বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

জ্ঞানার্জন শান্তি লাভের পূর্ব শর্ত

সময়ের সাফ কথা ....
জ্ঞানার্জন শান্তি লাভের পূর্ব শর্ত

শাহ্‌ লিয়াকত আলী ॥ শ্রম ব্যক্তির কর্ম নির্ভর শক্তি। মানুষ তার চলা, বলা, দেখা, শোনা, স্পর্শ করা, ইত্যাদি কর্ম দেহ যন্ত্রের আশ্রয়ে সম্পন্ন করে। আবার চিন্তা, ভাবনা, বুদ্ধি, উপলব্ধি, বোধ, আস্থা, ভাল-লাগা, ভালবাসা, স্নেহ, সম্মান, প্রেম শ্রদ্ধা-ভক্তি ইত্যাদি মানুষের চিন্তা জগতের এক এক স্তরের কর্ম। দৈহিক কিংবা চিন্তা ভিত্তিক সকল কর্মই ব্যক্তির শ্রম শক্তির উপর নির্ভরশীল। তাই শ্রম দৈহিক কিংবা মানসিক উভয় বিধ হতে পারে। দৈহিক শ্রম কেবলই দেহ নির্ভর কিন্তু মানসিক শ্রম দেহ ও চিন্তা নির্ভর হয়ে থাকে। উভয় বিধ শ্রমের পরিশ্রমে ক্লান্তি আছে। তবে দেহ নির্ভর শ্রমের ক্লান্তি অপেক্ষা চিন্তা নির্ভর শ্রমের ক্লান্তি অপেক্ষাকৃত বেশি।
ক্লান্তি নিবারণের ক্ষেত্রে দেহ নির্ভর শ্রমিকের চেয়ে চিন্তা নির্ভর শ্রমিকের বিশ্রাম অধিক প্রয়োজন। বিশ্রাম হলো ক্লান্তি নিয়ন্ত্রণকারী শক্তি। নির্দিষ্ট কর্ম থেকে বিরত হয়ে কিছুটা অবসর জীবন যাপনের মাধ্যমে বিশ্রাম নেয়া যায়। আবার নিদ্রার মাধ্যমেও বিশ্রাম নেয়া যায়। অবসরের বিশ্রাম অপেক্ষা নিদ্রার বিশ্রাম অধিক শক্তিশালী। বাস্তবে দেখা যায়, দিনের প্রথম প্রহরে ব্যক্তি কর্ম করতে যতটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে দিবসের শেষ প্রহরে ব্যক্তি কর্ম করতে ততটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেনা। এর কারণ সাধারণত দিনের বেলা বিশ্রাম কিংবা নিদ্রার মাধ্যমে যতটা ক্লান্তি প্রশমিত হয় রাত্রির বিশ্রাম কিংবা নিদ্রায় তদপেক্ষা অধিক ক্লান্তির অবসান ঘটে। ক্লান্তি অসুখ তথা রোগ ব্যাধির কারণ কিন্তু বিশ্রাম কিংবা নিদ্রা অসুখ বা রোগ ব্যাধি উপশম করে। তাই আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান রোগীর বিশ্রাম কিংবা নিদ্রা ব্যবস্থাপনায় অনেক জটিল ও কঠিন অসুখ উপশম করার পরামর্শ দেয়।
কর্ম ছাড়া কোন কিছুই করা যায় না। কর্ম করেই মানুষ শারিরীক, মানসিক কিংবা আধ্যাত্মিক সকল ক্ষেত্রের চাহিদা মেটাতে সক্ষম। একজন ভিখারী চাইলে উন্নত কর্মের আশ্রয়ে দাতায় পরিণত হতে পারে। আবার উন্নত কর্ম পরিহার করে একজন দাতা ভিখারীতে পরিণত হয়। কে ভিখারী থাকবে কে দাতা হবে তা নির্ভর করে ব্যক্তির চিন্তা, কর্ম,  উপলব্ধি, অনুশীলন ও অভিজ্ঞতার উপর। কর্ম উপলব্ধিজাত শক্তির মাধ্যমে সম্পাদন করা যায়। আবার পড়ে, শুনে কিংবা দেখে-দেখেও করা যায়। দেখে, শুনে কিংবা পড়ে কর্ম করার অভিজ্ঞতা এবং উপলব্ধিজাত শক্তির সাহায্যে কর্ম করার অভিজ্ঞতা আপতভাবে অনুরূপ আস্থা সম্পন্ন মনে হলেও আস্থার সন্তুষ্টির বিচারে উপলব্ধিজাত শক্তির সাহায্যে অর্জিত আস্থায় ব্যক্তির সন্তুষ্টি অধিক থাকে। উভয় ক্ষেত্রের কর্মে ব্যক্তির সন্তুষ্টির পার্থক্যের কারণ তলিয়ে দেখলে দেখা যায় পড়া, শোনা কিংবা দেখে দেখে কর্ম করার অর্জিত অভিজ্ঞতায় ব্যক্তির বুঝে কর্ম করার ক্ষমতা ততটা থাকে না। এক্ষেত্রে ব্যক্তির কেবলই অনুমান ও ধারণা ভিত্তিক কর্ম করার অভিজ্ঞতা [শক্তি] অর্জিত হয়। আবার উপলব্ধিজাত শক্তির সাহায্যে কর্ম করার ক্ষেত্রে ব্যক্তি বুঝে কর্ম করার ক্ষমতা অর্জন করতে পারে বিধায় এক্ষেত্রে ব্যক্তি তার স্বজ্ঞা শক্তির আশ্রয়ে কর্ম করার ক্ষমতা লাভ করে।
বুঝে কর্ম করার অর্থ জানা ও চেনার স্তরের শক্তিতে কাজ করা। বাস্তবে জানা ও চেনা শক্তিতে শক্তিবান ব্যক্তিই তার সকল শক্তির আত্মবল উপলব্ধি করতে সক্ষম। সজ্ঞা শক্তিতে কর্ম করার মাধ্যমে কোন কর্ম যতটা নিখুঁত ও নির্ভুলভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব, পড়া, শুনা কিংবা দেখার মাধ্যমে সেভাবে নিখুঁত ও নির্ভুল কর্ম করা যায় না। তাই নিখুঁত ও নির্ভুল কর্ম করার সন্তুষ্টি অপেক্ষা ধারণা ও অনুমান নির্ভর কর্ম করার সন্তুষ্টিতে ব্যক্তির মাঝে আত্মবলের জাগরণ কম হয়। কর্মে ব্যক্তির মাঝে আত্মবলের জাগরণ কম বেশি হওয়ার কারনেই ব্যক্তির মাঝে সন্তুষ্টির মাত্রাও কম বেশি হয়ে থাকে। ব্যক্তির সন্তুষ্টি-কর্ম-নির্ভর এবং কর্ম শ্রম নির্ভর হয়ে থাকে। যে শ্রমের কর্মে ব্যক্তির সন্তুষ্টির মাত্রা অধিক থাকে, সে কর্মে ব্যক্তির বিত্ত-বৈভব কম থাকলেও সুখ স্বাচ্ছন্দ্য অধিক থাকে। তাই এসব কর্মের মাধ্যমে ব্যক্তি দৈহিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিকভাবে উন্নত স্বাস্থ্যের অধিকারী হয়, আর যেসব কর্মে বিত্ত-বৈভব বেশি কিন্তু সন্তুষ্টির মাত্রা কম থাকে সে সব কর্মে ব্যক্তির আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য থাকলেও দৈহিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক স্বাচ্ছন্দ তেমনটা থাকেনা। তাই এক্ষেত্রে ব্যক্তি সার্বিকভাবে সুখী না হয়ে অসুখী ও নিরানন্দের জীবন যাপন করে থাকে।
মর্যাদাবান ব্যক্তিত্ব তাঁরাই যারা অপেক্ষাকৃত অধিক সুখী জীবন যাপন করেন। অপেক্ষাকৃত অধিক সুখী তারা-যারা ভাল-মন্দের মাত্রাগত পার্থক্য করতে পারেন। তারাই ভাল-মন্দের মাত্রাগত পার্থক্য করতে পারেন যারা অনুমান-ধারণা নির্ভর না হয়ে বুঝে কর্ম করতে পারেন। তারাই বুঝে কাজ করতে পারেন যারা সজ্ঞায় কর্ম করেন। তারাই সজ্ঞায় কর্ম করতে সক্ষম যাদের আত্মবল জাগ্রত। তাদেরই আত্মবল জাগ্রত যারা জ্ঞান শক্তিতে বলীয়ান।

যারা জ্ঞান শক্তিতে বলীয়ান হয়ে অধিক মর্যাদাপূর্ণ শ্রম-নির্ভর শান্তির জীবন লাভ করতে চান, তাদের জন্য জ্ঞান অর্জন করা অত্যাবশ্যক। আর শান্তির জীবন যাপন করা জ্ঞানার্জন ছাড়া সম্ভব নয়। জ্ঞান একমাত্র আল্লাহ্‌র শক্তি। এ জ্ঞান শক্তি অর্জন করার জন্য আল্লাহর গুণে গুনান্বিত ব্যক্তিত্ব তথা আল্লাহ্‌ ওয়ালাদের অনুসারী হয়ে জীবন যাপনের কর্ম অভ্যাস গড়ে তোলা আবশ্যক। তাহলেই মর্যাদাবান শ্রমের অধিকারী হয়ে অপেক্ষাকৃত সুখী ও শান্তিপূর্ণ জীবনের স্বাদ আস্বাদান করা সম্ভব হবে। অন্যথায় গতানুগতিক মরিচিকাতুল্য সাময়িক সুখের জীবনের অপেক্ষায় দু:খভরা মর্যাদাহীন জীবনের গ্লানি সহ্য করে ধুকে ধুকে মরা ছাড়া আর কোন গতি থাকবে না। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন