মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

বাংলাদেশ শান্তি পরিষদের জাতীয় সম্মেলন ‘২০১৩ অনুষ্ঠিত হলো শান্তি আন্দোলন এখন বেশি প্রয়োজন



বাংলাদেশ শান্তি পরিষদের জাতীয় সম্মেলন ‘২০১৩ অনুষ্ঠিত হলো 
শান্তি আন্দোলন এখন বেশি প্রয়োজন

শেখ উল্লাস ॥ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা মোজাফফর হোসেন পল্টুকে সভাপতি এবং ইঞ্জিনিয়ার ড. আবুল কাশেমকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পুননির্বাচিত করে বাংলাদেশ শান্তি পরিষদের নতুন কার্যকরী কমিটি গঠন করা হয়েছে। গত ১ সেপ্টেম্বর রবিবার বিকেলে বাংলাদেশ শান্তি পরিষদের জাতীয় সম্মেলন ২০১৩ (কাউন্সিল অধিবেশন)-এ নতুন কমিটি ঘোষণা করেন বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও জাতীয় সংসদের শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। এবার বাংলাদেশ শান্তি পরিষদের জাতীয় সম্মেলনের শ্লোগান ছিল- ‘শান্তি ও অগ্রগতির লক্ষ্যে সাম্রাজ্যবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, ক্ষুধা ও দারিদ্রের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম'
সম্মেলনে বলা হয়, বর্তমানে অশান্ত বিশ্ব পরিস্থিতিতে এবং দেশের ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর অপতৎপরতা প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজন শান্তি প্রতিষ্ঠার আন্দোলন সর্বত্র ছড়িয়ে দেয়া এবং সেই বাস্তবতায় বাংলাদেশ শান্তি পরিষদের মতো ফোরাম ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে। রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউশন সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত এই জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা ও সংগঠনের সভাপতি মোজাফফর হোসেন পল্টু। এই সময় মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি, বাংলাদেশের কমিউনিষ্ট পার্টি (সিপিবি)র সভাপতি মোজাহিদুল ইসলাম সেলিম, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) নেত্রী আমেনা আহমেদ এমপি, আওয়ামী লীগ নেতা মমতাজ হোসেন এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) নেত্রী শিরীন আক্তার।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ শান্তি পরিষদ কর্তৃক বিগত তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে পরিচালিত কর্মকান্ডের বিবরণ তুলে ধরে রিপোর্ট উপস্থাপন করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার ড. আবুল কাশেম। এই রিপোর্টে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে বিশ্ব শান্তি পরিষদের কর্মকান্ডে সংগঠনের অংশগ্রহণের কথা তুলে ধরা হয়। এতে জানানো হয় যে, এ বছর ২৩মে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের জুলিও-কুরি প্রাপ্তির ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্বশান্তি পরিষদের কার্যকরী সাধারণ সম্পাদক মিঃ হিরাক্লিসহ ভারত ও  নেপাল থেকে আগত প্রতিনিধিরা এবং উত্তর কোরিয়া, ভিয়েতনাম ও গণচীনের দূতাবাসের প্রতিনিধিরা এতে উপস্থিত ছিলেন। নেপালে অনুষ্ঠিত দক্ষিণ এশিয়া শান্তি সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে ১৪ দলের প্রতিনিধির অংশগ্রহণ, দিল্লীতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব শান্তি পরিষদের এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের আঞ্চলিক সভা এবং এরপর কোলকতায় বিশ্ব শান্তি পরিষদের সম্মেলনের প্রস্তুতি সভায় অংশগ্রহণ করেছে। ইঞ্জিনিয়ার ড. আবুল কাশেম আরও জানান, মানবতা বিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ বছর ৪ ফেব্রুয়ারি রাজাকার কাদের মোল্লার বিচারের রায় ঘোষণার পর তরুণ প্রজন্মের উদ্যোগে শাহবাগে যে স্বতঃস্ফুর্ত গণআন্দোলন গড়ে উঠেছে, বাংলাদেশ শান্তি পরিষদের সভাপতি মোজাফ্‌ফর হোসেন পল্টু তাতে অংশ গ্রহণ করে সেই আন্দোলনের প্রতি সমর্থন দিয়েছেন। শাহবাগ আন্দোলনের সচিত্র সংবাদ বিভিন্ন পত্রিকা থেকে সংগ্রহ করে বিশ্ব শান্তি পরিষদ ও তার সকল সদস্য সংগঠনসহ দুই শতাধিক আন্তর্জাতিক ঠিকানায় প্রায় প্রতিদিন পাঠানো হয়েছে। বিশ্ব শান্তি পরিষদ, ভারতের শান্তি ও সংহতি সংগঠন, নিউজিল্যা- শান্তি পরিষদ, নেপাল শান্তি ও সংহতি সংগঠন, পাকিস্তানের শান্তি পরিষদ ও কমিউনিষ্ট পার্টি শাহবাগের আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে ই-মেইল বার্তা পাঠিয়েছে। এ প্রসঙ্গে আরও উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশে ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর অপতৎপরতা ও ধর্ম নিয়ে রাজনীতির প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় পর পর দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের কয়েকটি ঘটনার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ শান্তি পরিষদ ২০১২ সালের ৬ ডিসেম্বর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটশন সেমিনার কক্ষে ‘সাম্প্রদায়িকতার বিপক্ষে ইসলাম শীর্ষক একটি সেমিনারের আয়োজন করে। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ হাক্কানী খান্‌কা শরীফের সভাপতি শাহ সূফী ড. এমদাদুল হক। প্রধান বক্তা ছিলেন কিশোরগঞ্জ শোলাকিয়ার ঈদগাহের ইমাম ফরিদ উদ্দীন মাসউদ।   
১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সম্মেলনে পঠিত সাধারণ সম্পাদকের রিপোর্টের ওপর আলোচনায় অংশ নেন, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)-এর মোঃ ইসমাইল হোসেন, বাংলাদেশ কমিউনিষ্ট পার্টি (সিপিবি)র হাসান তারিক চৌধুরী, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ফজলুর রহমান, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক নূরুর রহমান সেলিম, প্রেসিডিয়াম সদস্য সরাফত আলী হীরা, বাংলাদেশ শান্তি পরিষদের প্রয়াত নেতা আলী আকসাদের কন্যা যোগাযোগ কর্মী জেসমিনা শান্তা, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. সাজ্জাদ হায়দার, ইঞ্জিনিয়ার সরদার আমিন, জাসদ নেতা নাজমুল হক প্রধান, আফরোজা হক রীণা ও নারী নেত্রী রোকেয়া কবীর। বক্তারা বাংলাদেশ শান্তি পরিষদকে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী একটি খাঁটি সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করে একটি ধর্মনিরপেক্ষ ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ রাষ্ট্র এবং এখানে শান্তি প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম আরও বেগবান করার লক্ষ্যে পুরানো ও নতুনদের সমন্বয়ে একটি নতুন কমিটি গঠনের আহ্বান জানান। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী গত বছর জাতিসংঘে প্রদত্ত ভাষণে শান্তির যে মডেল দিয়েছেন তা বাংলাদেশ শান্তি পরিষদের কর্মকা-কে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।    
সংগঠনের রাজনৈতিক প্রস্তাব পেশ করেন মাহবুবুল ইসলাম। এতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এবং বাংলাদেশে শান্তি ও অগ্রগতির লক্ষ্যে ১৯৭২-এর সংবিধান অনুযায়ী গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও বাঙালি জাতীয়তাবাদের আদর্শ পূর্ণ বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয়।
সম্মেলনে উপস্থিত প্রতিনিধিদের সর্বসম্মতিক্রমে অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, ম. হামিদসহ ৫৪ জনকে উপদেষ্টাম-লীর সদস্য, মোজাফ্‌ফর হোসেন পল্টু ও  মোজাহিদুল ইসলাম সেলিমসহ ২৭ জনকে সভাপতিম-লীর সদস্য হিসেবে এবং সম্পাদকম-লী, কার্যনির্বাহী কমিটি ও জাতীয় পরিষদের সদস্যদের নামসহ বাংলাদেশ শান্তি পরিষদের নতুন কার্যকরী কমিটি ঘোষণা করেন রাশেদ খান মেনন এমপি। নতুন এই কার্যকরী কমিটির সভাপতি হিসেবে মোজাফ্‌ফর হোসেন পল্টু ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ইঞ্জিনিয়ার ড. আবুল কাশেমের প্রতি হাত তুলে সর্বাত্মক সমর্থক জানান সম্মেলনে উপস্থিত সকল প্রতিনিধি। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন