মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারী, ২০১৪

গণতন্ত্র রক্ষায় এ নির্বাচন জরুরি ছিলঃ এফবিসিসিআই



গণতন্ত্র রক্ষায় এ নির্বাচন
জরুরি ছিলঃ এফবিসিসিআই

সংলাপ ॥ সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে আবারও সমঝোতার উদ্যোগ নেবে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়। অর্থনীতি বিধ্বংসী হরতাল-অবরোধ বন্ধে নেয়া হবে বিভিন্ন কর্মসূচী। নতুন সরকার গঠন ও দায়িত্ব নেয়ার পরই ব্যবসায়ীদের একটি শক্তিশালী প্রতিনিধি দল তাদের সঙ্গে দেখা করবে। স্বাগত ও অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট দূর করতে সরকারকে আগে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হবে। জানা গেছে, চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানে অনেকটা আটঘাট বেঁধে এবার মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন শিল্পোদ্যোক্তারা। এ ছাড়া দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরবর্তী নতুন সরকারও সমঝোতার উদ্যোগ নেবে বলে তাদের প্রত্যাশা। দেশের অর্থনীতি, শিল্প, ব্যবসা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগে যে স্থবিরতা নেমে এসেছে তা দূর করতে হলে স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ জরুরি হয়ে পড়ছে। নির্বাচন পরবর্তী নতুন সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানের একটি পথ বেরিয়ে আসবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
এ জন্য গণতন্ত্র রক্ষা ও সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রাখার স্বার্থে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন জরুরী ছিল বলে মনে করে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। সংগঠনটির সভাপতি কাজী আকরামউদ্দিন আহমেদ বলেন, ভোট দিতে আমি গ্রামের বাড়িতে চলে এসেছি। দেশের ৩ কোটি ব্যবসায়ী রবিবারের নির্বাচনে ভোট দিতে প্রস্তুত ছিল। যদিও ইতোমধ্যে অর্ধেকেরও বেশি প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি বলেন, নির্বাচন উৎসবমুখর হতো যদি প্রধান বিরোধী দল বিএনপি অংশগ্রহণ করত। কিন্তু এটাই জাতির দুর্ভাগ্য, দলটি এ নির্বাচনে নেই। অথচ টেকসই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিকল্প কিছু নেই। নির্বাচন হয়ে গেছে, এতে আওয়ামী লীগ আবারও সরকার গঠন করবে এটা যেমন সত্য, তেমনি চলমান রাজনৈতিক সঙ্কটেরও একটি সমাধানের পথ বেরিয়ে আসবে বলে আমরা মনে করছি। এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, নির্বাচন ও নতুন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর দু'দলের মধ্যে সমঝোতা হবে এ রকম আভাস ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে দেয়া হয়েছে। আগামী ২৪ জানুয়ারির পর যে কোন সময় পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে সংলাপ হতে পারে। সংলাপ ও সমঝোতার মধ্য দিয়ে দেশে স্থিতিশীল সরকার গঠন হবে। তিনি বলেন, ব্যবসায়ী সমপ্রদায়ের পক্ষ থেকে দু'দলের সমঝোতার ব্যাপারে কয়েক দফা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিন্তু তাতে কোন সাড়া মেলেনি। তবে নির্বাচনপরবর্তী নতুন সরকারের কাছেও এফবিসিসিআই সমঝোতার প্রস্তাব নিয়ে যাবে। বর্তমান বিরোধীদল বিএনপিকে নিয়ে যাতে নতুন সরকার আরেকটি নির্বাচন করার উদ্যোগ নেয়, এফবিসিসিআই সে চেষ্টা চালাবে।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বন্ধে রাজনৈতিক সহিংসতায় দেশের অর্থনীতি বিপর্যয়ের মুখে রয়েছে। গত তিন মাসের ধারাবাহিক অবরোধ ও হরতালে এ পর্যন্ত আর্থিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় সোয়া লাখ কোটি টাকা। বিনিয়োগে স্থবিরতা নেমে আসার পাশাপাশি কর্মসংস্থানে বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে। চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে রফতানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্প খাত। এ শিল্পের ক্রেতারা বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার হুমকি দিয়েছে। এ ছাড়া দেশের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে এসেছে। সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটায় পোল্ট্রি ও দুগ্ধ শিল্প চরম আর্থিক সঙ্কটের মুখে রয়েছে। এ ছাড়া অর্থনীতির প্রাণ কৃষি খাতে দুর্দিন চলছে হরতাল-অবরোধের কারণে। সার, ডিজেল ও কীটনাশক সরবরাহ নিশ্চিত না হলে চলতি বোরো আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর সেটি হলে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়তে পারে। এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, বর্তমান সমস্যা গোটা রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার কারণে তৈরি হয়েছে। দেশের আর্থ-সামাজিক টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে কিছু মৌলিক বিষয় নিয়ে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর একমত থাকা উচিত ছিল, যা হয়নি। আর তাই নির্বাচন এলেই হানাহানি ও সংঘাত প্রকট হয়ে ওঠে। এবারও তা হচ্ছে এবং ভয়াবহ আকারে। এর ফলে অবকাঠামো নষ্ট হচ্ছে, সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে, কৃষক পণ্যের দাম পাচ্ছে না, মানুষের আয়-উপার্জন কমে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে অর্থনীতি অনেক পিছিয়ে যাচ্ছে যা থেকে বেরিয়ে আসা খুব কঠিন হবে।
তিনি বলেন, গত কয়েক বছরে গ্রামীণ অর্থনীতিতে ব্যাপকভিত্তিক অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে এ সব অগ্রগতি ধ্বংস হতে চলেছে। এ অবস্থায় অর্থনীতিকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে রাজনৈতিক সমঝোতা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। জানা গেছে, চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানে ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদ, সুশীল সমাজ এবং কূটনীতিকরাও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। নির্বাচন পরবর্তী নতুন সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে চলমান রাজনৈতিক সঙ্কটের সমাধান হতে পারে। এ প্রসঙ্গে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক প্রথম সহসভাপতি আবুল কাশেম আহমেদ বলেন, নির্বাচন হয়ে গেছে এবার চলমান রাজনৈতিক সঙ্কটের সমাধানে নতুন সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। সরকারের পাশাপাশি বিরোধী দলকেও আপোস মীমাংসায় এগিয়ে আসা প্রয়োজন। গত পাঁচ বছর গণতান্ত্রিক সরকারের অধীনে দেশ পরিচালিত হওয়ার সুবাধে বৈদেশিক কর্মসংস্থান, অর্থনীতি, ব্যবসা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, অবকাঠামো, খাদ্য, শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন ও বিদ্যুত-জ্বালানি খাতে অভাবনীয় সাফল্য অর্জিত হয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক সহিংসতা ও হরতাল-অবরোধের কারণে সব অর্জনে আজ কালিমা লেগেছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন