বৃহস্পতিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১৬

জাতির লক্ষ্য পূরণের সম্মেলন


জাতির লক্ষ্য পূরণের সম্মেলন

নজরুল ইশতিয়াক ॥ ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের এবারের সম্মেলন একটি অগ্নি-পরীক্ষা। ভবিষ্যত দেশ পরিচালনা,   বৈশ্বিক তথা এশিয়া-দক্ষিণ এশিয়ায় সামগ্রিক যোগযাত্রা, ২১-৪১ সালের লক্ষ্য ভিত্তিক বাংলাদেশ অনেকটাই নির্ভর করছে এবারের সম্মেলনের উপর। আগামী নির্বাচন পর্যন্ত এ কমিটিই দলকে সুসংগঠিত করে জনগণের আস্থা, ভালবাসা অর্জনে কাজ করবে। রাজনীতির নামে অতীতের যে ভয়াবহতা জাতিকে দেখতে হয়েছে তার পুনরাবৃত্তি  রুখে দেয়ার কাজটিও বর্তাবে দলটির নেতৃত্বের উপর। সময়ের  চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে রাজনীতিকে রাজনীতির জায়গায় ফিরিয়ে আনা, জনগণকে সাথে নিয়ে, জনগণের শক্তির উপর নির্ভর করে এগিয়ে যাবার কোন বিকল্প নেই। সেক্ষেত্রে সরাসরি বলা যেতে পারে নাজুক একটি পরিস্থিতির ঘুর্ণাবর্তে হাবুডুবু খাচ্ছে দেশের রাজনীতি। যার দায় দল হিসেবে আওয়ামীলীগ এড়াতে পারে না।
সম্মেলন নিয়ে নানা বিশ্লেষণ, মতামত পত্রপত্রিকায় প্রকাশ হচ্ছে। সকাল-বিকাল গভীর রাত পর্যন্ত হিসেব- নিকেষের বাড়াবাড়ি চলছে। লবিং-গ্রুপিং-তদবির চলছে জোরসে। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা রুগ্ন রাজনীতি, পকেট রাজনীতি, রেওয়াজের রাজনীতিই দলীয় অফিস থেকে আড্ডা আলাপচারিতায়। এমন কি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাচ্ছে পত্রপত্রিকায়, টিভি, রেডিওতে এসব রুগ্ন পর্যবেক্ষণই শোনানো হচ্ছে, দেখানো হচ্ছে। এমন কি কোন কোন পত্র-পত্রিকা নিজেদের মতো করে রীতিমতো পুর্ণাঙ্গ কমিটিই তুলে ধরছে। কোন্ নেতার সাথে কোন্ সাংবাদিকের ব্যক্তিগত পরিচয়, গোষ্ঠীগত যোগাযোগ রয়েছে তা স্পষ্টতই ফুটে উঠছে সংবাদচিত্রে। এ এক দারুন দৌঁড়ঝাপ প্রতিযোগিতা চলছে, চোখে না দেখলে অনুমান করাও কঠিন। কারো কাছে আবার পদ-পদবী পাওয়ার একমাত্র যোগ্যতা হচ্ছে গ্রুপিং। সেলফি, ফটোসেশন, স্থির ও ভিডিও চিত্রে নিজেদের বারবার দেখানোর মতো নিম্নমানের অসহায়ত্বও চোখে পড়ে। দলীয় সংবাদ সম্মেলন ও প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানগুলোতে চেয়ার দখল করে সস্তা উপস্থিতি দলটির এক শ্রেনীর নেতা কর্মীও করুণ দশাকে তুলে ধরে। দলের জন্য, দেশের জন্য, লক্ষ্য পুরণের রাজনীতির জন্য দলীয় ও নিজ নিজ অবস্থান থেকে তাদের যেন তেমন কিছু করার নেই, সব করে দেবেন শেখ হাসিনা। পদধারী এবং যারা পদে আসতে চান তাদের অনেকেরই ব্যক্তিগত, সামাজিক ইমেজ শূন্যের কোঠায়। এসব জানেন দলীয় প্রধান। বিশ্লেষকদের ভাষ্য তিনি একটি গুণগত মানের কমিটি উপহার দিবেন। জানা যাচ্ছে তারুণ্য নির্ভর কমিটিই হবে। ত্যাগী, পরীক্ষিত নেতাদের মূল্যায়ণ হতে যাচ্ছে। দলীয় প্রধান নিজেই কমিটি গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে সতর্কভাবে কাজ করছেন। আবেগ, বিরাগের উর্ধ্বে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন। অনেক চেনা মুখকে এবারে তিনি সাইডবারে বসিয়ে দিবেন এতে কোন সন্দেহ নেই। আবার সৎ, যোগ্যদের দলের মূল স্থানে আসন দিতে যাচ্ছেন। সুষ্পষ্টতই বলা যায় সম্মেলনে দরুন চমক অপেক্ষা করছে।

লক্ষ্যের পথে যেতে হলে ক্ষেত্র প্রস্তুত ও জনবল তৈরি করা দরকার সবার আগে। আজকের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে কালকের ফলাফল। আজ ও কালের ফারাক বুঝতে পারাটা  দূরদর্শিতা। আপাতদৃষ্টিতে মাঠ ফাঁকা দেখালেও তা বেশিদিন ফাঁকা থাকে না। ষড়যন্ত্রের রাজনীতিটাই এমন। কাচের ঘরে বসে কাপুরুষেরা একটার পর একটা ট্রাম কার্ড খেলতেই থাকে। অপেক্ষায় থাকেন, কেবলই অপেক্ষার প্রহর গুনেন। আওয়ামীলীগের মধ্যে যারা বলেন বিএনপি নির্বাচনে না এসে ভুল করেছে তাদের পান্ডিত্যের দুর্দশা দেখলে করুণা হয়। বিএনপি-কে আসতে দেয়া হয়নি কারণ তাদের মুরুব্বীরা বলেছিল নির্বাচন হবে না। বিএনপি নির্বাচনই চায় নি, অথচ সরকারী দলের নেতারা বলেন নির্বাচনে না এসে ভুল করেছে। ফলে পর্যবেক্ষণ বাস্তবতার আদলে নতুন কমিটি গঠনই দল হিসেবে আওয়ামীলীগের জন্য ফরজ হয়ে দাড়িয়েছে। যার প্রতিফলন দেখার অপেক্ষায় পুরো জাতি। ঘুনেধরা বস্তাপচা জরাজীর্ণ পশ্চাৎপদদের সরিয়ে রাখার সময় এসেছে। শৈথিল্যতা দেখানো হলে পরিণাম হয় ভয়াবহ, লক্ষ্য পূরণ হয় না। দেশপ্রেমিক জনগণ শেখ হাসিনার উপর আস্থাশীল। কারণ তিনি লক্ষ্য নির্ধারণ করে চলছেন। জনগণের আস্থা আর শেখ হাসিনার দূরদর্শিতা উভয়ই একটি নিবিড় যোগে পরিণত হয়েছে। একমাত্র তিনিই বাস্তবতা অনুধাবণ করেন। তার সামনে কোন্ কোন্ চ্যালেঞ্জ রয়েছে তা বোঝেন-জানেন। তিনি লক্ষ্য পুরণের জন্যই যুদ্ধপরাধীদের বিচার করছেন। প্রায় একক সিদ্ধান্তে বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচন করেছেন দেশী-বিদেশী ঘাতকের মুখে চুনকালি মেরে। বিশ্বব্যাংকের সাথে লড়ে নিজস্ব তহবিল থেকে পদ্মাসেতু করছেন। জ্ঞানভিত্তিক ডিজিটাল বাংলাদেশ বির্নিমাণের পথে এগিয়ে চলেছেন। তিনি বিনয়ী-কঠোর স্বজনপ্রীতির উর্ধ্বে নিয়ে গেছেন নিজেকে। মন্ত্রী পরিষদে দলীয় পদ-পদবীতে বহুক্ষেত্রে তিনি দূরদর্শিতার স্বাক্ষর রেখেছেন। চরিত্র বদলের রাজনীতিকে রুখে দিয়েছেন দৃঢ় দেশপ্রেমের অঙ্গীকারে। পর্যবেক্ষণ ও অনুসন্ধানে ধরা পড়ে দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায়শই যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। দলের সর্বোচ্চ বৈঠকে তা নিয়ে আলোচনা হয়। ইতোপূর্বে দলীয় পদ-পদবীতে এবং সরকারের মন্ত্রী পরিষদে তিনি এমন অনেককে এনেছেন যাদের নিয়ে পত্র-পত্রিকায় ও নিজ দলের নেতারাও কোনদিন আলোচনা করেননি। ফলে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে বলা যায় দেশরত্ন শেখ হাসিনা জাতির স্বপ্ন পূরণের দিক নির্দেশনাকে বাস্তব করে তুলবেন আসন্ন সম্মেলনে। বাস্তবতা অনুধাবন, পর্যবেক্ষণ-বিশ্লেষণই দিক্নির্দেশনা বয়ে আনে। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন