বুধবার, ১ জানুয়ারী, ২০১৪

বিটিভির ৫০ বছরে পদার্পণে দু'দিনব্যাপী অনুষ্ঠান জনগণের প্রত্যাশা পূরণের আহ্বান রাষ্ট্রপতির



বিটিভির ৫০ বছরে পদার্পণে দু'দিনব্যাপী অনুষ্ঠান
জনগণের প্রত্যাশা পূরণের আহ্বান রাষ্ট্রপতির

শেখ নাফিয়া ॥ ১৯৬৪ থেকে ২০১৩। সময়ের আবর্তনে দীর্ঘ ৪৯টি বছর পেরিয়ে ৫০-এ পা রাখলো বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি)। সুদীর্ঘ এ যাত্রা পথে দেশের আরক্তিম স্বাধীনতার ইতিহাস যেমনি করে বন্দী হয়েছে সময়ের ফ্রেমে, তেমনি দেশজ ঐতিহ্য সংস্কৃতি আর আপামর সাধারণ মানুষের গণকন্ঠেও পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ টেলিভিশন - বিটিভি।
গত ২৫ ও ২৬ ডিসেম্বর দু'দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে ৫০ বছরে পদার্পণ উদযাপন করলো বাংলাদেশ টেলিভিশন।
রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদ ২৫ ডিসেম্বর বুধবার ১১ পৌষের সুন্দর বিকেলে রাজধানীর রামপুরায় বাংলাদেশ টেলিভিশনের শহীদ মনিরুল আলম মিলনায়তনে দু'দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করেন। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নসহ এবং ভাষা সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের লালনে বাংলাদেশ টেলিভিশনের ভূমিকার প্রশংসা করেন রাষ্ট্রপতি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিটিভির গৌরবোজ্জল ৫০ বছরের ইতিহাস তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ টেলিভিশন বিগত কয়েক দশকে জন আকাংখার সাথে তাল মিলিয়ে বিভিন্ন রকম অনুষ্ঠান প্রচার করেছে এবং একই সাথে পাবলিক টেলিভিশন চ্যানেল হিসেবে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে  আসছে।
রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ আশা প্রকাশ করেন যে, বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) কর্তৃপক্ষ জনগণের প্রত্যাশা অনুসারে আরও উন্নত ও চিত্তাকর্ষণ অনুষ্ঠান পরিবেশন করবে। রাষ্ট্রপতি বলেন, 'আমি আশা করি বিটিভি কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠানটির ঐতিহ্য ও সুনাম অক্ষুন্ন রেখে এবং জনগণের প্রত্যাশার প্রতি সম্মান দেখিয়ে অধিক মানসম্পন্ন ও চিত্তাকর্ষক অনুষ্ঠান উপহার দেবে।' সুবর্ণ জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, বর্তমান সময় প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে চলছে। অনেক টিভি চ্যানেল তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করে বিনোদনের জন্য তাদের অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করছে। এজন্য বিটিভি কর্তৃপক্ষকে দর্শকের প্রত্যাশার প্রতি মনোযোগী হয়ে এমন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে দেশের স্বাধীনতার চেতনা সদা সমুজ্জ্বল থাকে।
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও বিটিভির প্রথম মহাপরিচালক জামিল চৌধুরী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তথ্যসচিব মর্তুজা আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিটিভির মহাপরিচালক ম. হামিদ। সব বক্তাই বাংলাদেশ ও বাঙালির মুক্তিসংগ্রামে বিশেষ করে ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে অসহযোগ আন্দোলনের তৎকালীন বিটিভির কর্মকর্তা, কর্মচারি ও কলাকুশলীদের ভূমিকার কথা কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেন। জামিল চৌধুরী জানান, ৭১'এর ২৩ শে মার্চ 'পাকিস্তান দিবসে সারা বাংলার মতো তৎকালীন টিভি ভবনেও পূর্ববাংলার মানচিত্রখচিত পতাকা উড়ানো হয়, পাকিস্তানী পতাকা উড়ানো হয়নি।
পরে রাষ্ট্রপতি বিটিভির সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে একটি কেক কাটেন। রাষ্ট্রপতি 'বিটিভি ফ্রম ডিআইটি টু রামপুরা শীর্ষক একটি তথ্যচিত্র এবং সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। ৫০ বছর পদার্পণ উপলক্ষে  বিটিভি পরিণত হয় এক মহা-মিলনমেলায়। নবীন-প্রবীণ শিল্পী, কলাকুশলী, এর কর্মকর্তা, কর্মচারী সবাই একত্রিত হয় ২৫ ডিসেম্বর এই দিনটিকে জীবন পাতায় স্বরণীয় করে রাখতে। বিটিভির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শিল্পী কলাকুশলী থেকে শুরু করে সংবাদ উপস্থাপক সবাই ব্যক্ত করেন দিনটির অনুভূতি এবং বিটিভির কাছে তাদের প্রত্যাশার কথা।
প্রথম মহাপরিচালক জামিল চৌধুরী ৩৮ বছর পর বিটিভি ভবনে - ৫০ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে বর্ণিল সাজে সাজানো হয় টেলিভিশন ভবনকে। নানা আলোকচিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরা হয় বিটিভির নানা গৌরবজ্জল অনুষ্ঠান।
অনুষ্ঠানটিকে সর্বাঙ্গীন সুন্দর করে তুলতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন বিটিভির বর্তমান মহাপরিচালক ম. হামিদ। এ বছর বিটিভির বর্ষপূতি অনুষ্ঠানের একটি বিশেষ দিক ছিল এর প্রথম তথা প্রতিষ্ঠাতা মহাপরিচালক পদার্থবিদ জামিল চৌধুরী ২৫ ডিসেম্বর (ছবিতে ফাইল হাতে মাঝে) দীর্ঘ ৩৮ বছর পর বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত হয়ে রামপুরায় টেলিভিশন ভবনে আগমন করেন। ১৯৭৫ সালের ৭ই ডিসেম্বর তথাকথিত সিপাহী বিপ্লবের পর একদল উচ্ছৃঙ্খল সেনা সদস্যের হাতে বিটিভির ৪ জন কর্মকর্তা নিহত হওয়ার প্রতিবাদে জামিল চৌধুরী আর কোনোদিন এই ভবনে প্রবেশ করেননি। ফলে এ বছর বর্ষপূতির অনুষ্ঠানে বিটিভি ভবনে তার আগমন ও বক্তৃতায় উপস্থিত সচেতন সকলের মধ্যে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। জামিল চৌধুরী পরে বিটিভি ভবনে নবনির্মিত বার্তাকক্ষ, নিউজস্টুডিওসহ তার স্মৃতিবিজড়িত বিভিন্ন কক্ষ ও স্টুডিও ঘুরে ঘুরে দেখেন। বিটিভির উপমহাপরিচালক (অনুষ্ঠান) গোলাম শফিউদ্দিন, প্রধান বার্তা সম্পাদক গোপাল চন্দ্র দেব, বার্তা সম্পাদক শাহ শেখ মজলিশ ফুয়াদ এই সময় তার সাথে ছিলেন।       
এ উপলক্ষে দু'দিনই সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত বিটিভির নিজস্ব স্টুডিও ও বিশাল উন্মুক্ত চত্বরে আয়োজন করা হয় দেশবরেণ্য শিল্পীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। দেশাত্মবোধক, লালন  সাঁইজী ও শাহ আব্দুল করিমের বাউল গানগুলো দর্শদেরকে আনন্দ দিয়েছে সবচেয়ে বেশি, গানের সাথে নেচে গেয়ে নির্মল আনন্দ উপভোগ করেছেন বিটিভির সাবেক ও বর্তমানের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারি ও বাইরে থেকে আগত ও আমন্ত্রিত দর্শক-শ্রোতারা।
 বাংলাদেশ টেলিভিশনের ৫০ বছরে পদার্পন উপলক্ষে ২৫ ডিসেম্বর  সকালে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বেসরকারি গণমাধ্যম চ্যানেল আই। ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেন তথ্য ও এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, তথ্য সচিব মরতুজা আহমদ, বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রথম মহাপরিচালক জামিল চৌধুরী, বর্তমান মহাপরিচালক ম. হামিদ, চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগরসহ বিটিভির প্রাক্তন ও নবীন অনেক সদস্য।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন