বুধবার, ২২ জুলাই, ২০১৫

ঘৃণ্য রাজনৈতিক খেলা!


ঘৃণ্য রাজনৈতিক খেলা!

সংলাপ সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায় বাসৱবায়িত হলে জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসনামলে জারি করা সংবিধানের সকল পরিবর্তিত অংশগুলো বাতিল হয়ে যাবে এর ফলে ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আদর্শ নিয়ে যে সংবিধান রচনা করা হয়েছিল দেশ সেই সংবিধানটাকে ফিরে পাবে-এমনি একটি সম্ভাবনার দোলায় যখন জাতি আজও দোল খাচ্ছে তার মধ্যে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল হলেও সংবিধান থেকেরাষ্ট্রধর্ম ইসলামশব্দটি উঠে যায়নি এই শব্দটি যেখানে ছিল সেখানে কেউ একে স্পর্শ করছে না দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র থাকবে, বাকশাল কোনোভাবেই আর আসছে না
বলা চলে, এমন একটি পরিবেশ পরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছে যেনরাষ্ট্রধর্ম ইসলামশব্দ দুটি থাকলেই দেশের সকল সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, আর না থাকলে সবকিছু শেষ হয়ে যাবে! ধ্বংস হয়ে যাবে! পবিত্র ইসলাম ধর্ম নিয়ে এত বড় কপটতা মিথ্যাচার আর কখনো কেউ দেখেছে কি? একথা তো দিবালোকের মতো সত্য যে,  তৎকালীন সামরিক প্রশাসক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের পর তার সকল কার্যক্রমের বৈধতা দানের জন্য সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী আনেন সংশোধনীর আওতায় জিয়াউর রহমান তার দোসরদের অনৈতিক কার্যক্রম ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যা থেকে শুরু করে ১৯৭৯ সালের এপ্রিল পর্যন্ত সব বেআইনী কাজকে আইনগত বৈধতা দিয়েছিলেন এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কাজগুলো ছিল খন্দকার মোশতাক আহমদের ক্ষমতা গ্রহণ, বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমের ক্ষমতা গ্রহণ সরকার গঠন, সরকার গঠন পদ্ধতি ---- ইত্যাদি ২০০৫  সালের ২৯ আগস্ট হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ পঞ্চম সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন
সত্যানুসন্ধানী দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে বিচার করলে দেখা যায়, জিয়াউর রহমান তার সকল বিতর্কিত কর্মকান্ড অনুমোদন করতে গিয়ে সংবিধানে যে সংশোধনী আনেন তাকে তথাকথিত ধর্মের লেবাসে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য করার জন্য বিসমিল্লাহ ইসলাম শব্দ দুটি সংযোজন করেছিলেন পবিত্র ইসলামের মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার জন্য নয় অথচ কোনো কাজ বা কোনো শুভ কাজ শুরুর আগে বিসমিল্লাহ বলতে হবে এমন কোনো আদেশ-নির্দেশ সম্বলিত আয়াত পবিত্র কুরআনের কোথাও পাওয়া যায় না তবে কুরআনের ১৬ নম্বর সুরার ৯৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘অতএব, যখন কুরআন পাঠ কর তাই তোমরা (তখন) প্রস্তরাহত শয়তান হইতে আল্লাহর সহিত আশ্রয় লও (বা আশ্রয় সন্ধান কর) কুরআনের এই নির্দেশের জবাবে আমরা বলিয়া থাকি : ‘আমি আল্লাহর সহিত আশ্রয় সন্ধান করি প্রস্তরাহত শয়তান হইতে-(সূত্র-সদরউদ্দিন আহমদ চিশতি, কুরআন দর্শন প্রথম খন্ড) এই বাংলা বাক্যটিরই আরবী অনুবাদ: ‘আউযুবিল্লাহ হিমিনাশ শয়তানির রাযীম
প্রসঙ্গে সদর উদ্দিন আহমদ চিশতি আরো লিখেছেন, ‘এই দুনিয়ার জিন্দেগী জাহান্নামেরই একটি জিন্দেগী এই জীবন বহু প্রকার দুঃখ-কষ্ট-ভরপুর দৈহিক, মানসিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ইত্যাদি বহুপ্রকার কষ্ট হইতে উদ্ধার লাভের জন্য মানুষ আশ্রয় সন্ধান করিয়া থাকে কখনও ধন-সম্পদকে আশ্রয়রূপে গ্রহণ করে, আবারও কখনও বা স্বাস্থ্য ক্ষমতা, মান-মর্যাদা, আত্মীয়-স্বজন ইত্যাদি অনেক কিছুকেই অর্থাৎ বস্তুগত আশ্রয়কে বিপদ মুক্তির আশ্রয় মনে করিয়া গ্রহণ করে কিন্তু ইহাই আক্ষেপ যে, আল্লাহ ব্যতিত বস্তুর যে কোনো আশ্রয় তাহাকে এক জাহান্নাম হইতে অন্য জাহান্নামে নিক্ষেপ করিয়া থাকে এইরূপ আশ্রয় সন্ধানের ফলশ্রুতি এবং উপজাত (বাই প্রডাক্ট) হইল বস্তুজগতের বৃদ্ধি বা তথাকথিত উন্নয়ন
সকল প্রকার দুঃখভোগের একমাত্র কারণ হইল শয়তান এখন শয়তান কী? মানুষের আমিত্বই শয়তানআমি আমার’ - ইহাই শয়তানের কথা আমিত্বের আশ্রয়ে থাকা জাহান্নাম আল্লাহর আশ্রয়ে থাকা জান্নাত যে যত বেশি আমিত্ব প্রকাশ করে সে তত বেশি জাহান্নামের গভীরে বাস করে
আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করিলেই আল্লাহর আশ্রয় লাভ করা যাইবে না ইহার জন্য পূর্বশর্ত হইলআমি আমারপরিপূর্ণ সমর্পণ করা বা কুরবানী করা এইরূপ সমর্পণের নামই ইসলাম ধর্ম ইহা হইতে সরিয়া থাকিলে তাহা হয় আমার ধর্ম, আল্লাহর নয়
সমগ্র কুরআনে উলেস্নখিত জীবন দর্শনতা-আউজএর কথারই সুবিস্তার (কুরআন দর্শন)
নিজের জীবন পরিবেশ-পারিপার্শ্বিকতাকে সকল অশুভ কর্মকা- চিন্তা-চেতনা থেকে মুক্ত না করে শুধুমাত্র মুখে মুখে বিসমিল্লাহ বা ইসলাম বললে যে দেশ জাতির জন্য কল্যাণ বয়ে আনে না তা আজ সচেতন দেশবাসীর কাছে স্পষ্ট তাই বিসমিল্লাহ ইসলাম নিয়ে রাজনীতির ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র খেলা অবসান করে কুরআনিক শব্দ দুটির মূল্যবোধ সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে রাজনীতিকরা এক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে আসবেন তারই প্রতীক্ষায় দিন গুনছে দেশবাসী

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন