বৃহস্পতিবার, ৩ জুলাই, ২০১৪

ইসলামের ভিত্তি হলো ন্যায়



ইসলামের ভিত্তি হলো ন্যায়

সাদি ॥ বাংলাদেশ একটি দরিদ্র, দুর্নীতিগ্রস্ত এবং মুসলিম অধ্যুষিত দেশ। যেখানে দারিদ্র্য ও দুর্নীতি আছে সেখানে প্রকৃত অর্থে ইসলাম (শান্তি) থাকতে পারে না। অথচ বাংলাদেশে এমন এক অদ্ভুত ইসলাম আছে যা সন্ত্রাস, দুর্নীতি, ধর্ষণ, নৈতিকতার অবক্ষয়, হত্যা, নিরাপত্তাহীনতা, দরিদ্রতা ইত্যাদির সাথে আপোষ করে চলে। এই পরিস্থিতিকেই বলা হয় জাহেলিয়াত। জাহেলিয়াত হচ্ছে এক অদ্ভুত আঁধারের নাম, যে আঁধারে ঘুষের টাকায় কারুকার্যময় মসজিদ-মাদ্রাসা নির্মিত হয়। যে আঁধারে অন্যের সম্পদ অবৈধভাবে গ্রাস করে ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। জাহেলিয়াত হচ্ছে এমন এক বর্বরতা, মূর্খতা এবং অজ্ঞতার নাম - যেখানে সবচেয়ে বড় দুর্নীতিবাজও ধর্মের ধ্বজ্বাধারী হয়, যেখানে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী, আমানতের খিয়ানতকারী, দরিদ্রের হক আত্মসাৎকারীকে মানুষ বারবার নেতা নির্বাচিত করে।
ইসলাম ও দুর্নীতির অদ্ভুত মাখামাখিতে জাহেলিয়াতের আকাশ তমসাচ্ছন্ন। ইসলাম সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায় ও সুবিচারের ধর্ম। ইসলামের ভিত্তি হলো ন্যায়। এ ভিত্তি যত নড়বড়ে হবে ইসলাম তত নড়বড়ে হবে, ন্যায়ের ভিত্তি যদি ধ্বসে যায় তবে ধ্বসে যায় ইসলামও।
মোহাম্মদ (সা.) উদাত্ত কন্ঠে ঘোষণা করেছেন, ‘আমি মানুষের নৈতিক-গুণ মাহাত্ম্যকে পূর্ণতার স্তরে পৌঁছে দেবার জন্যেই প্রেরিত হয়েছি’ (‘মোয়াত্তা - ইমাম মালেক)’। এ ঘোষণা ইসলাম, রেসালাত ও নবুয়তের সার-সংক্ষেপ। এ মহৎ উদ্দেশ্যই বর্ণিত হয়েছে কুরআনের জীবন দর্শনে। নৈতিকতা, সততা, সত্য, শুভ ও কল্যাণের দিকে আহ্বানে কুরআন সৃষ্টি করেছে এক অপূর্ব শব্দ তরঙ্গ। কখনো গদ্যের মতো, কখনো পদ্যের মতো, কখনো আইনের ভাষ্যের মতো কুরআন মানুষকে কল্যাণের দিকে, সত্যের দিকে আহ্বান জানায়। মুসলমান এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে নামাজের দিকে ছুটে যায়। কিন্তু কল্যাণ, সত্য ও ন্যায়ের দিকে ছুটে যায় না।
কিন্তু কুরআন সবক্ষেত্রেই আপোষহীন, তাই সদর্পে ঘোষণা করে - “ধ্বংস সেই মুসল্লিদের জন্য, যারা নিজেদের সালাতের ব্যাপারে উদাসীন (সুরা মাউন)।’
নামাজ মুসলমানকে অন্যায় ও অশ্লীলতা থেকে বিরত রাখছে না। তাই ধ্বস নেমেছে ব্যক্তিজীবন ও সামাজিক জীবনের নৈতিক ভিত্তিতে। চরিত্রহীন হয়ে পড়ছে এদেশের মানুষ, সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি। পচন ধরেছে মানুষের মন-মানসিকতা আর মগজে। দুর্নীতি ও অন্যায়ের বিশাল দৈত্য হিংস্র থাবায় মুচড়ে দিয়েছে মানুষের মনুষ্যত্ব, মমত্ব ও ভ্রাতৃত্ববোধ। দেশে অনেক রাস্তা-ঘাট পাকা হয়েছে, অনেক স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় মাদ্রাসা গড়ে উঠেছে। ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলে গড়ে ওঠেছে কয়েক লক্ষ মাদ্রাসা। এসব  মাদ্রাসা অনেক আলেম ও ইসলাম বিশেষজ্ঞ তৈরি করছে কিন্তু মানুষ তৈরি করতে পারছে না।
প্রযুক্তিগতভাবে অনেক উন্নতি হয়েছে কিন্তু অবনতি হচ্ছে মানুষের ব্যক্তিসত্তার। সারা বিশ্বে এখন অন্নের অভাব নেই, বস্ত্রের অভাব নেই, বাসস্থানের অভাব নেই কিন্তু অভাব আছে প্রকৃত মানুষের, অভাব আছে - নৈতিকতার। এখন দেশে দেশে যে সংঘর্ষ হয় তা খাদ্য কিংবা জ্বালানীর অভাবে নয় - ন্যায় ও ধর্মবোধের অভাবে, লোভে। সীমাহীন লোভে মানুষ এখন অস্থির।
যে সমাজে কোন নীতি-নৈতিকতা নাই, সে সমাজে কোন ধর্মও থাকতে পারে না। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, রাস্তাঘাট, বহুতল দালান ইত্যাদি উন্নতির স্মারক নয়। প্রকৃত উন্নতির স্মারক হচ্ছে মানবিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধা। মানুষের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত না হলে যে কোন ধরনের উন্নয়ন প্রচেষ্টাই গ্রহণ করা হোক না কেন তা ব্যর্থ হতে বাধ্য।
সুসমাচার প্রচার করে এদেশের মানুষকে উদ্ধার করা যাবে না অন্ধকার গর্ত থেকে। এজন্য চাই পরিবর্তন আমাদের প্রত্যেকের চেতনায়। ব্যক্তির সমষ্টিই সমাজ। ব্যক্তির ক্ষেত্রে পরিবর্তন না হলে সমাজের ক্ষেত্রে তা আশা করা যায় না। ধর্ম প্রথমে ব্যক্তিগত, পরে সামাজিক। অন্যকে সংশোধন করার চেয়ে আমরা নিজেকে সংশোধন করতে সচেষ্ট হই তাহলেই সমাজে শান্তি ও সমৃদ্ধি আসবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন