বুধবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

সময়ের সাফ কথা মর্ম্মেঃ বেহেশত্‌-দোযখ



সময়ের সাফ কথা
মর্ম্মেঃ বেহেশত্‌-দোযখ

আরিফিন হক ॥ ধর্ম শাস্ত্রগুলোর প্রধান প্রতিপাদ্য বিষয়ই হলো বেহেশত্‌-দোযখ। শাস্ত্রগুলো এখনো টিকে আছে মানুষের লোভ ও ভয়ের উপর। শাস্ত্রপূজারীগণ বুঝতে পেরেছেন যে, মানুষকে খুব সহজে শোষণ করতে হলে, মানুষকে পদানত করে রাখতে হলে তাকে ভয় এবং লোভের মধ্যে রাখতে হবে। মানুষকে প্রতারিত করার এটাই প্রধান অস্ত্র যে তাকে এমন একটা অবস্থায় রাখতে হবে, যেন সে সবসময় ভীত থাকে। এই ভয়কেই ভয়ঙ্কর করে তোলে লোভ। তাই লোভ এবং ভয় আলাদা বিষয় না হয়ে একই বিষয় হয়ে প্রতিপন্ন হয়। বেহেশতের লোভ এবং দোযখের ভয় আলাদা কিছু নয়।
কোথায় বেহেশত্‌? কোথায় দোযখ? আকাশের অভ্যন্তরে, উপরে কিংবা ভূপৃষ্ঠের গভীরে কোথাও কি অস্তিত্ব আছে ভৌগলিক বেহেশত্‌-দোযখের? থাকতে কি পারে? এমন কোন স্থানের কল্পনা করা কি সম্ভব যেখানে বিধাতা সৃষ্টি করে রেখেছেন দগদগে আগুন কিংবা ঝর্ণার শীতল স্বচ্ছ পানি? স্থানিকভাবে কি কোথাও বিদ্যমান থাকতে পারে বেহেশত্‌-দোযখ?
একালে এক টাকা দিলে পরকালে ৭০ টাকা পাবে। ১ অনুপাত ৭০ অসাধারণ বিনিয়োগ। কিন্তু পরকালে ৭০ টাকা দিয়ে সে কি করবে? বেহেশত্‌ কিংবা দোযখে কি কোন দোকানপাট থাকবে? কেনা-বেচার বাণিজ্য কি বেহেশত পর্যস্ত বিস্তৃত হবে? বেহেশত্‌-দোযখ নিশ্চয়ই আছে কিন্তু ভৌগলিক ভাবে তার অস্তিত্ব থাকা একেবারেই অসম্ভব। বেহেশত্‌ আছে মানুষের চিন্তাজগতে, দোযখ আছে মানুষের চিন্তাজগতে, বিধাতা যেমন থাকেন চিন্তাজগতে। চিন্তাজগত যতক্ষণ শান্ত থাকে ততক্ষণ আমরা বেহেশতে থাকি চিন্তাজগত অশান্ত হলে আমরা দোযখে থাকি। আমরা যখন ক্রোধান্বিত হই তখন জ্বলতে থাকি দোযখের আগুনে। আমরা যখন প্রেমময় হই তখন বাস করি বেহেশতে।
বিধাতাকে উপলব্ধি করার জন্য প্রয়োজন আছে কি লোভ এবং ভয়ের উপস্থিতি? ভয় এবং লোভ থাকলে কি মানুষ শান্ত হতে পারে? যতক্ষণ অন্তরে বেহেশত্‌-দোযখের লোভ এবং ভয় থাকবে ততক্ষণ আমরা শান্তি থেকে দূরে থাকবো, বিধাতা থেকে দূরে থাকবো। বিধাতার জগতে কোন ভয় নেই, কোন লোভ নেই, থাকতে পারে না, পারে না। বিধাতার রাজ্যে আছে শান্তি। যেখানে শান্তি থাকে সেখানে লোভ আর ভয় থাকে না।
রাবেয়া বসরী আগুন আর পানি নিয়ে দৌড়াচ্ছেন। লোকেরা জিজ্ঞেস করলো - ‘কোথায় যাচ্ছো এভাবে দৌঁড়িয়ে? তুমি পাগলী আমরা জানি কিন্তু আগুন আর পানি নিয়ে দৌড়াদৌড়িতো ভয়ঙ্কর রকমের পাগলামী। তাই আগে বলো কোথায় যাচ্ছো তুমি?’ রাবেয়া বললেন - ‘আগুন দিয়ে আমি বেহেশত জ্বালাবো, বেহেশত জ্বালিয়ে ছাই করে দেবো আর পানি দিয়ে নেভাবো দোযখের আগুন
রাবেয়া বেহেশত্‌ কিংবা দোযখ চাননি চেয়েছেন তাঁর বিধাতাকে। ভালবেসেছেন তাঁর বিধাতাকে। তাই তার প্রেমময় হৃদয়ের আকুতি আমাদের মুগ্ধ করে। তিনি বলেন - ‘হে খোদা আমি যদি দোযখের ভয়ে তোমায় ভালবাসি, আমাকে দোযখের আগুনে দগ্ধ করো, আমি যদি বেহেশতের আশায় তোমায় ভালবাসি, আমাকে বেহেশতের বাইরে রেখো। আমি যদি তোমার জন্যই তোমাকে ভালবাসি, আমাকে তোমার অনন্ত সৌন্দর্য থেকে বঞ্চিত করো না।
আমরা নিজেরাই নিজেদের মাঝে সৃষ্টি করি বেহেশত্‌-দোযখ। এটা সম্পূর্ণভাবে আমাদের উপরেই নির্ভর করে আমরা বেহেশতে থাকবো না দোযখে থাকবো। আপনি কি আজকের দিনটা বেহেশতে থাকতে চান? তাহলে ভুলে যান দোযখের অস্তিত্ব, নিজেকে আজকের দিনটির জন্য লোভ ও ভয় মুক্ত করুন, হিংসা ও ক্রোধ মুক্ত করুন, অহঙ্কার ও মোহ মুক্ত করুন, আপনি আজই উপলব্ধি করতে পারবেন বেহেশত্‌। আপনি কি আজই দোজখের আগুন উপলব্ধি করতে চান, তাহলে ত্যাগ করুন বেহেশতের অস্তিত্ব, নিজেকে লোভ ও ভয় যুক্ত করুন, হিংসা ও ক্রোধ যুক্ত করুন অহঙ্কার ও মোহ যুক্ত করুন আজই আপনি পাবেন দোযখের স্বাদ।
আমরা যদি চাই তবে কুঁড়েঘরেই সৃষ্টি করতে পারি বেহেশত্‌। বেহেশত্‌ সৃষ্টি করতে পয়সা লাগে না। যদি আমাদের ইচ্ছা থাকে, আকাঙ্খা থাকে, প্রচেষ্টা থাকে তবে কুঁড়ে ঘরই বেহেশত্‌ হয়ে যায়। বেহেশত্‌-দোযখ হচ্ছে একটি মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা, একটি জীবন পদ্ধতি। যদি ঈর্ষার মধ্যে জীবনযাপন করি তবে নরকের জীবনযাপন করবো, যদি প্রতিযোগিতার মধ্যে জীবনযাপন করি তবে দোযখের জীবনযাপন করবো, যদি দ্বেষ-বিদ্বেষের মধ্যে জীবনযাপন করি তবে দোযখের জীবন যাপন করবো, যদি উচ্চাকাঙ্খার মধ্যে জীবনযাপন করি তবে দোযখের জীবনযাপন করবো। আমাদেরকেই ঠিক করে নিতে হবে আমরা কোথায় থাকবো বেহেশতে না দোযখে?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন