মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০১৩

বাঁধ ভাঙ্গো দুয়ার খোলো...



বাঁধ ভাঙ্গো দুয়ার খোলো...

সংলাপ ॥ ৩ ডিসেম্বর, আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয়: ‘বাঁধ ভাঙ্গো, দুয়ার খোলো, একীভূত সমাজ গড়ো'। একীভূত সমাজ গড়ার প্রণিধানযোগ্য বিষয় হলো সমাজ ও রাষ্ট্রের সকল স্তরে প্রতিবন্ধী মানুষের অংশগ্রহণ ও প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা। তাহলেই কেবল সম্ভব প্রতিবন্ধী মানুষের একীভূত সমাজ গড়া।
সমতা ও বৈষম্যহীনতা মানবাধিকারের মৌলিক উপাদান। আমাদের সংবিধানের নানান অনুচ্ছেদে এই অঙ্গীকারের কথা ব্যক্ত করা হয়েছে। সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্রেও প্রতিবন্ধীদের জনজীবন ও রাজনৈতিক জীবনে অংশগ্রহণ তথা গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সনদের ২৯ ধারায়ও। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন স্বীকৃতি দেয়
যে বাংলাদেশের সংবিধানে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবর্গের রাজনৈতিক অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা দিয়েছে তা সত্ত্বেও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অংশগ্রহণ ও প্রতিনিধিত্ব এখনও নগণ্য। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিশ্ব ব্যাংকের ২০১১ সালের জরিপ অনুযায়ী সারা পৃথিবীতে প্রতিবন্ধী মানুষ হচ্ছে শতকরা ১৫ জন। উল্লেখ্য যে, সত্তরের দশকে এই সংখ্যা ছিল শতকরা ১০ জন। সারা পৃথিবীতে যে হিসাব বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। বরঞ্চ দরিদ্র দেশ হিসেবে সংখ্যাটি আরো একটু বাড়তে পারে, কম হবে না। বাংলাদেশ বিশ্বের ১৪৭,৫৭০ কিলোমিটার এলাকার একটি ছোট্ট দেশ। জনসংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি। কাজেই বাংলাদেশেও প্রতিবন্ধী মানুষের সংখ্যা ১৫% ধরে নিলে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ২ কোটি ৪০ লাখ।
এ দেশের প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের জন্য সরকার ও বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা অনেক উদ্যোগ নিয়েছে। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে দেশে দেশে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর অধিকার সুরক্ষায় ও তাদের চাহিদা নিবারণের জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কৌশল, নীতিমালা, আইন, সনদ গৃহীত হয়েছে। ভাতা, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী উপবৃত্তি, সুদমুক্ত ঋণ, গণপরিবহনে সংরক্ষিত আসনসহ ভাড়ায় বিশেষ ছাড়, সরকারি হাসপাতালসমূহে চিকিৎসা সহায়তা, প্রশিক্ষণে ভর্তি কোটা, আবাসিক কোটা, সরকারি চাকরিতে বয়সসীমা, জাতীয় পরিচয়পত্রে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি নিবন্ধন ও প্রস্তাবিত প্রতিবন্ধী ব্যক্তি অধিকার আইনে প্রদেয় সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি নিবন্ধন ও পরিচয়পত্র প্রদর্শন অপরিহার্যতা উপলব্ধি করে প্রতিবন্ধী শনাক্তকরণ জরিপ কার্যক্রমে হাতে নিয়েছে বর্তমান সরকার যা প্রশংসার দাবীদার।
এ মুহূর্তে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রত্যাশা - মর্যাদাপূর্ণ কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কোটা নির্ধারণ ও তা বাস্তবায়ন এবং প্রয়োজনবোধে বয়স শিথিলযোগ্য করতে হবে। যানবাহন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিসহ সকল ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত করতে হবে।
আমাদের প্রত্যাশা বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী বান্ধব দেশ হবে, অনেকগুলো দেশের মানুষ মুগ্ধতা নিয়ে দেখবে। অশিক্ষা, কুশিক্ষা, কুসংস্কার, সামাজিক ও ধর্মীয় কারণে নানা বেড়াজাল পেরিয়ে প্রতিবন্ধীরা আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন দেখবেন। সাধারণ মানুষের মানবিক অনুপ্রেরণা এই মানুষগুলোকে বরাবরই এগিয়ে নিতে সহায়তা করবে।
বর্তমান সমাজ অগ্রগতির স্বার্থে, প্রতিবন্ধীদের সমাজের আর্থসামাজিক রাজনৈতিক অধিকার সুনিশ্চিত করতে হবে। সকলের ভাবতে হবে প্রতিবন্ধীরা সমাজের একটি বিরাট অংশ। এই অংশকে ফেলে রেখে সমাজ পূর্ণতা পেতে পারে না। প্রতিবন্ধী নাগরিকদের ক্ষমতায়ন ও অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে রাষ্ট্র, সমাজ ও সাধারণ নাগরিকদের।
গণতন্ত্র চর্চার উন্নয়ন এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অংশগ্রহণ এবং প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। যতদিন পর্যন্ত এদেশের প্রতিবন্ধী মানুষগুলো অধিকার সম্পর্কে সচেতন না হবে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে না পারবে, ততদিন এই দেশের গণতন্ত্রও হবে না সুসংহত। এ দেশে গণতন্ত্রের মূলমন্ত্র  হোক সকল মানুষের সমান অংশগ্রহণ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন