মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

দলবাজির থাবা থেকে মুক্ত হোক যুবশক্তি

দলবাজির থাবা থেকে মুক্ত হোক যুবশক্তি

সংলাপ ॥ এদেশে ঘুরে ফিরে ক্ষমতায় আসছে দুটো দল। ক্রমান্বয়ে দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে আওয়ামী লীগ, বিএনপি স্পষ্ট হয়ে উঠছে। ক্ষমতার মসনদে বসে এ দল দুটোর নেতা-পাতি নেতারা শক্তিমান হয়ে ওঠেন, ফুলে-ফেঁপে ওঠেন ব্যবসা-বাণিজ্যে। আর ওই ধারার সাথে মিশে ক্ষমতার ছোঁয়ায় বিপথগামী হচ্ছে দেশের যুবশক্তি।
মানুষ গড়ার কারিগরগণ মানুষ গড়ছেন না, গড়ছেন টাকা তৈরির মেশিন। দেশের বিদ্যাপীঠগুলো ক্রমেই হয়ে উঠছে বিত্ত-বৈভব বানানোর তীর্থস্থান। ছাত্র রাজনীতির লক্ষ্য হয়ে উঠেছে হত্যা-সন্ত্রাস-টেন্ডার বাণিজ্য। এখন ছাত্র রাজনীতি মানেই যেন সন্ত্রাস, জ্বালাও-পোড়াও। ছাত্রনেতা মানেই যেন সন্ত্রাসী, যেখান থেকে বের হয় অস্ত্রের আগুন। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি জেলা-উপজেলার বিভিন্ন কলেজগুলো নিয়ে প্রতিদিন খবর আসে পত্রিকার পাতায়। প্রত্যেকটা খবরেই ছাত্র আন্দোলনে দলবাজির থাবা হয়ে উঠছে প্রশ্নবিদ্ধ। সন্ত্রাস আর বীভৎসতার চিত্র দেখে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা আর ছাত্ররাজনীতির সাথে যুক্ত হতে চায় না। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় কি? ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করে দিলে কি সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে যাবে? বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা বিদ্যাপীঠগুলো চলবে শান্তির মধ্য দিয়ে? স্বস্থি আসবে?
সত্য হলো এই যে, ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করলেই সন্ত্রাস থামবে না, ক্ষমতার লোভ নিয়ন্ত্রিত হবে না। তরুণ ও যুবকদের মধ্যে মনুষ্যত্ব বোধ জাগ্রত না হলে সন্ত্রাসের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি হবে না, সন্ত্রাসের কবল থেকে মুক্ত হবে না বিদ্যাপীঠ ও যুবশক্তি। যুবশক্তির চিন্তার জগত প্রকৃত শিক্ষার আলোতে আলোকিত করতে হবে। তা না হলে অন্ধকার আরো বিস্তৃত হবে, বৃদ্ধি পাবে ক্ষমতা ও বিত্ত-বৈভবের লিপ্সা।
'৫২ থেকে শুরু করে '৭১ কিংবা স্বৈরশাসন-বিরোধী আন্দোলনে যুব শক্তির ভূমিকা অনস্বীকার্য। দেশের বিভিন্ন সঙ্কটময় মুহূর্তে ছাত্রনেতারা দেশের জন্য সংগ্রাম করেছেন, জীবন দিয়েছেন। তাঁদের রাজনীতির উদ্দেশ্য ছিল ছাত্রসমাজের উন্নয়ন, জাতির উন্নয়ন সর্বোপরি দেশের উন্নয়ন। ছাত্ররাজনীতির সে ইতিহাস এখন শুধুই স্মৃতি। এখন প্রায় প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আধিপত্য বিস্তার করা নিয়ে বিভিন্ন দলের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। আর তাদের এই সংঘর্ষের জন্য প্রাণ দিতে হয় সাধারণ ছাত্রদের। কেন এই আধিপত্য বিস্তার? এর উত্তর থেকেই আমরা ইদানীংকালের ছাত্রনেতাদের উদ্দেশ্য অর্থাৎ বর্তমান ছাত্ররাজনীতির উদ্দেশ্য জানতে পারবো। ছাত্রনেতারা ছাত্রদের স্বার্থে রাজনীতি করলে নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ হতো না কিংবা আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার হতো না। তাদের এই আধিপত্য বিস্তারের মূলে রয়েছে দলবাজি, ভর্তি বাণিজ্য, সিট বাণিজ্য, চাঁদা আদায়সহ অন্যান্য কিছু কারণ।

বাংলাদেশে সুস্থধারার ছাত্র ও যুব আন্দোলনের প্রয়োজন ফুরাবে না। ছাত্র-যুবকদের ফিরিয়ে আনতে হবে হারানো ঐতিহ্য। কিন্তু এজন্য প্রয়োজন দলবাজির থাবা থেকে মুক্ত হয়ে সুষ্ঠু সাংগঠনিক ভিতের উপর যুবশক্তিকে প্রতিষ্ঠিত করা।  

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন