বৃহস্পতিবার, ৩ জুলাই, ২০১৪

হাক্কানী কথা



হাক্কানী কথা

সংলাপ ॥ সব সত্য না। যতক্ষণ পর্যন্ত আপনার বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ রূপ এক না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত সব সত্য হবে না। আপনি প্রথমে একটি-কে সত্য হিসেবে ধারণ করুন। তারপর আস্তে আস্তে এগিয়ে চলুন। কালক্রমে এক সত্যই আপনার মধ্য থেকে সব মিথ্যাকে সরিয়ে দেবে। এক সত্যকে নিজের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত করতে গেলে প্রথমেই আসতে হবে উপলব্ধি। আপনি যে শিক্ষায়ই শিক্ষিত হন না কেন, যত শিক্ষা যত বিদ্যা আপনার জানা হয়েছে সবগুলোর সমন্বয় সাধন করে স্বশিক্ষায় শিক্ষিত না হতে পারলে, স্বশিক্ষায় নিজেকে উদ্ভাসিত না করতে পারলে উপলব্ধি আসবে না। যার যত উপলব্ধি থাকবে, প্রতিটি কর্মে যার যত অনুসন্ধিৎসা থাকবে, যে কর্মের মধ্যে নিজেকে নিয়োজিত রাখবে সে-ই এগিয়ে যাবে। হাক্কানী ওজায়িফে লেখা রয়েছে - কর্মই ধর্ম। কিন্তু কোন্‌ কর্ম ধর্ম? যে কর্মের মধ্যে আপনি নিয়োজিত আছেন সে কর্মের মধ্যে আপনি একনিষ্ঠ আছেন কি-না? একনিষ্ঠ না থাকলে কর্ম, ধর্ম হয় না। একনিষ্ঠ হলেই উপলব্ধি আসবে। যে মুহূর্তে উপলব্ধি আসবে সে মুহূর্ত থেকে তা চেতনায় নাড়া দেবে। আস্তে আস্তে নিজের পথ নিজে তৈরি করতে থাকবে। যুগে যুগে যত ধর্ম এসেছে, যত তরিকা এসেছে তাকে আপনি অস্বীকার করতে পারবেন না। কারণ, সূফী সাধক আনোয়ারুল হক বলে গেলেন তাঁর ভাবশিষ্যকে ‘দুনিয়াতে মিথ্যা বলে কিছু নেই’। মিরপুর আস্তানা শরীফে তিনি এই বাণী দিয়ে গেলেন আর বলে গেলেন যে, এটাই তোমার চলার পথ।
কয়েকদিন আগে কুষ্টিয়ায় সাঁইজীর যে অনুষ্ঠান হয়ে গেল সেখানে কে গাঁজা খাচ্ছে সেটা নিয়ে এক শ্রেণির লোক ব্যস্ত হয়ে গেছে। সে তো তার পয়সায় খাচ্ছে। কিন্তু তুমি কি করছো? তুমি কেন তার টা দেখতে যাচ্ছো? তোমাকে কে অধিকার দিয়েছে যে, তুমি তা দেখবে আর যা খুশি বলবে? তুমি কেন অন্যদিকে তাকাও? তুমি যখন অন্যদিকে তাকাও তখন এটি পরিষ্কার হয়ে যায় যে, তোমার উপলব্ধি হয়নি, তুমি নিজে তোমার শক্তিকে নষ্ট করে দিচ্ছ। তোমার চেতনা আসবে কোত্থেকে? তুমি যা বলছো তা তো বলছো তোমার পূর্বধারণা থেকে। পৃথিবীর বুকে যত ধর্ম আছে, সকল ধর্মে যতজন সাধক আসছেন তাদের প্রতেক্যের নিজস্ব একটা ভাষা আছে। সে ভাষা উপলব্ধি করার জন্য যে সংযোগ স্থাপন করতে হয়, সে সংযোগ কতজন করতে পারে? যারা সংযোগ স্থাপন করবে, যারা সংযোগের পথে চলবে তারা সাধকের চাহনিতে, সাধকের শরীরের ভাষায়, সাধকের পোশাক থেকে বিশ্ল্লেষণ করে সত্যকে আবিষ্কার করবে।
হাক্কানী হাজার-লাখের দরকার নেই। একজন হাক্কানী-ই সারা বিশ্বকে কাঁপিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। তবে তা বাহ্যিকভাবে না। যারা সুরা কাহাফ পড়েছেন তারা সেটা উপলব্ধি করতে পারবেন। হাক্কানী এক ছাড়া আর কিছু বুঝে না। পৃথিবীর যে প্রান্তেই যাক, ৪০ হাজার ফুট উপর দিয়েই যাক, পানির মধ্য দিয়েই যাক, আর মাটিতেই হাঁটতে থাকুক তারা এক ছাড়া আর কিছু বুঝে না। পৃথিবীতে যারা রাষ্ট্র শাসন করে তাদেরকে কে পরিচালিত করে? যারা সত্যের কাণ্ডারি আছেন পৃথিবীর বুকে, যার সংখ্যা এখনো ৩ ডিজিটে আসে নাই, তারাই তাদের অবস্থান থেকে বিশ্ব নেতৃত্বকে দিক নির্দেশনা দেন। কিন্তু নেতৃত্ব তা ধরতে পারে না। হয়ত তারা সকলের সাথে আলোচনা করে একটি সিদ্ধান্ত নেয় কিন্তু পরদিনই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে। তার কাছে কিভাবে নির্দেশনা আসে? কেমনভাবে আসে? যারা আধ্যাত্মিক ব্যবস্থাপনায় থাকেন তারা চিন্তার তরঙ্গ সৃষ্টি করে যখন যা প্রয়োজন তা করিয়ে নেন। সেটা মানুষের বিবেচনায় নির্মম হলেও কিছু যায় আসে না। বিশ্বকে একটা জায়গায় পৌঁছানোর জন্যে তাঁরা তাদের কাজ করে যাচ্ছেন। সেখানে দুনিয়াদারিতে স্বামী, স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে কিংবা কোন দল বা কোন গোষ্ঠীর ক্ষতি হলে কিছু যায় আসে না। বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে কয়েক জন মানুষ যখন কোন একটি পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে নিহত হয় তখন সারা দেশে হৈ-চৈ হয় কিন্তু যখন লঞ্চডুবিতে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয় তখন কিন্তু এত হৈ-চৈ দেখা যায় না। -এটাই হচ্ছে রাজনীতি। রাজনীতি কাউকে মিথ্যা বলার অধিকার দেয় না। (চলবে)।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন