মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর, ২০১৩

হরতালে বিপন্ন মানবতা!



হরতালে বিপন্ন মানবতা!

আরিফিন হক ॥ বাংলাদেশে হরতাল এখন একটি ধ্বংসাত্মক, আতঙ্কের শব্দে পরিণত হয়েছে। এ দেশের শতকরা ৯৫ ভাগ লোকই হরতাল পছন্দ করে না। তা সত্ত্বেও এদেশের জনগণকে বার বার হরতালের কালো থাবার কবলে পড়তে হচ্ছে। গত হরতালে বিএনপি-জামাতের সহিংস পিকেটিংয়ে ১৯ জন প্রাণ হারিয়েছে। সামপ্রতিককালে হরতালের চরিত্রই পাল্টে গেছে প্রতিহিংসাপরায়ণ হিংস্র রাজনীতির ঘৃণ্য তৎপরতায়। গত ২৭ থেকে ২৯ অক্টোবর ৬০ ঘণ্টার হরতালের আগের দিন অর্থাৎ ২৬ অক্টোবর সন্ধ্যায় আগামী নির্বাচন সম্পর্কে আলোচনা করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টেলিফোনে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়াকে ২৮ অক্টোবর গণভবনে আসার আমন্ত্রণ জানানোসহ দেশ, জাতি ও জনগণের স্বার্থে হরতাল প্রত্যাহার করার আহ্বান জানান কিন্তু বিরোধী দলীয় নেতা প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়ে দেন - ‘হরতাল প্রত্যাহারের সুযোগ নেই। বিরোধীদলীয় নেতার মনোভাব এমন ছিল যে - হরতাল হতেই হবে। হরতাল হলোও বটে কিন্তু হরতালে ঝড়ে গেলো ১৯টি তাজা প্রাণ। ৪ নভেম্বর থেকে দ্বিতীয় দফায় ৬০ ঘন্টার হরতাল চলছে। এ পর্যন্ত পাওয়া খবরে হরতালের প্রথম দিনে সহিংসতায় নিহত হয়েছে অন্তত ২ জন। ব্যাপকভাবে নাশকতা ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। নানা স্থানে বোমাবাজিসহ ট্রেনে হামলা হয়েছে। এর দায় কে নেবে? যারা প্রাণ হারাল তাদের কী অপরাধ? তারা কেন রাজনৈতিক সহিংসতার বলি হলো? বাংলাদেশ একটি স্বাধীন-সার্বভৌম গণতান্ত্রিক দেশ অথচ মানুষের জীবন কত তুচ্ছ? কুকুর-বেড়ালের জীবনের চেয়েও অধম। পশু-পাখির মতো মারা যাচ্ছে মানুষ। বাংলাদেশে এখন মানুষের মূল্য সবচেয়ে কম। কার কখন কোথায় প্রাণ যাবে বলা মুশকিল। এর জন্য কারো কোনো দায় বা জবাবদিহিতাও নেই। এটা কি গণতান্ত্রিক দেশের চিত্র? বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে হরতালের উপযোগিতা ও কার্যকারিতা নেই বললেই চলে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে জনস্বার্থ সংরক্ষণ বা গণদাবির সঙ্গে হরতালের কোনো সম্পর্ক নেই। এমতাবস্থায় হরতালের  চেয়ে বড় মানবাধিকার লঙ্ঘন আর কোনোটা নয়। হরতাল এখন একটি জনআতঙ্কের নাম, নাশকতার নাম। হরতাল ডাকলেই দেশের জনগণ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে। হয়ে পড়ে নিরাপত্তাহীন। হরতাল চলাকালে জননিরাপত্তা পদে পদে বিঘ্নিত হয়, বিপন্ন হয় মানবতা। দীর্ঘ দিন থেকে আমরা  দেখে আসছি হরতাল শুরুর আগের দিন থেকেই চলে ব্যাপক নাশকতা ও ভাংচুর। হরতালে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের অর্থনীতিও। শত শত কোটি টাকার জাতীয় সম্পদ বিনষ্ট হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে লাখ লাখ শির্ক্ষার্থী। ৪ নভেম্বর থেকে শুরু হবার কথা ছিল জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা, যাতে ২০ লাখ শিক্ষার্থী অংশ নেবার কথা রয়েছে। এ ছাড়া চলছে ২০১৪ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের নির্বাচনী পরীক্ষা। অথচ এরই মধ্যে টানা তিন দিনের হরতালের কবলে পড়ল দেশ! হরতাল আহ্বানকারীরা কি পরীক্ষার খবর রাখে না? তাদের সন্তানরা কি স্কুল কলেজে লেখাপড়া করে না? পরীক্ষা চলাকালে হরতাল দেয়া কোনো রাজনৈতিক দলের সুবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত হতে পারে না। কারণ জাতীয় স্বার্থের পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎও  দেখতে হবে। সুতরাং রাজনৈতিক আবেগের বশবর্তী হয়ে বা খামখেয়ালিবশত যখন তখন হরতাল ডাকাতে রাজনৈতিক দূরদর্শিতার কোন পরিচয় মেলে না। এটা গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির মধ্যেও পড়ে না। হরতালে আজ মানবতা বিপন্ন। হরতালে সরকার বিপদে পড়ে না। বিপদে পড়ে দেশের সাধারণ মানুষ। হরতালে রক্ত ঝড়ে, মানুষ মরে। রক্তের এই হোলিখেলা বন্ধ করতেই হবে। আমরা আশা করি, বিরোধী জোটের শুভবুদ্ধির উদয় হবে এবং ভবিষ্যতে তারা প্রতিবাদ ও আন্দোলনের ক্ষেত্রে হরতালের বিকল্প খুঁজে বের করবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন