বৃহস্পতিবার, ৯ জুলাই, ২০১৫

উপমহাদেশে ধর্মীয় আধিপত্যবাদী নীতি ঘুরছে


উপমহাদেশে ধর্মীয়আধিপত্যবাদী নীতি ঘুরছে

সংলাপ ॥ যতদিন যাচ্ছে ততোই তথাকথিত ইসলামিক জিহাদের আদর্শ বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে বিস্তার লাভ করেছে না কমছে তা বলা খুব দুরুহ। তালিবান যেমন পাকিস্তানের সৃষ্টি, আল-কায়েদারও তেমনই পাকিস্তানে মূল ঘাঁটি। ধীরে ধীরে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীতে ও প্রশাসনে জিহাদি আদর্শ ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাকিস্তানের তালিবানিকরণ ঘটছে দ্রুত। তালিবানি শাসন ভারত সীমান্ত থেকে বেশী দূরে নয়। ভারতের বিভিন্ন সংবাদপত্রে বলা হয়েছে, লক্ষ্নৌ থেকে দিল্লির দূরত্ব যতটা (৪০৭ কিমি.), তালিবানরা ভারত সীমান্ত থেকে তার চেয়েও কাছে ঘাঁটি গেড়েছে। কিন্তু ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং হচ্ছে ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল। পাকিস্তানে তালিবানি এলাকার প্রসার ঘটেই চলেছে। আল-কায়েদা, তালিবান, লস্কর-ই-তৌয়েবা তথা জামাত-উদ-দাওয়া, জয়েশ-ই-মহম্মদ এবং পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর একটা অংশ এখন এক ঐক্যবদ্ধ শক্তি। পাকিস্তানে যে সরকারই গড়া হোক, তা ওই শক্তির নির্দেশে চলতে বাধ্য।
ওই শক্তিরই পিছনে খেলা করতে এসে দাঁড়িয়েছে চীন ও আমেরিকা। তাই চীনের সংবাদপত্রগুলো লিখেছিলঃ ‘বিদেশি শক্তিরা মুম্বইয়ে আক্রমণ চালিয়েছিল বলে ভারত সরকার প্রচার করছে নিজেদের ভিতরকার স্ব-বিরোধিতা আড়াল করার উদ্দেশ্যে।’ চীন সরকারের মুখপত্র ‘পিপলস ডেইলি’ লিখেছিলঃ ‘ভারতের শক্তিধর রাষ্ট্র হয়ে ওঠার বাসনায় বড় রকম আঘাত দিয়েছে জঙ্গিরা (এ মেজর ব্লো টু ইন্ডিয়া বিগ পাওয়ার এম্বিশন)। মুম্বইয়ে জঙ্গি আক্রমণ শেষ হওয়ার পরই চীনা সরকারের এই মন্তব্য! বলার ধরণ দেখে চিন্তা করা যায়, মুম্বইয়ের জঙ্গি আক্রমণ নিয়ে উপমহাদেশের আঞ্চলিক আধিপত্যবাদী নীতির মোড় ঘুরছে ।
চীনা সরকারের বিদেশমন্ত্রকের অধীন ‘ইনস্টিটিউট অব স্ট্রাটেজিক স্টাডিজ’-এর তরফে বলা হয়েছে, ‘ভারত বিতর্কিত কাশ্মীরে নিজেদের দখল বাড়ানোর জন্য পাকিস্তানের নিন্দামন্দ করছে’ এবং ‘যদি যুদ্ধ হয় তাহলে চীন পাকিস্তানকে সমর্থন করতে পারে। ভারত-পাক যুদ্ধ হলে চীন কী করবে? উপরোক্ত সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘চীন দক্ষিণ তিব্বত তথা অরুণাচল প্রদেশের জনগণকে পুরোপুরি মুক্ত করতে সামরিক ব্যবস্থা নেবে’। অর্থাৎ চীন অরুণাচল প্রদেশে ভারতের সাথে যুদ্ধে নামবে। এখন অবস্থার পরিবর্তন ঘটছে। চীন ও ভারত কাছাকাছি আসার চেষ্টা করছে।
ভারত সরকারকে তাই চীনের কথাও ভাবতে হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী চীন-ভারত মৈত্রীকে গভীরে নিয়ে যেতে চাচ্ছেন।
যতদূর জানা যায়, পাক-আফগান সীমান্ত জুড়ে এখন তালিবানের রাজ্য প্রসারিত হচ্ছে। কেন্দ্রশাসিত এলাকাগুলি, স্বোয়াত উপত্যকা, ওয়াজিরিস্তান ও উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ চলে গিয়েছে তালিবানের নিয়ন্ত্রণে। পেশোয়ার শহরও তাদের কার্যত দখলে। পাকিস্তান তালিবানকে দমিয়ে রাখতে ওই অঞ্চলে সৈন্য মোতায়েন করতে বাধ্য হয়েছিল। সৈন্যদের ওই অঞ্চল থেকে সরিয়ে আনা হলে তালিবানের হবে পোয়া বারো। ওই বিশাল এলাকায় তারা সরকার গড়তে উঠে পড়ে লেগেছে। তারপর সেখান থেকে আফগানিস্তানের ভিতরে শুধু হামলা চালাবে না, হামলা চালাবে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যেও জঙ্গি কার্যক্রম সম্প্রসারণ করে।
আফগানিস্তানের লড়াই এখন আমেরিকার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সে জন্য বারাক ওবামা ঘোষণা করেছেন, তিনি যুদ্ধ পছন্দ করেন না।
ভারত সরকার জানতে পেরেছে, পাকিস্তান তাদের আইএসআইকে নিয়োগ করেছে ২০২০ সালের মধ্যে ভারতকে তচনচ করে খণ্ড-বিখণ্ড করে ফেলার জন্য। গোটা উত্তর ভারতকে পরিণত করা হবে তথাকথিত ইসলামিক রিপাবলিক অব পাকিস্তানে। দক্ষিণ ভারতকে করে তুলতে হবে বিতর্কিত স্থান। পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারের ব্যাপক অঞ্চল, অসম ও উত্তর পূর্বাঞ্চলকে তথাকথিত ইসলামিক রিপাবলিকের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য জঙ্গি কার্যক্রম ত্বরান্বিত করার মাধ্যমে বাংলাদেশকে ঘাঁটি করে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার স্বপ্ন নিয়ে আইএসআই এগুচ্ছে।
চীন ও আমেরিকা কার্যত পাকিস্তান নিয়ে ব্যস্ত এবং পরোক্ষভাবে অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করছে। ভারত সহানুভূতি ছাড়া আর কিছুই কারও কাছ থেকে চাচ্ছে না এবং ভবিষ্যতে চাইবে বলে বর্তমান পরিস্থিতি বলছে না কারণ ভারত স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে এখন এগিয়ে যাচ্ছে। তাই বন্ধু হিসেবে ভারতকে প্রয়োজন। এই প্রয়োজন বাংলাদেশ সরকার ষড়যন্ত্রের কবলে পড়ে  হাতছাড়া করলে ভুল করবে মারাত্মক।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন