বুধবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১৪

জনগণের শাসন ব্যবস্থা দলবিহীন গণতন্ত্রেই সম্ভব

জনগণের শাসন ব্যবস্থাদলবিহীন গণতন্ত্রেই সম্ভব

 সংলাপ ॥ গণতন্ত্র হচ্ছে জনগণের জন্য, জনগণের দ্বারা, জনগণের শাসন। অর্থাৎ জনগণের কল্যাণের জন্য, জনগণের দ্বারা পরিচালিত, জনগণের শাসন ব্যবস্থা। কিন্তু আধুনিক যুগে বিশ্বব্যাপী যে গণতন্ত্র বিরাজ করছে তা গণতন্ত্রের নামে অগণতান্ত্রিক গৃহযুদ্ধ। রাষ্ট্র পরিচালনায় সাধারণ জনগণ কিংবা রাষ্ট্রের চেয়ে দলীয় স্বার্থই মূখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল জাতীয় নির্বাচনে প্রত্যেকটি আসনে তাদের দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দেয় এবং যে দল নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে তারাই সরকার গঠন করে। সরকার গঠনের পর থেকে সরকার দলীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এমনকি তৃর্ণমূল পর্যায়ের কর্মী পর্যন্ত সকল রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে থাকেন। তাদের ইচ্ছেমতো নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, সরকারি খাস জমি দখল, কালোবাজারি, রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংক থেকে মোটা অংকের ঋণ নেয়াসহ সকল সুবিধা হরণ করে থাকেন। সাধারণ জনগণসহ বিরোধী দলগুলো তাদের মৌলিক মানবিক অধিকার থেকেও বঞ্চিত হন। তাদের বাক্‌স্বাধীনতাও হরণ করে নেয় ক্ষমতাসীনরা।
কখনো বা বিরোধী দল নিধনের খেলায় মেতে ওঠেন তারা। তবে দলীয় এমপি মন্ত্রীদের দু/একজন নিষ্ঠাবান ব্যক্তি থাকলেও তার দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে কোনো কথা বলতে পারেন না। সত্য বলার সাহসটুকুও তারা হারিয়ে ফেলেন। যে সত্য দিবালোকের মতো সুস্পষ্ট তাও তারা বলতে পারেন না। বলতে গিয়েও থেমে যেতে হয়, পাছে ফ্লোর ক্রসিং হয়ে যায়। এর ফলে অনেক সময় মন্ত্রীদের মন্ত্রণালয় হারাতে হয়। এমনকি সংসদ সদস্য পদও হারানোর ভয় থেকে যায়। কাজেই তাদেরকে নির্ভেজাল সত্যটি প্রকাশ করা থেকেও বিরত থাকতে হয়। তারই পথ ধরে বিরোধী দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিরোধিতায় লেগে যায় ক্ষমতাসীনদের। তখন সকল রাজনৈতিক দলগুলো দু'টি ভাগে বিভক্ত হয়ে (সরকার দল এবং বিরোধী দল) একে অপরের বিরুদ্ধে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকে। ফলে দেশব্যাপী এক কুরুক্ষেত্রের সৃষ্টি হয়। যার পরিণামে প্রাণ দিতে হয় অসংখ্য মানুষকে। কখনোবা শুরু হয় গৃহযুদ্ধ। কবর রচিত হয় গণতন্ত্রের।
সরকারের মেয়াদ শেষে নির্বাচনের সম্ভাবনাও কম থাকে। ক্ষমতাসীনরা চায় যেনতেন করে একটা নির্বাচনের আয়োজন করে পুনরায় ক্ষমতা দখল করতে। সে সুযোগে অনেক সময় চলে আসে সামরিক শাসন। সেই সামরিক শাসক যদি নির্বাচনের আয়োজন করেন তো ভাল। নয়তো তাকে সরাতে আবার সকল দল মিলে আন্দোলন করতে হয়। পরবর্তীতে যদি কোনো সুষ্ঠু নির্বাচনের সুযোগ হয় তবে যে দল ক্ষমতার আসনে বসে, তারা পূর্বের ক্ষমতাসীনদের মতোই নিজেদের আখের গোছায়। বিরোধীদল বা সাধারণ জনগণের কথা ভাববার সুযোগ থাকে না। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে কোনো কাজ করার প্রবণতাও থাকে না। অনেকে মনে করতে পারেন কোনো কোনো জাতীয় ইস্যুতে অথবা আন্তর্জাতিক ইস্যুতে কোনো আন্দোলনের প্রয়োজন হলে দলীয় সরকারের বিকল্প নেই। কিন্তু একটু চোখ খুলে দেখা যায়, বিভিন্ন দেশে যে গণআন্দোলনের সৃষ্টি হচ্ছে তা কোনো দলীয় প্রভাবে নয় বরং সাধারণ জনগণের প্রচেষ্টায় ও অংশগ্রহণেই হয়ে থাকে।

বিশ্বব্যাপী এমনই এক পরিস্থিতিতে আমরা নতুন কোনো মৌলিক গণতন্ত্রের কথা কি ভাবতে পারি না? যেখানে কোনো দল থাকবে না। জনগণের মধ্য থেকে ন্যূনতম নির্ধারিত যোগ্যতা সম্পন্ন যে কোনো ব্যক্তিই নিজের মতো করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। নির্বাচনে আসন জয়ের পরে সবাই মিলে সরকার গঠন করবে। দলীয় প্রভাবমুক্ত সরকারই প্রকৃত অর্থে গণতান্ত্রিক সরকার হতে পারে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন