বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৩

সংসদ অধিবেশন ও নির্বাচনে যোগ না দেয়া কোন্‌ ধরনের গণতন্ত্র ?



সংসদ অধিবেশন ও নির্বাচনে যোগ
না দেয়া কোন্‌ ধরনের গণতন্ত্র ?

সংলাপ ॥  নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হয়ে সংসদ অধিবেশনে যোগ না দেয়া, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নেয়া কোন্‌ ধরনের গণতান্ত্রিক অধিকার? এসব কি গণতন্ত্র-পরিপন্থী কাজ নয়?  একটি দেশে রাজনীতি করতে হলে সংবিধানের বাইরে কি যাওয়া যায়? নির্বাচিত সংসদ সদস্য হিসেবে রাষ্ট্রের সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করা অথচ সংশ্লিষ্ট এলাকা ও জনগণের সুখ-দুঃখের সাথী না হয়ে বরং আন্দোলনের নামে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে ভূমিকা রাখা কোন্‌ ধরনের রাজনীতি?
সংবিধান পরিবর্তন করতে হলে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় গিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের ভোট ছাড়া অন্য কোন উপায় আছে কি? প্রধান বিরোধী দল বিএনপি আসন্ন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায় এবং এর আগে নবম জাতীয় সংসদের অধিকাংশ আসনে এই দলের সদস্যদের অনুপস্থিতির ঘটনায় এইসব প্রশ্ন আজ অত্যন্ত জোড়ালোভাবেই দেখা দিচ্ছে দেশের সচেতন ও বিবেকবান মহলে। দশম সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিয়ে এবং নবম সংসদের অধিকাংশ আসনে অনুপস্থিত থেকে বিএনপি প্রমাণ করেছে যে, তারা সংবিধানকে থোরাই তোয়াক্কা করে।
নবম জাতীয় সংসদে ছিল মোট ৪১৮ কার্যদিবস, যা দেশের সংসদীয় ইতিহাসে রেকর্ড। বিল পাসের ক্ষেত্রেও এ সংসদ রেকর্ড করেছিল। মোট পাস হওয়া বিলের সংখ্যা ২৭১। তবে বিরোধী দলের অর্থাৎ, বিএনপির এক্ষেত্রে রেকর্ডটি ছিল  বিপরীত দিক দিয়ে। নবম জাতীয় সংসদে বিরোধী দল অনুপস্থিত ছিল ৩৪৬ কার্যদিবস, উপস্থিত ছিল মাত্র ৭৬ কার্যদিবস।
বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া জামায়াতী-হেফাজতীদের পক্ষে সরাসরি অবস্থান নিয়ে  অনেকবার সরকারকে পদত্যাগের আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন, কিন্তু নিজে এখনো সংসদে বিরোধী দলীয় নেতার পদ থেকে পদত্যাগ করেননি, তার দলের কোনো সদস্যও পদত্যাগ করেননি জাতীয় সংসদ থেকে। আন্দোলন-সংগ্রামে যে ত্যাগ স্বীকার করতে হয়, জনগণকে এর সাথে সম্পৃক্ত করতে, তাদেরকে কাছে টানতে যেভাবে জনগণের দাবি-দাওয়ার সাথে একাত্ম হতে হয় তার কোনো কিছুই এখন পর্যন্ত দেখাতে পারেনি প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। বরং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের দাবিতে বিএনপি-নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের যে আন্দোলন, তার চাইতে যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তির দাবীটি আরও অনেক বেশি জোড়ালো বলে তারা প্রমাণ করছেন তাদের তাবৎ 'রাজনৈতিক' কর্মকান্ডে। বিরোধী দলীয় নেত্রী ও তার দলের সমর্থন ও যোগসাজসে যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লা দেইল্লা রাজাকারদের মুক্তির দাবিতে ব্যানার-ফেষ্টুন, শ্ল্লোগান দিয়ে বিজয়ের মাসে কলঙ্কিত করা হয়েছে মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের স্মৃতিবিজড়িত পূণ্যভূমি ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে। তাদের মুখে ছিল নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবীর আন্দোলন, কিন্তু অন্তরে ছিল অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তির দিবাস্বপ্ন ! বিএনপির মতো একটি বড় দলের সহযোগিতা ও সমর্থন না পেলে যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তির দাবিতে কখনো এমন সাহস জামায়াত দেখাতো পারতো কি ? নিশ্চয়ই পারতো না।
পবিত্র কুরআনের ৫ নম্বর সূরার ৩২ নম্বর আয়াতে স্পষ্টভাবে বলা আছে,  যে ব্যক্তি কোনো মানুষকে হত্যা করলো, কোনো হত্যাকান্ড কিংবা পৃথিবীতে ফ্যাসাদ সৃষ্টির জন্য বিচারে শাস্তি বিধান ছাড়া, সে যেন গোটা মানবজাতিকেই হত্যা করলো'। অথচ গত দু'মাসে কতগুলো নিরীহ মানুষকে মরতে হলো! ২৪ অক্টোবর খালেদা জিয়া বললেন, আজ থেকে শেখ হাসিনার সরকার অবৈধ। কিন্তু তিনি বা তার দল বা জোটের কোনো সদস্য সংসদ থেকে পদত্যাগ করলেন না। ২৬ অক্টোবর সন্ধ্যায় দশম সংসদ নির্বাচন সম্পর্কে আলোচনা করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফোনে বিরোধী দলীয় নেত্রীকে ৬০-ঘন্টার হরতাল প্রত্যাহার করে গণভবনে আসার আমন্ত্রণ জানালে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়ে দিয়েছিলেন, হরতাল প্রত্যাহারের সুযোগ নেই। বিরোধী দলের সেই হরতালেই ঝরে যায় ১৯টি তাজা প্রাণ। এরপর থেকে সংসদ কার্যকর থাকা অবস্থায় সারা দেশে সহিংসতা চলতেই থাকলো। ২৪ অক্টোবরের পর থেকে আজ পর্যন্ত বিরোধী দলের অবরোধ হরতালের বলি হয়েছে প্রায় ১৭০ জন মানুষ। আহত হয়েছে শত শত। নিহতদের অধিকাংশই নিরীহ নিরস্ত্র মানুষ এবং সরকারি দল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সমর্থক।
এসব হত্যাকান্ডের দায় কে নেবে? বিগত পাঁচ বছরে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার মতো বহু ইস্যু বিরোধী দলের ছিল, সরকারের অনুগত বিভিন্ন মহলের দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করা গেলে বিরোধী দল আরও অনেক বেশি শক্তি সঞ্চয় করতে পারতো যা দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কাজে লাগানো যেতো। কিন্তু জনগণের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে কোনো কিছুই করতে দেখা গেলো না বিরোধী দলকে। কিন্তু জনগণকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়েছিল তা যখন বাস্তবায়ন করতে গেল তখনই তারা জামায়াত হেফাজতকে লেলিয়ে দিল সরকারের বিরুদ্ধে। খালেদা জিয়া সরকারের প্রতি আল্টিমেটাম দিলেন হেফাজতিদের অন্ধকার যুগের দাবি মেনে নেয়ার। কিন্তু সংসদ থেকে পদত্যাগ করার মতো সাহস দেখাতে পারলেন না। কিন্তু এরপর কোনো সংসদ অধিবেশনেও যোগ দিলেন না।
কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরকে কেন্দ্র করে আবারো নতুন করে প্রমাণিত হয়েছে যুদ্ধাপরাধীরা বাংলাদেশ নয়, পাকিস্তানের প্রতি দায়বদ্ধ, ওরা চিরদিনই পাকিস্তানের দালাল। যে কারণে পাকিস্তানের পার্লামেন্টে বাংলাদেশের আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব পাসের মতো ধৃষ্টতা তারা দেখাতে পেরেছে। তালেবানরা ইসলামাবাদে বাংলাদেশের হাই কমিশন উড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছে। তাই রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপিকে আরো বেশি শক্তি অর্জন করতে হলে নতুন করে ভেবে দেখার সময় এসেছে বলে মনে করছে জনগণের প্রতি বিশ্বাসী জনশক্তি। লাখো শহীদের তাজা রক্ত আর অপরিসীম ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে কেনা স্বাধীন বাংলাদেশে রাজাকার তথা পাকিস্তানপন্থীদের রাজনীতির দিন চূড়ান্তভাবেই শেষ হয়ে এসেছে। পাকিস্তানপন্থীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজনীয়তাও উপলব্ধি করছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মানুষেরা । নতুন করে গণজাগরণ সৃষ্টি হয়েছে           প্রজন্মের মধ্যে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন