপরীত দৃষ্টিভঙ্গী ছিল সেইসব মানুষদের যারা এই দেশটির স্বাধীনতা সংগ্রামে আত্মাহুতি দিয়েছেন বা দিতে গিয়েছিলেন, দেশকে স্বাধীন করেছিলেন। চরম কষ্টার্জিত একটি স্বাধীন দেশের চাকুরিজীবী বা কর্মজীবী মানুষদের এই জাতীয় মনোবৃত্তির জন্যই বিগত বছরগুলোতে কয়েকবার দুর্নীতিতে চ্যম্পিয়ন হওয়ার দুর্ভাগ্য অর্জন করেছিল বাংলাদেশ! এর জন্য দায়ী নিশ্চয়ই এদেশের সাধারণ মানুষ নন!
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ২০-অনুচ্ছেদের (১) ধারা অনুযায়ী, কর্ম হইতেছে কর্মক্ষম প্রত্যেক নাগরিকের পক্ষে অধিকার, কর্ম ও সম্মানের বিষয়, এবং ‘প্রত্যেকের নিকট হইতে যোগ্যতানুসারে ও প্রত্যেককে কর্মানুযায়ী-’ এই নীতির ভিত্তিতে প্রত্যেকে স্বীয় কর্মের জন্য পারিশ্রমিক লাভ করিবেন। ২১-অনুচ্ছেদের (২) ধারা অনুযায়ী, সকল সময়ে জনগণের সেবা করিবার চেষ্টা করা প্রজাতন্ত্রে কর্মে নিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তির কর্তব্য।
ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ আমলে এক বাঙালি কবি গেয়ে উঠেছিলেন, ‘স্বাধীনতাহীনতায় কে বাঁচিতে চায়, কে বাঁচিতে চায়?’ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৪৪ বছর পর আজো এদেশের চাকুরিজীবী বিশেষ করে সরকারি চাকুরিজীবীরা নিজেকে দেশসেবক হিসেবে জনগণের কাছে প্রতিষ্ঠিত করতে পারলেন না সেটাই আজ বড় প্রশ্ন হিসেবে দেখা দিচ্ছে? সরকারি চাকুরি যে সোনার হরিণ! সে কথাটিও কারো অজানা নয়। একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে দেশ তো এই সরকারি চাকুরিজীবীদের কম দেয়নি। উচ্চপদে চাকুরিজীবীর সংখ্যাও তো দেশে দিন দিন বেড়েই চলেছে, দেশ স্বাধীন না হলে এইসব পদে চাকুরি করা এদেশের ক’জনের ভাগ্যে জুটতো? এসব প্রশ্ন আজো বাংলার আকাশে-বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে। কারণ, শোষণমুক্ত ও বৈষম্যহীন একটি সমাজ প্রতিষ্ঠা হবে-এইতো ছিল স্বাধীনতার জন্য আত্মোৎসর্গকারী সকল শহীদের স্বপ্ন। তাই, চাকুরিজীবী, বিশেষ করে সরকারি চাকুরিজীবীরা এক একজন প্রকৃত দেশসেবক হিসেবে জনগণের কাছে প্রতিষ্ঠিত হবেন, নিজেদের ব্যক্তিগত সম্পদ বৃদ্ধির মনোবৃত্তি থেকে বের হয়ে দেশ ও তথা রাষ্ট্রীয় সম্পদ বৃদ্ধির দিকে মনোনিবেশ করবেন - সেটাই আজ জাতির প্রত্যাশা। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন