বুধবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৪

দুর্নীতির পৌষমাস শিক্ষার সর্বনাশ



দুর্নীতির পৌষমাস শিক্ষার সর্বনাশ

হরিভজন কুন্তল ॥ পাশাপাশি দু’টি সংবাদ- শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, ‘আগে শিক্ষার মান ছিলই না’ অন্যটি ‘জিপিএ-৫: হাজার হাজার মাকাল ফল’। প্রথমটি শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন। তিনি যে স্কুল থেকে শিক্ষা নিয়ে আজ মন্ত্রীত্বের আসনে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন, সেই স্কুলের ভবন নবায়ণ অনুষ্ঠানে। সেই স্কুলভবনকে ধ্বংস করেছিল, শিবির আর ছাত্রলীগের কর্মীরা- পরস্পরের সংঘর্ষে। ঘটনার পর তিনি ওখানে গিয়ে কেঁদেছিলেন। আমরা পত্রিকায় তার কান্নার সচিত্র সংবাদ পড়েছিলাম, বৈদ্যুতিন মাধ্যমে তা দেখেওছিলাম। এবার তিনি গুড়িয়ে যাওয়া ভবনটিকে আগের মতো করে নির্মাণ করেছেন। সেই অনুষ্ঠানে তিনি জানালেন- ‘আগে শিক্ষার মান ছিলই না’। অন্যদিকে কয়েকজন শিক্ষানুরাগী মানুষ একটি আলোচনার টেবিলে বলেছেন, বর্তমান শিক্ষার সংকট নিয়ে, সেখানে বক্তা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, মাকাল ফলের কথা। আমরা কোন্‌টিকে মানবো?
উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি নিয়ে যেদিন টিআইবি-র রিপোর্ট প্রকাশিত  হলো, সেদিন থেকে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যে বোম ফাটতে শুরু করল। টিআইবি-কে চেপে ধরে তিনি এক হাত নিয়েও ছিলেন বেশ শক্তভাবেই। বিডি নিউজ ২৪-এ  বিষয় এর উপর তিনি তার মতামত দিয়ে এক দীর্ঘ প্রতিবেদনও লিখেছিলেন। তার সে বক্তব্যের জের ধরে ক্ষমতাসীনদের অনেকেই টিআইবি-কে যথাসম্ভব তীর্যক বাক্যবাণে ঘায়েল করার চেষ্টাও করেছেন, এখনও সে পরিবেশ শান্ত হয়েছে বলে মনে হয়না। শিক্ষামন্ত্রী অবশ্য পরবর্তীতে খুঁজে অনেক প্রমাণও পেয়েছেন, কিছু আ্যাক্‌শনও নেবার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তবে, সফল হয়েছেন কি-না, সেটি এখনও আমরা নিশ্চিত বলতে পারবো না। এরপর তিনি সত্যি ক্ষেপে গেলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা প্রসঙ্গ নিয়ে। সেখানে ইংরেজি বিভাগে মাত্র দু’জনের সফলতাকে তিনি ষড়যন্ত্র হিসেবেই দেখলেন। চলমান সে সমস্যার সমাধান এখনও হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চেষ্টা করছেন পনের থেকে নামিয়ে আটে এনে অথবা বিশ থেকে আঠারতে নামিয়ে কিংবা অন্য বিভাগ থেকে নিয়ে কোটা পূরণের একটি ব্যবস্থা করতে, কিন্তু তাতেও ১৫০-এর কোটা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার এ চিত্র দেশের চিন্তাশীল মানুষদের মাঝে যথেষ্ট উদ্বেগের কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি এ বিষয়টি বিশিষ্টজনের আলোচনায়ও উঠে এসেছে।  আলোচনা-সমালোচনা এখনও চলমান। শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল অবশ্য এই চিত্র মানতে রাজি নন। তিনি তার দীর্ঘ প্রতিবেদনে বলতে চেয়েছেন আমাদের সন্তানদের অবস্থা মোটেও ওরকম নয়, তিনি অবশ্য জিপিএ-৫ এর বন্যা নিয়ে কোন আলোচনা করেন নি। তিনি দেখাতে চেয়েছেন ব্যবস্থা এবং ব্যবস্থাপনার সংকটকে। তবে, বোদ্ধারা তার সাথে ঐক্যমতে আসবেন কিনা সেটি অনিশ্চিত। আর সে কারণেই ড.আসিফ নজরুল যিনি নিজেও বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের একজন শিক্ষক এবং লেখক ও গবেষক। তিনি বলছেন- মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে ‘জিপিএ-৫ হলো   হাজার হাজার মাকাল ফল’। ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের বক্তব্যে আমরা যেমন শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যের অনুকূল প্রবাহের স্পন্দন পাই, তেমনি ড.আসিফ নজরুলের বক্তব্যেও নঞবোধক রাজনীতির অনুরণটি স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়। তা হলে সত্যটি কোথায়? আর আমাদের সন্তানদের তথা দেশের ভবিষ্যৎ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? এই প্রশ্ন এখন চিন্তাশীল মানুষের জন্য বেশ উদ্বেগের। সমাধান চাইছেন তারা- সকল কৃতিত্বকে মাকাল ফল ভাবতেও যেমন রাজি নন, তেমনি এখনকার শিক্ষা পদ্ধতিতে যথেষ্ট মানসম্মত শিক্ষার সুযোগ আছে এটাও সত্য নয়।
‘আগে মান ছিলই না’, শিক্ষামন্ত্রীর এই মন্তব্যটিকে আমরা কীভাবে গ্রহণ করবো? এখানে তিনি কোন্‌‌ ‘আগের’ কথা বলছেন? তিনি যখন ছাত্র ছিলেন তখনকার সময়ের কথা বলছেন, না তার ক্ষমতার আগ পর্যন্ত এই দেশের শিক্ষামন্ত্রকের দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদের সময়কে? অথবা বিগত বিএনপি সরকারের সময়কে চিহ্নিত করতে চাচ্ছেন? তিনি সময়টিকে মোটেই স্পষ্ট করেন নি। তাই আমরা ধরে নিতে পারি তিনি আগের সরকারের সময়টাকেই বোঝাতে চাইছেন। সাধারণভাবে আমাদের ক্ষমতাসীনরা যেমনটা করে থাকেন। কারণ তার ছাত্রজীবনে মানসম্মত শিক্ষাব্যবস্থা না থাকলে, আজকে তিনি মন্ত্রীত্ব করছেন কীভাবে? তিনিও তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই ছাত্র। ছাত্ররাজনীতির সাথে তার গভীর সম্পৃক্ততাও ছিলো। বিস্তর আন্দোলনও করেছিলেন সেই সময়কার শিক্ষার নানাবিধ সংকট এবং অধিকার নিয়ে। আজ সেই শিক্ষামন্ত্রকের দায়িত্ব তার-ই হাতে। তাই, সবিনয়ে শিক্ষামন্ত্রীকে এই প্রশ্নটি করতে পারি- সেদিনের শিক্ষা সংকটের কারণগুলো আজ কী নেই অথবা  তিনি তার কতটুকু মোচন করতে পেরেছেন? শিক্ষার অধিকার এবং রাষ্ট্রের দায়িত্ব এই প্রত্যয়ের সত্যিকারের  কোন সমাধান আমরা পেয়েছি কী? রাষ্ট্র কী সমাধান করেছে শিক্ষার মানদণ্ড কী হবে? যে শিক্ষানীতি তিনি প্রণয়ন করেছেন, তা নিয়েও কী বিতর্কের অন্ত নেই? এই শিক্ষানীতি বর্তমানের প্রচলিত বহুমুখী  শিক্ষা পদ্ধতির অটুট ব্যবস্থার পরিবর্তনে আদৌ কী কোন ছাপ রেখেছে? শিক্ষা জনগণের মৌলিক অধিকার এবং রাষ্ট্রকে তা নিশ্চিত করতে হবে, কিন্তু বাস্তবতায় শিক্ষা এখন পণ্য। ধনাঢ্য ক্রেতারাই শুধু তা অর্জন করতে পারে, সে কী মিথ্যা প্রলাপ?
শিক্ষাকে পণ্য বানিয়ে যারা তক্‌মা এঁটে বহুল প্রসার এবং পশার লাভ করে চলেছেন, সেই সত্যটিও তিনি জানেন। সে কারণেই একবার কোচিং বাণিজ্য বন্ধের উদ্যোগ নিয়ে ছিলেন কিন্তু পরে সরে আসতে বাধ্য হন। অনেকটা ভিমরুলের চাকে ঢিল মেরে উল্টো দৌঁড় মারার মতো। তারপর এদের আর রুখে কে? এখন কোচিং বাণিজ্যের সাথে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অপ্রতিরোধ্য বাণিজ্য আসমানে ঠেকেছে। সেইসঙ্গে ভর্তি বাণিজ্যেও স্রেফ দানবীয় ছাত্র রাজনীতি-ই শেষ কথা নয়, সাংসদ, নেতা, পাতিনেতা থেকে শুরু করে আমলা, আমলার কামলারাও জড়িত হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত লটারি দিয়েও এই মধুর বাণিজ্য বন্ধের কোন পথই আবিষ্কার করা যায় নি। শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্যে ক্ষমতাসীনদের বাণিজ্যের লম্বা হাতের রামায়ণ, কে-না জানেন এই দেশে। তারপর, যখন ডিজি অফিসে কোন শিক্ষকের পা পড়ে, তার চাকরি জীবনের প্রয়োজনে, তখন তাকে দিগম্বর করার নমুনা যাদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতায় আছে, তারা জানেন শিক্ষকতার পেশা কাকে বলে, যার শুরু দুর্নীতি দিয়ে শেষও হয় দুর্নীতির আর্শীবাদ নিয়ে। এমন শিক্ষক শিক্ষার মান তৈরি করবেন, না নিজের উজাড় হওয়া পকেট খুঁজে ফিরবেন? ঢাকা শহরের বিখ্যাত ক’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই তো দেশের শিক্ষার মানচিত্র নয়, ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের ষোল কোটি  মানুষের অধিকার, তা-কী নৈরাজ্য ব্যবস্থাপনা দিয়ে সংরক্ষণ করা যায়? শিক্ষামন্ত্রক আজ পর্যন্ত এই দুর্নীতি আর নৈরাজ্য বন্ধের কোন উদ্যোগ নিয়েছেন এমন দাবি আমরা করতে পারছি না।
শিক্ষা পদ্ধতি নিয়ে এ পর্যন্ত দড়ি টানাটানি কম হয়নি, শেষ পর্যন্ত এখন সৃজনশীল আর গ্রেডিং-এ এসে ঠেকেছে। তাতে ছাত্রদের লাভ ক্ষতি কী হয়েছে তা নিয়ে বিতর্কে রাত পার করা কঠিন নয়। তবে, রাজনীতি যে তাতে লাভবান হয়েছে অনেকেই আঙ্গুলটি সে দিকেই তুলে ধরছেন। বোর্ডের সিদ্ধান্ত পাশের হার আর গ্রেড বাড়াবার নির্দেশনা পত্রিকায় সংবাদ হয়ে এসেছে আমরা তা পড়েছি। তারপরও এটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নয়, সেটি মানবেন কেন একজন চিন্তাশীল মানুষ? ফেল করলে জবাবদিহিতায় পড়তে হবে একজন শিক্ষককে, এ ধরণের হুঁশিয়ারি বোর্ড থেকে শিক্ষকদেরকে খাতা প্রদানের সাথে মৌখিকভাবে ট্যাগ করা হয়, তা-কী গোপন থাকে? সেখান থেকেই যে পাশের হার আর গ্রেডের বন্যা শুরু হয়ে গেলো সেটি অস্বীকার করে মান বাড়াবার রাস্তাটি কী আদৌ খোলা থাকে? না তার কোন প্রয়োজন আছে? কোন্‌ শিক্ষকের ঘাড়ে কয়টি মাথা আছে, বোর্ডের নির্দেশনার বাইরে যায়? আর শিক্ষকদের জন্য বোর্ডগুলো মহা ফাঁদ, যে কেউ যে কোন সময় সে ফাঁদে পড়তে পারেন, সে কথাটি তাদের মনে থাকে বা রাখতে হয়। শিক্ষামন্ত্রী নিশ্চয়ই জানেন, বোর্ডের চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে অনেক পদেরই নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনীতির সম্প্রসারণের ধারায় চলাটা এখন ঐতিহ্যে দাড়িয়েছে, সেখানে যোগ্যতাটি গৌণ- আনুগত্যটি মূখ্য। সংগত কারণেই দুর্নীতির পৌষ মাস, শিক্ষার সর্বনাশ তাই ধারাবাহিক নিয়মেই ঘটছে।
সৃজনশীলতায় নোট- গাইডের দুর্নীতি থেকে শিক্ষার্থীদেরকে মুক্ত করতে আদালত নিষিদ্ধনামা জারি রেখেছে। বিষয়টির গুরুত্ব, দায়িত্ব গ্রহণের সাথে সাথে শিক্ষামন্ত্রী অনুধাবন করে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন বাংলাবাজারে কিন্তু পা রাখতেই বুঝে গেলেন কুরুক্ষেত্রের এক প্রান্ত এই সদরঘাটেই। চাইলেই সে লড়াই তিনি লড়তে পারবেন না। এখন সকলের নাকের ডগার উপরে দিব্যি আয়েশে চলছে সৃজনশীলতার নোট-গাইডের বাজারজাতকরণ। ঠেকানো তো দূরের কথা হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যাংক লোন তাদের জন্য, আমাদের শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত তৈরিতে। তবে, ওরা কাউকে বঞ্চিত করে না। অন্তত বিশ হাজার কোটি টাকার এই পণ্য বাজার যাদের নজরদারিতে, সেই সব নজরদারি সংস্থাগুলোকে উদার হাতে বোনাস দিতে ওদের কার্পণ্য নেই। ফলে শিক্ষক আর শিক্ষক সমিতিগুলো অনেক আগেই নিজেদেরকে নিলামের বাজারে তুলে কম্পানিগুলোর কাছে তাদের জবাবদিহিতা ও দায়বদ্ধতার অনন্য নিদর্শন ইতোমধ্যেই সৃষ্টি করতে পেরেছেন। সমিতি মানে এখন দোকানদারি, সে দোকানদারি স্কুল কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঁধে বেশ বসে আছে। তাইতো বিশ্ববিদ্যালয়ে লাল, সাদা, নীলের সাইনবোর্ড লাগিয়ে, তপস্যার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তারা। পদ-পদবি পেতে এই দোকানদারি বেশ কাজে দেয়। এই নভেম্বর মাস থেকেই নোট-গাইডের কোম্পানিগুলোর বাণিজ্য শুরু হয়ে যাবে। প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক তারপর উচ্চ মাধ্যমিক সকলেরই নিলাম বাণিজ্য আছে। সমিতিগুলো এ ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকায় থাকে, আর সেই সমিতিগুলোর নেতৃত্বে যারা থাকেন তারা বরাবরই ক্ষমতাসীনের রাজনীতিতে বিশ্বাসী।
সৃজনশীল পদ্ধতির শিক্ষা দিবেন যে শিক্ষকরা তাদেরকে প্রশিক্ষিত করে তোলার দায়িত্ব শিক্ষামন্ত্রক জানেন, সে চেষ্টা অব্যাহত আছে কিন্তু এখনও পর্যন্ত সে প্রচেষ্টায় ৪০%-এর বেশি সফলতা তারা দাবি করতে পারবেন বলে মনে হয় না। তারপরও জোড়া-তালি দিয়ে চলছে হয়তো। কিন্তু ইংরেজি শিক্ষাটা দিবেন কে? যিনি ভালো ইংরেজি জানেন তিনি সরকারি স্কুল তো দূরের কথা বেসরকারি স্কুলেই থাকতে রাজি নন। বয়স ঠেকাতে কখনও কখনও ঢুকে পড়েন বটে, ভালো সুযোগটি হাতে এলেই কেটে পড়েন। সেটাই স্বাভাবিক, কারণ এই চাকরির ভবিষ্যৎ যে শূণ্য তা সকলেই জানেন। অন্যদিকে সামাজিক মর্যাদা বলতে যা বুঝায়, তাও শূণ্যের কোঠায়। গতিহীনের পণ্ডিতি সেই পুরনো বাক্যই যেনো দাঁত বের করে হাসছে, আধুনিক জাতি তৈরির কারিগরদের জন্য। এদিকে গোঁদের উপর বিষ ফোঁড়ার মতো রাজনীতির লম্বা হাত। এক ছত্র বাংলা লিখতে দিলে যিনি কলম ভাঙ্গবেন, তিনিই হলেন স্কুল কমিটির সভাপতি। এই পতিরাও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে তাদের দোকানদারি বলেই জানেন, মানেন। তাই, এই পদটি পাবার জন্য দৌঁড়ের পাল্লা জাতীয় নেতা- নেত্রীর দুয়ার পর্যন্ত পৌঁছে যায়। তারাও আপনজনদেরকে  না ভুলে দুয়ার থেকে টেনে যথারীতি মর্যাদায় আসীন করে প্রতিষ্ঠানকে ধন্য করেন।
দেশে স্কুলের তিনগুণের কাছাকাছি মাদ্রাসার সংখ্যা। তবে মিল নেই দু’টো ধারায়। এদের এক করতে মাদ্রাসার পাঠ্যসূচীর পরিবর্ধন করা হয়েছে। এই ছাত্রদেরকে জাতীয় শিক্ষার সাথে সমন্বয় করতে তাদের নিজস্ব পাঠ্যক্রমের সাথে পড়তে হয় স্কুলের সকল বিষয়। একজন ছাত্র কতটা লোড নিতে পারেন? এই অবৈজ্ঞানিক ব্যবস্থা আগামি দিনে কী সুফল বয়ে আনবে বলা মুশকিল। জেলা পর্যায়ের সরকারি স্কুলগুলো দুই শিফটে চলছে। হাজার দুয়েক ছাত্র/ছাত্রীর জন্য যেখানে শিক্ষক প্রয়োজন পঞ্চাশের উপর সেখানে  ত্রিশের বেশি যোগান দেয়া এই মন্ত্রকের পক্ষে সম্ভব নয়। তা হলে, ক্লাস কে নিবেন? তাই, অনেক স্কুলই এখন দিশেহারা। তবুও তারা চালিয়ে যাচ্ছেন। একই অবস্থা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজগুলোতে। উচ্চ মাধ্যমিক থেকে শুরু করে মাষ্টার্স পর্যন্ত যাকে শিক্ষা দেয়ার দায়িত্ব পালন করতে হয়, তিনি মানের দিকে তাকাবেন কী-করে? এমনি করে হাজারো সমস্যা জিইয়ে রেখে,  গ্রেডের সাফল্যে আত্মহারা। এখন একটি চুড়ান্ত পর্বে এসে যখন ধাক্কাটা লেগেছে, তখন তার সমাধানের পথ না খুঁজে বাক্য বাণের আশ্রয় নেয়াটা কতটুকু নৈতিক? এর সব কিছুর পিছনে অনৈতিকতা আর দুর্নীতি যে স্থায়ী বাসা বেঁধে আছে, তারপরও আমরা আশা করছি শিক্ষার উচ্চ মান প্রতিষ্ঠা নিয়ে। স্রেফ প্রযুক্তিগত  বিদ্যা যে শিক্ষার মান নির্ধারণের উপায় নয়, সেটি যদি শিক্ষামন্ত্রী মেনে নিতেন তা হলে আমরা ভরসা পেতাম আমাদের সন্তানদের প্রযুক্তি অপব্যবহারের নিম্নগামীতা থেকে। ফেসবুক আর বোমা তৈরি প্রযুক্তি কোন্‌ দরজাকে উন্মুক্ত করছে, তা-কী আমরা একবারও ভেবে দেখি? কোন মানসম্পন্ন ছাত্র কী আজকের সময়ের এই ছাত্ররাজনীতি করতে পারে? আমাদের সন্তানরা অবশ্যই অযোগ্য নয়, কিন্তু আমরা তাদের বিদ্যার্জনের পরিবেশটি কী নিশ্চিত করতে পেরেছি?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন