কোটি কণ্ঠে ধ্বনিত হলো 'আমার সোনার
বাংলা....'
পাড়া-মহল্লায় প্রতিরোধ কমিটি গঠনের
ডাক
সংলাপ ॥ কয়েক মিনিটের জন্য থমকে দাঁড়িয়েছিল
বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা বাঙালি জাতি! এ সময় কোটি কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছে বাঙালির
প্রাণের সঙ্গীত - 'আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি...।' বুকে এক হাত রেখে অন্য
হাত উঁচিয়ে 'জাতীয় সঙ্গীত' গেয়েছেন সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ। যে যেখানে ছিলেন সেখানে
দাঁড়িয়ে গাইলেন মা-মাটি আর মাতৃভূমির অমোঘ বাণী। এত আবেগ! এত সুর আগে দেখেনি বাংলাদেশ।
সবাই
যেন এক কাতারে এসে আবারও শামিল হয়েছে। আবেগাপ্লুত গোটা জাতি। বীর বাঙালি আবারও জেগেছে।
স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক শক্তিকে জানান দিয়েছে সবাই - 'মুক্তিযুদ্ধের বাংলায় রাজাকারের
ঠাঁই নাই'।
স্বাধীনতার
৪২ বছর পর এমন আয়োজনে নতুন করে বিশ্বরেকর্ড গড়ল বাংলাদেশ। গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের
স্থান পেল এ আয়োজন। গত সোমবার বিকেল ৪:৩১ মিনিটে ঐতিহাসিক সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে এক
সুরে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে ওঠেন সমবেত জনতা। এর আগে তিন লাখের বেশি মানুষ যুদ্ধাপরাধী,
জামাত-শিবির ও সাম্প্রদায়িকতামুক্ত মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ গড়ার শপথ নেন। শত্রুমুক্ত
বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় ছিল সবার।
১৯৭১
সালের ১৬ ডিসেম্বর বিকেল ৪:৩১ মিনিটে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আত্মসমর্পণ করেছিল
পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ৯৩ হাজারের বেশি পাকিস্তানী
হানাদার বাহিনী মিত্র ও মুক্তিবাহিনীর কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করেছিল। এর মধ্যে দিয়ে
যাত্রা শুরু হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের। সেই শুভক্ষণকে পুনরায় যেন তুলে ধরা হলো। এর পর পরই বাংলাদেশসহ
গোটা বিশ্বে সমবেত কণ্ঠে গেয়ে ওঠে জাতীয় সঙ্গীত। 'বিজয়ের সূর্যোদয়, বাংলাদেশ বিশ্বময়'
স্লোগান নিয়ে বিজয় ২০১৩ উদ্যাপন কমিটি, গণজাগরণ মঞ্চ, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, বিজয়
৪:৩১ মঞ্চ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন মঞ্চ সম্মিলিতভাবে সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে
বিজয় দিবসের দিনব্যাপী জাতীয় উৎসবের আয়োজন করে।
এর
আগে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার আত্মসমর্পণের ঘটনার প্রেক্ষাপট বর্ণনা করেন এমিরিটাস অধ্যাপক
ড. আনিসুজ্জামান। এমিরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, এখন আর বসে থাকার সময় নেই। সকলে
মিলে এক হয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করতে হবে। আমরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি নতুন
প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করবে।
অধ্যাপক
জাফর ইকবাল বলেন, জামাতে ইসলামী রাজনৈতিক ভাবে নয়, সন্ত্রাসী কায়দায় সক্রিয় থাকায় তাদের
বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে আনন্দের বিজয়
দিবস এসেছিল ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। এরপর প্রতি বছর আমরা দিবস উদযাপন করেছি, এবারে
নতুন প্রজন্মকে যখন বিজয়ে অংশ নিতে দেখেছি তখন আমার মনে অনেক আনন্দ। '৭১-পর এবারের
বিজয় দিবস ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে। নতুন প্রজন্মসহ এবারের বিজয়ের অনুষ্ঠানে সকলের অংশগ্রহণ
ভিন্ন।
জাতীয়ভাবে
বিজয় উদযাপনের সূচনা করে জামাত-শিবিরের সহিংসতা প্রতিরোধে গ্রাম-গঞ্জে, পাড়া-মহল্লায়
প্রতিরোধ কমিটি গড়ে তোলার ডাক দিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের উপাধিনায়ক এ কে খন্দকার। তিনি
বলেন, গত তিন মাসে সারাদেশে রাজনীতির নামে জামাত-শিবির ও তাদের দোসরদের হিংস্র, ধ্বংসাত্মক
ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে শিশু ও নারীসহ শত শত সাধরণ মানুষ নির্মমভাবে নিহত হয়েছেন। জামাত-শিবির
ও মৌলবাদীদের রাষ্ট্র ও সমাজবিরোধী ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডে গত কয়েক মাসে হাজার হাজার
কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হয়েছে। দেশের অর্থনীতি পঙ্গুত্বের দিকে ধাবিত হচ্ছে। দেশের উৎপাদনশীলতাকে
নষ্ট করে বিভীষিকাময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে, এ যেন ১৯৭১-এর নতুন সংস্করণ। মুক্তিযুদ্ধের
এই সেক্টর কমান্ডার বলেন, সামপ্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে আর অপেক্ষা নয়। তাদের প্রতিহত
করার জন্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আমাদের উজ্জীবিত হয়ে তাদের আক্রমণের দাঁতভাঙ্গা জবাব
দিতে হবে। এখন আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ নতুন প্রজন্ম।
আজকের নতুন প্রজন্মের প্রতীকী নাম গণজাগরণ মঞ্চ। নতুন প্রজন্ম যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের
জন্য গণজাগরণ সৃষ্টি করেছে। তাই আমাদের পিছু ফেরার আর কোন সুযোগ নেই। মুক্তিযুদ্ধের
উজ্জীবনী শক্তি ধারায় আমাদের আগামীর ভবিষ্যত রচনা করতে হবে।
একটি
অসামপ্রদায়িক-গণতান্ত্রিক দেশের আকাঙ্খা তুলে ধরে এ কে খন্দকার বলেন, যে স্বপ্ন নিয়ে,
যে আকাঙ্খা নিয়ে আমরা দেশকে স্বাধীন করেছিলাম। আজ স্বাধীনতার ৪২ বছর পর দেখতে পাই সেই
সামপ্রদায়িক শক্তির মহা উত্থান। এখনই সামপ্রদায়িক শক্তির উত্থান রোধ করতে হবে। যুদ্ধারাধীদের
বিচার শুরু হয়েছে। একজনের রায় কার্যকর হয়েছে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, যুদ্ধাপরাধীদের
বিচারের রায় বাস্তবায়ন কর্মকা- অব্যাহত থাকবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত
আমাদের এ সংগ্রাম, এ আন্দোলন চলতেই থাকবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন