মঙ্গলবার, ১৮ জুন, ২০১৩

বাঙালির দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ চলছে-চলবে


বাঙালির দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ চলছে-চলবে

সংলাপ ডেস্ক ॥ বাংলাদেশে সার্বিক অঙ্গনে সন্ত্রাসী ঘটনাগুলোকে বিশ্লেষণ করে সমাজবিজ্ঞানীদের মধ্যে কেউ কেউ মনে করছেন এবং বলেও থাকেন, বাঙালি জাতি জাতিসত্তার লক্ষ্য থেকে সম্পূর্ণ বিচ্যূত, তথাকথিত ধর্মীয় ও পরনির্ভর হয়ে উঠছে। এটা কি বিশ্বাসযোগ্য? দৃঢ়তার সঙ্গে বলা যায় এই ভূখন্ড পুরোপুরি স্বাধীন, সার্বভৌম ও গণপ্রজাতন্ত্রী এবং বাঙালি জাতিসত্তায় উন্নত শির নিয়ে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ এবং চলবেও।
রাষ্ট্রধর্ম ‘ইসলাম’ হলেও বাংলাদেশ তথাকথিত ধর্মরাষ্ট্রের পথে এখনও পা বাড়ায়নি। বিচার ব্যবস্থা, প্রশাসনিক কাঠামোর দূরাবস্থা ও রাজনৈতিক আশা-আকাঙ্খার ভিতর-বাইরের নানা চাপের মধ্যে থেকেও দেশবাসী শান্তি (ইসলাম)-কে আঁকড়ে ধরে আছে এবং সুন্দরকে ছেড়ে দেয়নি। যতদিন বাংলা ভাষা বেঁচে থাকবে, অটুট থাকবে একুশের ভাবাদর্শ, যতদিন উৎসাহ যোগাবে মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণা, ততদিনই দেশবাসী ধর্মীয় উগ্রতা ও ধর্মান্ধতার কুৎসিতের বিরুদ্ধে লড়তে থাকবে। লড়াই ক্রমশ বাড়ছে এবং প্রবলও হচ্ছে। বাঙালিরা লড়ছে বলেই নিজেদের তৈরি করা স্বার্থের ইসলাম কায়েম করার দাবিদারদের বর্বরোচিত হামলায় বাংলাদেশ বারবার আক্রান্ত হচ্ছে। বাংলাদেশের ধর্মভীরু মানুষই যারা সত্যিকার শান্তি (ইসলাম) প্রিয় তারাই এর বিরুদ্ধে লড়ছে। এ লড়াই সংশয়হীন। লক্ষ্য হচ্ছে জাতিসত্তার পূর্ণাঙ্গ বিকাশ এবং স্বনির্ভরতার চূড়ান্ত প্রচেষ্টা। এই মহৎ ও মানবিক উদ্দেশ্য নস্যাৎ করবে বলেই একুশে ফেব্রুয়ারীর, ষাটের দশকের গণআন্দোলনের এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের পরাজিত অমানবিক তথাকথিত রাজনৈতিক ইসলামের নামে মিথ্যাচারের শক্তি জোট একই দিনে ২০ মিনিটের মধ্যে এ দেশের ৬৪টি জেলার ৬৩টিতে প্রায় ৫১০টি ষড়যন্ত্রমূলক বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পেশী প্রদর্শন করেছে। তারা বলতে চেয়েছে তারা জাগ্রত, সম্মিলিত, শক্তিময় এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার একচ্ছত্র বিরুদ্ধশক্তি। তাদের এ হামলা ও আত্মপ্রকাশের চেষ্টা কেবল বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে নয়, বাঙালি জাতিসত্তা এবং উপমহাদেশের লোকায়ত ভাবাদর্শেরও বিরুদ্ধে।
উগ্র, ধর্মান্ধ ও কুৎসিত সন্ত্রাসীরা ‘ধর্মযোদ্ধার দল’ বলে নিজেদের দাবি করেছে এবং বারবার প্রকাশ করতে চাচ্ছে নিজেদের শক্তিকে। এ গোষ্ঠী এখন বাঙালি জাতির মুখোমুখি অর্থাৎ সামনে, কিন্তু আড়ালে আছে আরো অনেক বড় বড় মাথা আর দেশী-বিদেশী সংগঠন। যেমন, আমেরিকার পোষ্যপুত্ররা এবং তালেবানদের মতো আরো সুগঠিত শক্তি, এদেরকে সরাসরি সাহস ও সশস্ত্র কৌশল যোগাচ্ছে বলে ইসলামি চিন্তাবিদগণ চিন্তিত।
ওই গোষ্ঠী সুপরিকল্পিত এবং তাত্ত্বিক দিক থেকে অত্যন্ত সুগঠিত এবং আল-কায়দার ভাবাদর্শে চালিত। স্মরণ করা যেতে পারে মিশরের এক সময় হাসান আল বান্নার ভাবশিষ্য সৈয়দ কুতুবের ইখওয়ানুল মুসলিমিন (মুসলিম ভ্রাতৃসংঘ) এই আদর্শই প্রচার করতো। তিরিশ ও চল্লিশের দশকে ওরাই ভারতবর্ষের স্বাধীনতা যুদ্ধ ও গণতন্ত্রের আকাঙ্খাকে ওই আদর্শের ভিত্তিতেই কুফরি ও আল্লাহ্‌ বিরোধী বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। তারও লক্ষ্য ছিল হুকুমত-ই-এলাহীর (আল্লাহ্‌র শাসন ব্যবস্থা) পূর্ণাঙ্গ প্রতিষ্ঠা।
সশস্ত্র বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলো তারা। জামাল আব্দুল নাসেরের মিশর কিংবা এই উপমহাদেশ সৈয়দ কুতুবের ইখওয়ানুল মুসলিমিন অথবা মৌদুদির জামাতকে আমল দেয়নি। কিন্তু তাদের ভাবাদর্শের মৃত্যুও ঘটেনি। আমেরিকার মদদে আফগানিস্তান সহ উপমহাদেশে তালেবানদের বিভিন্ন নামে সংহত করে ওহাবী ভাব ও আদর্শকে বিশ্বময় প্রতিষ্ঠিত করে তুলতে এখনও সক্রিয়। বৃহৎ শক্তির মদদে তাদের সশস্ত্র কৌশল আজ বিশ্বের সর্বত্র বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতির অন্যতম সংকট। তথাকথিত হুকুমত-ই-ইলাহী প্রতিষ্ঠার অছিলায় বাংলাদেশে তারা বহু বাংলা-আরবী-ফার্সি নামে সংগঠন গড়ে নিজেদের মধ্যে সংযোগ রক্ষা করে চলছে। এটা সন্দেহ নয়, এটা বাংলার আকাশে-বাতাসে-মাটিতে যে ঘ্রাণ পাওয়া যাচ্ছে তার পরিপ্রেক্ষিতে ধর্মভীরু শান্তিপ্রিয়
বাঙালিদের সংশয়। এই সংশয়ের কারণ সশস্ত্র বিপ্লবের হুমকি ও সন্ত্রাস এবং আফগানিস্তান হতে তাদের ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের বাংলাদেশে প্রবেশ ও অস্ত্রশিক্ষা এবং প্রকাশ্য স্লোগান।  সংশয়ের প্রধান ভিত্তি হচ্ছে,  ধর্মভীরু মানুষকে সহজেই বেহেস্ত ও দোযখের কথা বলে বলে এক ভাবাবেগ তৈরি করে নিজেদের ভাবাবেগকে, আল-কায়দার কৌশল থেকে দারিদ্র্যের সুযোগ
নিয়ে নিজেদের কৌশলকে, তালেবানদের সন্ত্রাস থেকে নিজেদের আগ্রাসী সন্ত্রাসকে সমস্ত  তথাকথিত ইসলাম ধর্মের নামে সংগঠনগুলো কখনো আলাদা করেনি এবং আলাদা করে দেখতে শেখেনি ধর্মান্ধতার কারণে। এসব কারণেই ইসলামি চিন্তাবিদরা শংকিত। এরা উপমহাদেশে যে কোনো জাতিসত্তার, সংস্কৃতি ও মানবতার শত্রু, যে রকম এসবের জন্য দুশমন আমেরিকা ও সৌদি আরব ঠিক তেমনি বর্বরতার ওজনে বাঙালির শান্তিপ্রিয় স্বচ্ছ জীবন, স্বপ্ন, ঐক্য ও ঐতিহ্যের জঘন্যতম শত্রুর নাম স্বাধীনতা যুদ্ধাপরাধী গোষ্ঠী। বাংলাদেশে তাদের ক্ষমতাসীন হওয়ার জন্য যে কোনো কার্যক্রম চিহ্নিত হয়েছে বাঙালি জাতিসত্তার উপর হামলা বলে। তাদের যে কোনো হুমকি সমগ্র দেশের বিরুদ্ধে হুমকি, তাদের যে কোনো বর্বরতা ঘায়েল করতে পারে বাঙালির চোখকে, কানকে, স্বপ্ন ও আকাঙ্খাকে কিন্তু গোটা জাতিসত্তাকে নয়। বাংলাদেশ যেমন অসৎ রাজনৈতিক জরাগ্রস্ত তেমনি পৃথিবীর সব দেশে যেখানে বাঙালি আছে সবাই মর্মাহত। বাংলাদেশে আতঙ্ক বাড়ছে আর বিশ্বজুড়ে বাঙালির রক্ষক্ষরণ হচ্ছে হৃদয়ে, ভাবাবেগে এবং গভীর উদ্বেগে। তাই বিশ্বব্যাপী বাঙালি আজ চুপ থাকতে পারে না, চুপ থাকা উচিতও নয়। উদ্বেগ ও ভাবাবেগকে ভাষায়, প্রতিবাদে, মিছিলে, সম্মিলিত প্রতিজ্ঞায় প্রতিরোধ গড়ে তোলা দরকার। দরকার প্রস্তুতি ও এর বিরুদ্ধে লড়াই করার মানসিকতা। শান্তি ও স্থিতিশীল বাংলাদেশ বাঙালিদের একমাত্র স্বপ্ন ও আকাঙ্খা। এটা অনস্বীকার্য বাংলাদেশে মানুষের মধ্যে ৯৫% মুসলমান। তাদের মধ্যে ৯০%-ই ধর্মভীরু ও শান্তিপ্রিয়। দুর্ভাগ্য ৫% উগ্রধর্মান্ধরা মধ্যপ্রাচ্যের এক হাজার বছরের সংস্কৃতিকে বাঙালির চার হাজার বছরের সভ্যতার মধ্যে প্রতিষ্ঠিত করতে মত্ত কিন্তু ইসলামি মূল্যবোধগুলো যে বাঙালির মন ও মননে, কথা ও কথকতায়, চিরায়ত ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারে চার হাজার বছরের বাঙালির জীবনপ্রবাহে অবিচ্ছেদ্য ও অভিন্ন রয়েছে তা জেনেও তারা না জানার ভান করছে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের মাটির তলার সম্পদের লোভে আধিপত্যবাদী শক্তিরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে ৫% ধর্মান্ধদের মধ্যে একটি বিরাট অংশকে মদদ দিয়ে ক্ষমতালিপ্সূ পদলেহী সেবাদাস করে ধর্মের নামে বিভিন্ন প্রকারে সার্বিক অঙ্গনে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বিশেষ করে প্রশাসনের অভ্যন্তরে, যা সমগ্র জাতিসত্তার জমিন ও দেহের উপর হামলা। একে রুখতে হবে গণজাগরণকে আরো বেগবান  করে।  প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে। বজ্রকন্ঠে একই সুরে বলতে হবে - জয় বাংলা বাঙালির বাংলাদেশ, চার হাজার বছরের বাঙালি শান্তির প্রতীক, শান্তিই ইসলাম। ধর্মান্ধরা সাবধান!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন