মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

মানুষ চায় রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন

মানুষ চায় রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন

মহিবুল্লাহ বাদশা ॥ হরতাল চলছে, তার উপর বৃষ্টি এই আসে এই যায় বিদ্যুতের মতোই। তারপরও জেলা শহরটিতে রিক্‌শা কিংবা ইজিবাইক জাতীয় গাড়ি বেশ চলছে। মানুষজন তাদের নিয়মিত কাজে ছুটছেন। শুধু শহরের দোকানপাটের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা সাটার সামান্য খুলে ভিতরে বসে আছেন। বাণিজ্যে সুবিধা হবে না তারা তা জানেন কিন্তু ঘরে বসে থাকতে কার ভালো লাগে? প্রতিদিনের অভ্যেসকে চট্‌ করে বস্তাবন্দী করে থিতু হয়ে বসাটা কী সহজ? তার উপর পেটের দায় তো থাকেই। হরতাল ঘোষকরা সে কথা চিন্তা করতে মোটেই প্রস্তুত নয়। ক্ষমতা হারিয়ে এতটা বছর ধরে রাজপথে মহড়া দিয়েও ক্ষমতার নাগালটি তাদের অধরাই থেকে গেলে নিদারুন মনকষ্টে, তাই মাঝে মাঝে তাদেরকে জানান দিতে হয় তারা আছেন রাজনীতির মাঠে। ক্ষমতাসীনদের অবশ্য কিছু যায় আসে না, তারা বেশ ভালো করেই জেনে গেছেন জনগণ থেকে তারা যেমন বিচ্ছিন্ন আছেন তেমনি তাদের বিরোধীরাও। পাঁচ জানুয়ারি ইতোমধ্যেই তারা হালাল করতে না পারলেও হাতের মুঠোর বাইরে যেতে দিচ্ছেন না কোন রকমই। তাই তারা সংবিধানের দোহাই ছেড়ে দিয়ে সংবিধানটিই পরিবর্তন করে নিয়েছেন। এই সংশোধনী প্রতিরোধ করতে হরতাল দিয়েছে বিএনপি।
দেশের মানুষ ইতোমধ্যে জেনে গেছেন, উচ্চ আদালতের বিচারকদের ঠিক সময় মতো লাল কার্ড দেখিয়ে সংসদ তাদেরকে
বিদায় জানাতে পারেন সেই ক্ষমতা এখন সাংসদের হাতে। এরকম একটি আইনের পায়তারা থেকে বিদগ্ধজনেরা নানাভাবে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন এমনটি না করার জন্য কিন্তু তারা শোনেননি। কেন শুনতে যাবেন? তারা তো দেখেছেন তাদের ইচ্ছাই গণতন্ত্র। সে ইচ্ছাকে তারা যেভাবে খুশি সাজাতে পারেন, পাঁচ জানুয়ারি থেকে সে ইচ্ছার কোন ব্যত্যয় তো ঘটেনি। বিচারকদের নিয়ে আইনটি বেশ জটিল যেটি এখন তারা সংবিধানে জুড়ে দিলেন তাতে সংবিধানের যে একটি ধারালো শিং গজিয়ে গেলো সেটা নিশ্চিত করেছেন দেশের বিজ্ঞ আইনবিদরা। সেই শিং এর গুঁতো খেয়ে কখন কোন্‌ উচ্চ আদালতের বিজ্ঞ বিচারক ভূলুন্ঠিত হবেন সেটি দেখার অপেক্ষা আমরা করতেই পারি।
তবে এই আইনের ফলে আরও দুইটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান যে আইনগত স্বাধীনতাটুকুও  হারালেন,  কলাম লেখক মিজানুর রহমান খান সেটি দেখিয়েছিলেন বেশ কয়েকদিন এই বিষয়ের আলোচনা প্রসংঙ্গে। কিন্তু তাতে ক্ষমতাসীনদের কিছু যায় আসে না। তারা জানেন নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের পরে উচ্চ আদালতের ঝাঁপিয়ে পড়ার
মতো সম্ভাবনা এখনো শেষ হয়ে যায়নি কিংবা বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যার দখল উদ্ধারে বার বার আদালতের লম্বা নাকের উপস্থিতি কোন রকম স্বস্তি দেয় না। আরও জটিলতা আসতে পারে সরকারে থেকে বিরোধী সাজবার নৈতিকতার প্রশ্ন নিয়ে কিংবা দেড় শতাধিকের ফ্রি নির্বাচনের উদ্ভট গণতন্ত্রের সাংবিধানিক নৈতিক বাস্তবতার প্রশ্নে। সে যাই হোক ক্ষমতার ইচ্ছাই শেষ ইচ্ছা, তাকে যারা মানতে নারাজ তাদেরকে আইনের শৃঙ্খলে রাখাটা একান্ত জরুরি।
সাত মাস পরে বিএনপি জোট হরতাল কর্মসূচি দিয়ে মাঠে এসে এই অগণতান্ত্রিকতাকে প্রতিরোধ করতে চাইছে, কিন্তু জনগণ বরাবরের মতো সাইড লাইনে। পাঁচ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকাতে তাদের আন্দোলনে যে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে ছিলেন সেই নির্মম বর্বরতার দৃশ্য সাধারণের অন্তর থেকে মুছে যায়নি। তা কোনদিন মুছবে মনে করাটা ভুল হবে। রাজনীতির চরিত্র নিয়ে এখানেই এক বিশাল প্রশ্ন সাধারণ মানুষের কাছে। ফুটন্ত কড়াই থেকে জ্বলন্ত উনুনে ঝাঁপ দেয়ার রাজনীতি আর কতো! তারাতো সেখানেই আছেন ক্ষমতা হারাবার সময় যেখানে ছিলেন, সেই যুদ্ধপরাধী, মৌলবাদ আর দুর্নীতিবাজদের নিয়ে আন্দোলন সংগ্রামের কর্মসূচি। হাওয়া ভবনের অদৃশ্য হাতে দৃশ্যায়ন অনেকেরই মানস পটে জ্বল জ্বল করছে। তাহলে ক্ষমতা ফিরে পেলে আবার সেখানেই ফিরে যাওয়া, এমনটা হলে কী দরকার জানবাজি রেখে আন্দোলন করা?

ঢাকা শহরে বসে মিডিয়ার সামনে গলা ফুলিয়ে বক্তৃতা দিয়ে কিংবা লণ্ডনে বসে ক্ষুদে ঐতিহাসিক হবার নয়া বাসনায় এদেশের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের মনের নাগাল পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই সামান্য। সুতরাং সাধারণ মানুষ এখন চায় রাজনীতির আমূল পরিবর্তন এবং তা গুনগত। বার বার ওঠা নামায় তারা রাজনীতিকদের চিনে ফেলেছেন, জোব্বা টুপি আজকান চাপকান আর স্বার্থের কোট যে আর গণতন্ত্রের মুক্তি আনতে সক্ষম নয় বরং ফ্রাংকেষ্টাইনের দৈত্যদের হাতে রাজনীতিকে বন্ধক রেখে সকলেই যে দেশ উদ্ধার করেন তা বোঝার জন্য কাউকে আর ডক্টরেট করার প্রয়োজন হয় না। সংবিধান এবারই যে মর্যাদা হারিয়েছে তাতো নয়। সাড়ে চার দশকের ক্ষমতা দখলের রাজনীতিতে বহুবারই তার চেহারার পরিবর্তন এসেছে ক্ষমতাসীনদের ইচ্ছা পূরণের জন্য। গণতন্ত্রবিহীন  রাজনীতির হাত এমনি করেই জন অধিকারকে লুট করে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন