মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৩

রাজনীতিকদের জনগণের ভাষা বুঝতে হবে

রাজনীতিকদের জনগণের ভাষা বুঝতে হবে

সংলাপ ॥ জনগণই যে সকল ক্ষমতার উৎস একথা সকল দলের নেতার মুখে আখছার উচ্চারিত হলেও তারা যে তা বিশ্বাস করে না সেটা এখন তাদের কর্মকান্ডে প্রমাণিত। তা না হলে ‘ক্ষমতাই প্রধান বিষয় এই নিয়ম-নীতির দাস হয়ে যাবেন কেন এদেশের রাজনীতিকরা? চাওয়া-পাওয়ার লোভ-লালসা এখন তাদের এভাবে আচ্ছন্ন করবেইবা কেন? সাধারণ মানুষের কাছে রাজনীতিকরা এখন মিথ্যাচার করছেন। কেউ গণতন্ত্রের জন্যে আবার কেউ সংবিধানের জন্যে মাতম করছেন।  লেজুড় বৃত্তি করছে হঠকারী নির্বোধ মিথ্যাচারী বুদ্ধিজীবির দল।
বর্তমানের চলমান রাজনৈতিক কর্মকান্ড বিশেষ করে গণজাগরণ মঞ্চ এ দেশের মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অনেক দূর পর্যন্ত উদ্বুদ্ধ করতে পেরেছে। যুবসমাজ বিগত পঁচিশ বছরে এ দেশের সব বড় রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মকা- দেখেছেন। কাজেই কারা ভালো কারা মন্দ বা কারা পল্লীর মানুষের বিপদে আপদে প্রকৃত বন্ধু কিংবা দরদী জনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন এদেশের মানুষ তার চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে এখন যথার্থই পারঙ্গম। রাজনৈতিক দলগুলোর মাস্তান বা পেশী শক্তির রক্তচক্ষু আজ আর তাদের জন্যে ভয়ের কোন কারণ হচ্ছে  না।
বিভিন্ন বৈদ্যুতিক গণমাধ্যমে  স্বঘোষিত বুদ্ধিজীবীরা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে হানাহানি, মারামারি, কাটাকাটিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে টক্‌-শো তে যাচ্ছেন এবং নিজেদের স্বার্থান্বেষী মতামত প্রকাশ করছেন। তাদেরকে জাতি চিনতে পারছে তাদের কথায়। তাদের গণতন্ত্রের ছবক দেয়ার প্রবণতায় সাধারণ মানুষ এখন বিভ্রান্ত। আবার কোন কোন রাজনৈতিক নেতা-নেত্রী গণতন্ত্রের চারণ ও লালনক্ষেত্রের প্রতি কটাক্ষ করতেও পিছপা হচ্ছেন না।  গণতন্ত্রের হত্যাকারী বলে লোকচক্ষে চিহ্নিতরা যখন গণতন্ত্রের জন্যে জান-কোরবান করার জন্য ময়দান প্রকম্পিত করে তোলে তখনি প্রশ্ন আসে তাদের সম্পর্কে এবং তাদের নিষ্ঠা সম্পর্কে এমনকি তাদের পটভূমি সম্পর্কে। বিশ্বের পরিসর এক থাকলেও কারিগরি উন্নতির দ্রুত বিকাশের কারণেই মানুষের জানার পরিধির যেমন বিস্তৃতি ঘটছে তেমনি প্রসারিত হচ্ছে তাদের বিশ্লেষণী ক্ষমতারও। তদুপরি মৌলিক ও মানবাধিকারের মূলমন্ত্রও বাঙালি জাতিকে করে তুলছে নিত্য-নিয়ত আরও বেশি সচেতন। দৃঢ় হচ্ছে তাদের প্রত্যয়। সেজন্যে মিথ্যা কথার তুবড়ি দিয়ে আর জাতিকে ভোলানো সম্ভব নয়।
গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি এদেশে কখনই গড়ে উঠেনি। গণতন্ত্র চেতনায় নেই বলেই গণতন্ত্র মনষ্কতারও অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে।  গণতন্ত্রের লালনক্ষেত্র ইংল্যান্ডে দীর্ঘদিন থেকে ডাক্তারী বা ব্যারিষ্টারী বা বিভিন্ন ধরনের উচ্চশিক্ষা শেষে দেশে ফিরে রাজনীতিতে জড়িত হবার পর বহু ব্যক্তিকে গণতন্ত্র বিরোধী বক্তব্য রাখতে, কিংবা গণতন্ত্র বিরোধী রাজনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িত হতে দেখে মানুষ শুধু বিস্মিতই হয় না বরং মানসিক দিক থেকে কষ্টও পায় গণতন্ত্রের সূতিকাগার থেকে শিক্ষিত হয়ে প্রত্যাগত এসব ব্যক্তিবর্গের কাছ থেকে গণতন্ত্র সম্পর্কিত সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা কোনদিনই পূরণ হয়নি। অবশ্য হাতেগোনা দু-চারজন যে ব্যতিক্রমী ব্যক্তিত্ব নেই তা নয়।
কিন্তু তাদের অবস্থা হংস দলে বক যথা। সেজন্যে এ প্রজন্মের রাজনীতিকদের গণতন্ত্র মনষ্ক করে তুলতে অগ্রজ রাজনীতিকদের গণতন্ত্রের ভাষায় কথা বলা যেমন প্রয়োজন তেমনি রাজনৈতিক কর্মকান্ডে গণতন্ত্রের স্বাক্ষর রাখাও জরুরী। গণতন্ত্রের নামাবলী গায়ে চাপিয়ে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে অগণতান্ত্রিক কার্যকলাপ চালিয়ে যাওয়ার দিন  শেষ হয়ে যাচ্ছে, তা রাজনীতিকদের উপলব্ধি করার সময় এখন।
বাংলাদেশের মানুষ হরতাল, ভাংচুর বা সন্ত্রাসী কর্মকা- পছন্দ করে না, পছন্দ করে সভা-সমাবেশ, গণসংযোগ এবং তাতেই চাঙ্গা বোধ করে। যে দলই হোক না কেন তারা যদি বেশি বেশি করে সভা-সমাবেশ, গণসংযোগের মত কর্মসূচি দেয়, দলগুলো যদি হরতাল বা ভাংচুরের মত কর্মসূচি পরিহার করে তাহলে জনগণ তাতে সাড়া দেয়। কথায় কথায় হরতাল ডাকা আর ভাংচুর করা কোন 'রাজনীতি' নয়। ওটাকে 'সন্ত্রাস বা জবরদস্তি' বলাই শ্রেয়।
রাজনীতিতে যে কোন সময়েই চমক আবির্ভূত হতে পারে। সেদিক থেকে আমাদের আশাবাদ এখনও ফুরিয়ে যায়নি। জনগণ এখনও আশা করে উভয় দলের মধ্যে সম্মানজনক সমাঝোতা হবে এবং দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দেশের মানুষ নির্বাচনের জন্য মুখিয়ে আছে। হরতালের বদলে নির্বাচনের মাঠে থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতেই সাধারণ মানুষের আগ্রহ। জনগণ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের জনসভায় ব্যাপক অংশগ্রহণ  করে নেতৃবৃন্দকে এই ম্যাসেজটি খুব স্পষ্টভাবে দিয়েছেন।
সাধারণ মানুষের মতামতকে অবজ্ঞা করে, নিজেদের অগণতান্ত্রিক মনোভাব দেশের উপরে চাপিয়ে দিলে ফলাফল ভাল হবে না। এই চরম অনিশ্চয়তা থেকে জনগণকে মুক্তি দিতে হবে। নতুন ধারার রাজনীতি শুরু করতে হবে। জনগণের ভাষা বুঝতে হবে।
জনগণের মনে স্বস্তি নেই। মানুষ দুইদলের টানাপোড়ন এবং একগুয়েমী রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অস্থির বোধ করছে। প্রতিশোধ বা প্রতিহিংসার রাজনীতির শিকার হতে হতে সাধারণ মানুষ এখন ত্যক্ত-বিরক্ত, অসহায়। সাধারণ মানুষ সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ঠিক হবে কারা দেশে রাজনীতি করবে আর কারা করতে পারবে না। এটা গায়ের জোরের বিষয় নয়। নীতি, আদর্শ ও গণতন্ত্রের বিষয়। জনগণের উপর আস্থা রাখার বিষয়।
এটা আমাদের দুর্ভাগ্য যে, দেশের মানুষ যখন শান্তি, সমাঝোতা ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে রাজনীতিকদের দেখতে চাচ্ছে, তখন বিরোধীদল ভোট চাওয়ার পরিবর্তে জনসভায় দাঁড়িয়ে নির্বাচন রুখে দেয়ার হুমকি দিচ্ছে। আর ক্ষমতাসীন দলকেও বুঝতে হবে তারা যা খুশি তাই করবেন আর জনগণ তা সমর্থন করবে - এটা হবে না।
সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে দেশকে পরিচালিত করতে হবে। নির্বাচন বানচাল করে অসাংবিধানিক পন্থায় ক্ষমতা দখলের ষড়যন্ত্র রুখতে হবে। এজন্য সরকারকে সতর্কতার সাথে পা ফেলতে হবে। সকলের কাছে একটি আস্থার পরিবেশ সৃষ্টির দায়িত্ব সরকারের। সরকার কেবল দলের জন্য নয়, দেশের জন্য কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সুতরাং দেশের মঙ্গল হয়, দেশের জনগণ স্বস্তি পায় এমন পদক্ষেপই জনগণ আশা করে। প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতি জনগণের কাম্য নয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন