মাদ্রাসায় জঙ্গিঃ বাংলার গ্রামে
ধর্মের চেহারা
সংলাপ
॥ ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আজকের বাংলাদেশের গ্রাম-গঞ্জ, শহর-বন্দরের প্রতিটি
জনপদই ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর
রাজাকার আল-বদর, আল-শামস্ ও শান্তি কমিটির দুর্বৃত্তরা ধর্মের নাম ভাঙ্গিয়ে কায়েমী
স্বার্থে বিভিন্ন স্থানে এক প্রকারের রাজত্ব কায়েম করে রাখলেও সাধারণ মানুষের কাছে
ছিল তারা ঘৃণিত। তারা সদা তটস্থ থাকতো মুক্তিবাহিনীর ভয়ে। কিন্তু আজ স্বাধীনতার ৪৪
বছর পরেও এই সব রাজাকার ও গণধিকৃত মানুষ বিনা বিচারে বেঁচে আছে, হয়ত এটা তাদের কাছেই
রীতিমত বিস্ময়কর ব্যাপার।
’৭১
এবং এর আগে বাংলাদেশের মাটি, গ্রাম-গঞ্জ,শহর-বন্দরের কোনো জনপদে জঙ্গী বলতে কোনো কিছু
ছিল না। অভাব অনটন থাকলেও ধর্মীয় মূল্যবোধটা ছিল যাবতীয় অন্যায়, অবিচার, শোষণ-বঞ্চনার
বিরুদ্ধে। কোনো গ্রামে সুদখোর থাকলেও সে যতই অর্থ সম্পত্তির মালিক হোক না কেন, সুদখোরের সাথে সামাজিক সম্পর্ক তৈরি করতেও অনেকের দ্বিধা
থাকতো, রীতিমত ঘৃণার পাত্র ছিল সুদখোরেরা। আর ঘুষখোর চাকরিজীবিদেরকেও এড়িয়ে চলতো সাধারণ মানুষেরা। অথচ আজকাল সুদখোর, ঘুষখোরদের
সেই দুর্দিন আর নেই। এই সুদখোর, ঘুষখোরদের টাকাতেই তৈরি হয়েছে এবং হচ্ছে অনেক মাদ্রাসা,
মসজিদ বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্কুল-কলেজও। ধর্মব্যবসায়ী স্বাধীনতা বিরোধী এজিদপন্থী
ইসলামী দলগুলোর নেতারাই আবার সেখানে সমাজপতি সেজে বসেছেন। এই নেতারা বা তাদের দোসররাই
আবার কখনো কখনো জনপ্রতিনিধি মেম্বার, চেয়ারম্যান, এমপি-মন্ত্রীও হয়েছেন। ফলে ’৭১ এ
বাংলার যে জনপদ ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের অভয়ারণ্য সেখানে আজ দেখা যাচ্ছে মাদ্রাসার নামে
জঙ্গী উৎপাদনের আঁখড়া।
জঙ্গীর
পরিচয়, তার ছদ্মবেশ ও পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি থেকে দেশের ধর্ম-ব্যবসায়ীদের তৎপরতা
আঁচ করা যায়। শুধু টুপি-দাঁড়ি-পাঞ্জাবী এবং মুখে আরবী কয়েকটি শব্দ উচ্চারিত হতে দেখলেই
তাদেরকে আদর-যত্ন করে দান-খয়রাত করার সংস্কৃতি থেকে মুক্ত হতে না পারলে এই জঙ্গীদের
খপ্পড় থেকে রক্ষা পাবে না কেউই। আর আমাদের
দেশের বাণিজ্যিক মিডিয়াগুলোতে এই জঙ্গীদের ছবি যেভাবে ছাপা শুরু হয়েছে তাতে সাধারণ
জনগণ আরো বেশি বিভ্রান্ত হচ্ছে। এ বিষয়ে মিডিয়ার পাঠক-শ্রোতা-দর্শকদেরও ভেবে দেখা দরকার।
আরো
ভয়াবহ হচ্ছে বাংলার গ্রামগুলোতে এখন আর কোনো কথিত প্রতিষ্ঠিত ও শিক্ষিত ব্যক্তিকে বাস
করতে দেখা যায় না, অথচ এই ব্যক্তিদের অধিকাংশেরই জন্ম ও প্রাথমিক বেড়ে উঠা এই গ্রামগঞ্জের
অলিগলিতে। আজ তারাই ফ্ল্যাটে বা অ্যাপার্টমেন্টে উঠে গিয়ে গ্রাম-গঞ্জকে অবজ্ঞার চোখে
দেখে, যদিও জনপ্রতিনিধি হিসেবে দেশী-বিদেশী সকল সুযোগ সুবিধা নেয়ার জন্য গ্রাম-গঞ্জের
ভোটারদের দারস্থ হতে তাদের বিন্দু পরিমাণ দ্বিধাও হয় না। এসব পরিস্থিতির আড়ালে গ্রামে
আসৱানা গড়ে তুলছে ধর্মের নামে সৌদি-ওহাবী-পাকিসৱানি তথা ব্রিটিশ-আমেরিকার পৃষ্ঠপোষকতায়
এজিদী ইসলামের ধারক-বাহকরা। ধর্মের নামে অশান্তি, অনাচার, ধর্মান্ধতা, বর্বরতার উর্বর
স্থান তৈরি করে ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড় গ্রামগুলোতে ধর্মভীরুদের মাঝে আনছে অশান্তি
আর দারিদ্র্য। ফায়দা লুটছে ধর্মব্যবসায়ীরা। হাজার হাজার স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা-মক্তবে
লাখো লাখো নতুন প্রজন্মকে জানতে দেয়া হয় না নিজের দেশ, সমাজ ও মানবধর্মের আসল পরিচয়।
এতকিছুর পরেও ধর্মব্যবসায়ীরা বাংলার মানুষের ভালবাসা পাচ্ছে না, বাংলার মাটিকে মরুভূমি
বানাতে আজো তারা সফল হয়ে উঠতে পারেনি। জনতার বিজয়ের প্রতিফলন ও পুরষ্কার গ্রাম-বাংলার
প্রতিটি ঘরে পৌঁছে দিতে সরকার তার ভূমিকা পালন করছে কিন্তু কতটুকু করছে তা খতিয়ে দেখার
সময় এসেছে। কেননা বিশ্বাস ভঙ্গকারীদেরকে কেউ ক্ষমা করে না। তাই দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া
দরকার গ্রাম-বাংলার মানুষকে ভালবেসে ধর্মের সত্য ও আসল কথাটুকু জানিয়ে দেয়া। গ্রাম
বাংলা তথা দেশের সার্বিক অগ্রগতির স্বার্থে বর্তমান সরকারের জন্য একাজটুকু আজকের দিনে
জরুরি দায়িত্ব ও কর্তব্য।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন