বৃহস্পতিবার, ৩০ জুলাই, ২০১৫

সত্য উপলব্ধি জাগরনের এই তো সময়

সত্য উপলব্ধি জাগরনের এই তো সময়

সাগর সগীর ॥ জুলাই ২০১৩ পর্যন্ত বিশ্বের মোট জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৭০৯ কোটি ৫২ লাখ। উইকিপিডিয়া প্রদত্ত তথ্যমতে এই জনসংখ্যার ১১.৬৬ শতাংশই আল্লাহ বিশ্বাস করেনা বা নাস্তিক, অথবা কোন ধর্মেই বিশ্বাস করেনা। অর্থাৎ পৃথিবীর ৮২ কোটি ৮০ লাখ মানুষই নাস্তিক অথবা কোনরূপ ধর্ম বিশ্বাসের বাইরে অবস্থান করছে। তথ্যমতে, এদের মধ্যে প্রায় ১৪ কোটি ২৬ লাখ নাস্তিক। আর প্রায় ৬৮ কোটি ৫৪ লাখ যারা কোন ধরনের ধর্মে বিশ্বাস করেনা।
পরিসংখ্যান মতে, জুলাই ২০১৩ পর্যন্ত বিশ্বের মোট জনসংখ্যার মাত্র ২৩.২ শতাংশ ইসলাম ধর্মাবলম্বী অর্থাৎ মুসলমান, মোট জনসংখ্যা হিসাবে যা দাঁড়ায় ১৬৪ কোটি ৬১ লাখ। বিশ্বের সর্বাধিক সংখ্যক অর্থাৎ সংখ্যাগুরু ধর্মাবলম্বী হচ্ছে খ্রিষ্টান, শতকরা হিসেবে যা ৩১.২ শতাংশ। মোট হিসেবে ২২৩ কোটি ৫০ লক্ষ প্রায়। অপর দুইটি প্রধান ধর্ম হিন্দু ও বৌদ্ধের শতকরা হার যথাক্রমে ১৩.৮ শতাংশ এবং ৬.৭৭ শতাংশ। মোট হিসেবে হিন্দু জনসংখ্যা ৯৭ কোটি ৯১ লাখ এবং বৌদ্ধ জনসংখ্যা ৪৮ কোটি ৩ লাখ। উল্লেখিত পরিসংখানে দেখা যায় ইসলাম ছাড়া বিশ্ব জনসংখ্যার ৫২.০৭ শতাংশই খ্রিষ্টান, হিন্দু এবং বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী।
আঁতকে উঠার মতন পরিসংখানটি হচ্ছে ধর্মবিশ্বাসহীন আর স্রষ্টা বিশ্বাসহীন মানুষদের সংখ্যাটি। ইসলামসহ সকল ধর্মমতে আল্লাহ্‌ তথা স্রষ্টায় বিশ্বাস আর নিজ নিজ ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী সেই বিশ্বাস অনুসারে ধর্মীয় অনুশাসনগুলো মেনে চলা বাধ্যতামূলক। আর তার বাইরে থাকা অর্থাৎ স্রষ্টা ও ধর্ম বিশ্বাসহীনতায় পৃথিবীর প্রায় ৮৩ কোটি মানুষ ডুবে আছে! অথচ আল্লাহ্‌, ঈশ্বরের বা ভগবানের দৃশ্যমান কোন গজব তুলনামূলক অর্থে তাদের উপর নেমে আসতে দেখা যায় না; নেমে আসেনা সচরাচর সমষ্টিগতভাবে।
আরো চিন্তিত হওয়ার মত তথ্য হচ্ছে এই ৮৩ কোটি মানুষ আফ্রিকার দুর্ভিক্ষ পীড়িত কোন দেশে কিংবা ভারত-বাংলাদেশ-পাকিস্তানের মত কোন দেশে দিনে এনে দিনে খাওয়া মানুষ নয়। এই মানুষগুলো বসবাস করছে জাপান, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, নরওয়ে, চায়না, নেদারল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, জার্মানি, হাঙ্গেরি, বেলজিয়াম, নিউজিল্যান্ড, ইউকে, দক্ষিণ কোরিয়া ও বুলগেরিয়ার মত দেশে! অর্থাৎ উন্নত, সমৃদ্ধ, অগ্রসর জীবন-যাপনকারী দেশে! তার মানে বিশ্ব জনসংখ্যার ৮৮.৩৩ শতাংশ মানুষের কঠিন বিশ্বাস অনুযায়ী তাদের স্রষ্টাকে, তাদের স্রষ্টা প্রদত্ত ধর্মবিশ্বাসকে অস্বীকারকারী ১১.৬৭ শতাংশ মানুষের বিরুদ্ধে অস্বীকার করার অপরাধে! অন্তত ইহকালে? কোনই ব্যবস্থা নিচ্ছেন না তাদের স্রষ্টা। এমনকি ইসলামই একমাত্র সত্য ধর্ম বলে বিশ্বাসী ২৩.২ শতাংশ মুসলমান ধর্মাবলম্বীর একমাত্র উপাস্য আল্লাহ্‌ এবং একমাত্র ধর্ম ইসলাম - এর বাইরে থাকা, একে সরাসরি অস্বীকার করে ভিন্ন ধর্ম বিশ্বাসে বিশ্বাসী হয়ে থাকা ৬৫.১৩ শতাংশ মানুষ অর্থাৎ ৪৬২ কোটি ১১ লাখ ভিন্নধর্মাবলম্বীর বিরুদ্ধেও সামষ্টিক কোন কঠোর ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়না আল্লাহ্‌কে! অথচ গোটা পৃথিবী জুড়ে বিরুদ্ধমত প্রকাশ করতে দেখলেই হিংস্রতা হাতিয়ার করে তেড়ে আসতে দেখা যায় ইসলাম ধর্মাবলম্বী দাবিদার কিছু মুসলমানদের!

এই বাংলাদেশেও বিরুদ্ধমত তো দূরের কথা নূন্যতম ভিন্নমতকেও মানতে, সহ্য করতে প্রস'ত নয় ইসলামের বরকন্দাজ বলে দাবিদার ধর্মবেত্তারা। ঝাঁপিয়ে পড়ে আদিম হিংস্রতায়। আল্লাহ্‌র স্বভাব বিরুদ্ধ, আল্লাহ্‌র ধর্ম বিরুদ্ধ এইসব ধর্মীয় মতলববাজ ধর্মব্যবসায়ীদের প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে থাকে, হয়ে থাকতে দেখা যায় প্রায়শ:ই সাধারণ ধর্মভীরু মুসলমানদের। জাতীয় কবি বলে অভিহিত সাধক নজরুল এই ঘোর বিভ্রান্তির বেড়াজাল ছিন্ন করার সাহসী প্রচেষ্টায় তাঁর কবিতায় লিখেছিলেন-“আশিটা বছর কেটে গেল, আমি ডাকিনি তোমায় কভু / আমার ক্ষুধার অন্ন তা বলে বন্ধ করনি প্রভু”। একুশ শতকের মহা স্রোতধারায় ভাসছে পৃথিবী, ভাসছি আমরা। সত্য উপলব্ধিবোধে জেগে উঠার এই তো সময়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন