শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৩

রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার নিষিদ্ধ হোক



রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার নিষিদ্ধ হোক

* ‘প্রত্যেক দলই নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে সন্তুষ্ট সুতরাং ওদের কিছু কালের জন্য বিভ্রান্তিতে থাকতে দিন’ (২৩ : ৫২-৫৪)
* ‘যারা পারলৌকিকতার বিনিময়ে ইহজাগতিকতা খরিদ করে তাদের শাস্তি শিথিল করা হবে না এবং তারা সাহায্যপ্রাপ্তও হবে না’ ( : ৮৬)
* ‘যারা ধর্ম সম্বন্ধে নানা মতের সৃষ্টি করেছে বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে তাদের কোন কাজের দায়িত্ব আপনার নেই ( : ১৫৯)
দিগন্ত বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইসলামের ব্যবহারে আজ ইসলাম সমালোচিত হচ্ছে, নষ্ট হচ্ছে ধর্মের পবিত্রতা ইসলামের নামে রাজনৈতিক দল বানিয়ে তাকেই আল্লাহর দল বলে ঘোষণা দেয়া হচ্ছে ইসলামী দলগুলোর পাশাপাশি প্রধান দলগুলোও রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করছে ইসলামকে যে কোন আদর্শের যথেচ্ছ ব্যবহার সে আদর্শকে পঁচিয়ে দেয় ইসলামের ক্ষেত্রেও তা- হচ্ছে ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলো কুরআনের বিরুদ্ধে সামপ্রদায়িক বর্বরতার খেলা খেলছে, এবং রাষ্ট্রের সংবিধানকে তুড়ি মেরে সারা দেশে দাপাদাপি করছে দুঃখজনক যে রাষ্ট্রও সংবিধান লঙ্ঘনের রাজনীতি মেনে নিচ্ছে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো অসাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদী গণতন্ত্র উচ্ছেদ করে, দেশে সাম্প্রদায়িকতা ছড়াচ্ছে, ক্ষমতার লালসায় সৃষ্টি করছে অরাজকতা আর এদের নষ্টামির খেসারত দিচ্ছে দেশের সাধারণ মানুষ তাই এখন বাংলাদেশের রাজনীতি, বাঙালি জাতির অস্তিত্ব এবং ইসলামের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে একটি মাত্র প্রশ্ন - রাজনীতি কি ইসলামিক হতে পারে?
ইসলাম অর্থ শান্তি আর রাজনীতি হচ্ছে - রাজা হবার নীতি, কৌশল পদ্ধতি যারা রাজনীতি করে তারা প্রত্যেকেই রাজা হতে চায় রাজনীতিতে দলাদলি, হানাহানি, বিরোধী দল ব্যক্তির সমালোচনা, কুৎসা গুজব রটনা, পরস্পরের প্রতি বিষোদগার, ইত্যাদি থাকবেই কিন্তু কোন  ধর্মে এসব থাকতে পারে না একজন সফল রাজনীতিককে শেয়ালের মতো ধূর্ত আর সিংহের মতো হিংস্র হতে হয় কিন্তু একজন ধার্মিক ব্যক্তিকে হতে হয় নম্র, বিনয়ী, সত্যবাদী মুসলিম শব্দের অর্থ - শান্ত, ভদ্র যে ব্যক্তি শান্তি ধারণ, পালন লালন করেন তিনিই মুসলিম মুসলিমের লক্ষ্য রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল নয়, আল্লাহর নৈকট্য সন্তুষ্টি অর্জন তাই ব্যক্তিগত, দলীয়, বংশীয় স্বার্থে ইসলামের ব্যবহার কুরআনে সুস্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ হয়েছে এবং এজন্য কঠোর শাস্তির বিধান দেয়া হয়েছে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করা একটা ইহজাগতিক ব্যাপার আর আল্লাহর নৈকট্য লাভ পারলৌকিক রাজনীতিতেইসলামব্যবহারের লক্ষ্য হচ্ছে - ধর্মীয় আবেগ-অনুভূতিকে ব্যবহার করে ইহজাগতিক স্বার্থ সিদ্ধি করা কুরআন বলছে - ‘যারা পারলৌকিকতার বিনিময়ে ইহজাগতিকতা খরিদ করে তাদের শাস্তি শিথিল করা হবে না এবং তারা সাহায্যপ্রাপ্তও হবে না’ ( : ৮৬)
ইসলামী দলগুলো বলে, মহানবী (সা.) নাকি রাজনীতিক ছিলেন! মহানবীর (সা.) একনিষ্ঠ ভক্ত হযরত আবু জর গিফারি বলেছিলেন - ‘আমার লাশ যেন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত কোন ব্যক্তি স্পর্শ না করেমোহাম্মদ (সা.) রাজনীতি করেছেন এটা মেনে নিলে মেনে নিতে হয় যে ইসলাম কোন ধর্ম নয়, একটি রাজনৈতিক দল  কুরআন মতে রসুল (সা.) ছিলেন - স্পষ্ট সতর্ককারী (৩৮:৭০), বার্তাবাহক (:১৫৭) সুসংবাদদাতা (: ১৮৮) জ্ঞানময় কুরআনের শপথ করে আল্লাহ  বলেছেন যে, তিনি অবশ্যই প্রেরিতদের মধ্যে একজন (৩৬ : )  তিনি পথপ্রদর্শক সাহায্যকারী (২৫ : ৩২) কিন্তু রাজনীতিক অবশ্যই নন আল্লাহ  সুবহানুতায়ালা মোহাম্মদ (সা.)-কেহে রসুলবলে ডাক দিয়েছেন এটা কল্পনা করতে শরীর শিউরে উঠে যে, আল্লাহ সুবহানুতায়ালা মোহাম্মদ (সা.)-কেহে রাজনীতিকবলে ডাকবেন মোহাম্মদ (সা.) এঁর বিদ্রুপকারীরা তাঁকে পাগল, যাদুকর বলেছে কিন্তু বিদ্রুপ করেও কেউ কখনো তাঁকে রাজনীতিক  বলেনি  অথচ এখন একদল ক্ষমতালোভী মানুষ ক্ষমতার স্বার্থে আল্লাহর রসুলকে রাজনীতিক বানিয়েছেন আল্লাহ যাঁকে একবারও রাজনীতিক বলেননি মানুষ কেমন করে কোন্সূত্রে তাঁকে রাজনীতিক বলে অভিহিত করেন? এরা কারা? এরা কি মোহাম্মদ (সা.)-কে রাজনীতিক বলে তাকে সম্মান করছেন  না অসম্মান করছেন প্রশ্ন আজ বিদ্ধ করছে রসুল (সা.) ভক্ত মুসলিমদের বিবেক
কুরআন বলছে - ‘যারা ধর্ম সম্বন্ধে নানা মতের সৃষ্টি করেছে বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে তাদের কোন কাজের দায়িত্ব  আপনার নেই (:১৫৯) যারা ইসলামের নামে রাজনীতি করে কুরআন মতে তারা নবীর উম্মতই নয় মোহাম্মদ (সা.) এবং কুরআনকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করা অতি জঘন্য পাপ মোহাম্মদ (সা.) কোন দলের  স্বার্থে পৃথিবীতে আসেননি তিনি পৃথিবীতে এসেছেন সমগ্র মানবজাতির জন্য  আল্লাহ বলছেন - ‘(হে মোহাম্মদ) আমি তো আপনাকে সমগ্র মানব জাতির জন্য সুসংবাদদাতা সতর্ককারী করে পাঠিয়েছি, কিন্তু বেশির ভাগ মানুষ তা বুঝে না’ (৩৪ : ২৮)প্রত্যেক দলই নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে সন্তুষ্ট সুতরাং ওদের কিছু কালের জন্য বিভ্রান্তিতে থাকতে দিন (২৩ : ৫২-৫৪)
নবী (সা.)-এঁর তিরোধানের পর থেকেই আরবে ইসলামের রাজনৈতিক ব্যবহার এবং মুসলমানদের মধ্যে দলাদলি সংঘাত শুরু হয় রাজনীতির সাথে ধর্ম মিশ্রিত হলে সংঘাত অনিবার্য কারণ, রাজনীতিতে দলের বিরুদ্ধে দলের সমালোচনা, কুৎসা রটনা এবং বিষোদগার করা স্বাভাবিক ব্যাপার কোন রাজনৈতিক দলের নামের সাথে ইসলাম যুক্ত হলে এবং তা নিয়ে নির্বাচন ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হলে স্বাভাবিক কারণেই তা চরমভাবে বিতর্কিত সমালোচিত হবেই হবে অন্যদিকে, নির্বাচন ভোটের লক্ষ্য সৎ যোগ্য প্রার্থী বাছাই করা সেক্ষেত্রে সাধারণ ভোটাররা ইসলামের নামে আবেগতাড়িত হয়, তাই সৎ যোগ্য প্রার্থী বাছাই করতে পারে না
সামপ্র্রদায়িক রাজনীতির ধ্বজাধারীরা ধর্মকে পণ্য হিসেবে বিক্রি করে ইসলামের মতো মহান ধর্মকে ধর্ম ব্যবসায়ী রাজনীতিকরা পরিণত করেছে তাদের আত্মস্বার্থ হাসিলের ধর্মে বাংলাদেশে ধর্ম ব্যবসা এখন সবচেয়ে বড় ব্যবসা অথচ এদেশের মানুষ বারবার প্রতারিত হয়েছে ধর্মব্যবসায়ীদের হাতে সমপ্রতি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো সংবিধানে আল্লাহর প্রতি আস্থা বিশ্বাস ফিরিয়ে আনার জন্য লাঠি নিয়ে রাস্তায় নেমেছে আমরা জানি যে, ধর্মের প্রতি আস্থা বিশ্বাস লাঠির জোরে স্থাপন করানো যায় না কাজেই বুঝতে অসুবিধে হয় না যে, ইসলামী দলগুলো আল্লাহর প্রতি আস্থা বিশ্বাস-কে রাজনৈতিক ইস্যু বানিয়ে বিশৃঙ্খল অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায় দুঃখজনক যে, নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে এসব দল মসজিদ মাদ্রাসাগুলোকেও যথেচ্ছ ব্যবহার করছে এবং সরকারও এতে কোন বাধা দিচ্ছে না এমনকি সরকারি দলও সংবিধানে বিসমিল্লাহ এবং রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বজায় রেখে ধর্মকে ব্যবহার করছে রাজনৈতিক স্বার্থে সরকারি দলও ভাবছে সংবিধানে বিসমিল্লাহ রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম না থাকলে ভোট কমে যাবে! এগুলোও নিঃসন্দেহে রাজনীতিতে ধর্ম ব্যবহারের অংশ এতে করে বাংলাদেশের সরকারিদল এবং অন্যান্য প্রায় সবগুলো রাজনৈতিক  দলের দেউলিয়াত্ব পশ্চাৎপদতাই প্রমাণিত হয়
রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার চলতে থাকলে বাংলাদেশ তথা গোটা বিশ্ব ধ্বংস হয়ে যেতে পারে মারাত্মকভাবে অবনতি ঘটতে পারে আন্তঃসাম্প্রদায়িক সম্পর্কের এমনকি বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীদের পরস্পর বিরোধী গোষ্ঠীর দ্বন্দ্বও পৃথিবীকে এক নারকীয় অবস্থার দিকে নিয়ে যেতে পারে পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার রোধে মানব সমাজ ক্রমান্বয়ে সচেতন হয়ে উঠছে কিন্তু ধর্মের অপপ্রয়োগ নিয়ন্ত্রণে দৃষ্টিগ্রাহ্য কোনো উদ্যোগ নেই, বরং বিশ্ব জুড়েই ধর্মের অপব্যাখ্যা উগ্রবাদকে উস্কে দিচ্ছে একশ্রেণীর ধর্মবেত্তা এই অপকর্মের সঙ্গে সরাসরি জড়িত পৃথিবীর প্রতিটি ধর্মের উদ্ভব হয়েছে মানবতার পতাকাকে সামনে রেখে অথচ সেসব ধর্মের অপব্যাখ্যার কারণে মানবতাবাদ নির্বাসনে যেতে বাধ্য হচ্ছে
সুতরাং, সিদ্ধান্ত হলো - কুরআনের নিষেধাজ্ঞা ইসলামের রীতি-নীতিকে উপেক্ষা করে যারা ইসলামকে রাজনীতিতে ব্যবহার করছে তারা ধর্ম মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করছে এসব অপরাধীদের ব্যাপারে নবী মোহাম্মদ (সা.) এর আদেশ হলো - ‘যে কেহ কাউকে অপরাধরত দেখবে তৎক্ষণাৎ তাকে হাত তথা বলপ্রয়োগ করে হলেও তা থেকে বিরত করবে, আর যদি সে ক্ষমতা না থাকে তাহলে মুখে বারণ করবে, আর তাও যদি না পারে, তাহলে অপরাধকারীকে মনে মনে ঘৃণা করবে, এটা হলো দুর্বল ঈমানের পরিচয়অর্থাৎ অপরাধীকে যে অন্ততঃ ঘৃণা করে না, ধরে নিতে হবে তার কোন ঈমানই নেই
গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহারকে প্রতিরোধ বা ঘৃণা করতে হলেও ধর্ম সম্পর্কে জানতে হবে বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষই নিজ ধর্ম ভালোভাবে জানে না না জেনেই যান্ত্রিকভাবে মানুষ ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালন করে তাই ধর্মব্যবসায়ী রাজনীতিকরা ধর্ম নিয়ে খেলার অবাধ সুযোগ পাচ্ছে এবং নিজেদের প্রয়োজনে ধর্মকে বিকৃত করে অন্যের সামনে উপস্থাপন করতে পারছে সাধারণ মানুষের এই অজ্ঞতার সুযোগে একদিকে ধর্ম বিকৃত হচ্ছে, অন্যদিকে সামপ্রদায়িক বিদ্বেষ ক্যান্সারের মতো ছড়িয়ে পড়ছে
ইসলামসহ সব ধর্মেরই মূল বাণীশান্তি সকল ধর্মশাস্ত্রের সারোৎসার - মানবতা মানুষের মধ্যে যেসব গুণাবলি থাকলে মানুষকে মানুষ বলা যায় তা- মানুষের ধর্ম মানব জীবনের নানা সমস্যার সমাধানের জন্যই ধর্মের উৎপত্তি ধর্ম হচ্ছে ব্যক্তি সমাজ জীবনে নীতি-শৃঙ্খলা মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার প্রেরণা ধর্ম মানবতার জন্য, ব্যক্তি বা গোষ্ঠীস্বার্থের জন্য নয় সকল ধর্মীয় বিধিবিধান আচার-অনুষ্ঠানে রয়েছে মানবকল্যাণ এবং শান্তি লাভের দিকনির্দেশনা ধর্মের এই মূল বাণী সাধারণ মানুষ বুঝে না তাই ধর্মভিত্তিক রাজনীতির মাধ্যমে ধর্মীয় বিভাজন সৃষ্টি হচ্ছে, মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে জঙ্গিবাদ সামপ্রদায়িক রাজনীতিকরাই ডেকে আনছে সন্ত্রাসবাদ; রক্তপাত, হত্যা মানবাধিকার লংঘন করছে এবং ঘটাচ্ছে নানারকম পৈশাচিক কর্মকা-  যা রাষ্ট্রীয় বৈশ্বিক শান্তিকে ধ্বংস করছে
প্রকৃত মুসলিম হিসেবে বিশ্ব মানব হতে হলে আমাদেরকে প্রথমে বাঙালি হতে হবে বাংলার হিন্দু, বাংলার বৌদ্ধ, বাংলার খ্রিষ্টান, বাংলার মুসলমান, আমরা সবাই বাঙালি’ - মুক্তিযুদ্ধের এই অসামপ্রদায়িক চেতনায় ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে নবরূপে উত্তীর্ণ হতে হবে বাঙালি জাতিকে স্মর্তব্য, স্বাধীনতা সংগ্রামে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ত্যাগ কোন অংশেই কম ছিল না  পাকিস্তানি বাহিনী অনেক ক্ষেত্রে বাঙালি মুসলমানদের রেহাই দিলেও হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টানদের রেহাই দেয়নি যে স্বাধীন মানচিত্রে আজ আমরা চলাচল করছি, সেই মানচিত্র নির্মাণের পেছনে আছে হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খৃষ্টান সকল সম্প্রদায়ের আত্মত্যাগ তাই এই দেশে আমরা যদি জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে সকল মানুষের নিরাপত্তা ধর্ম পালনের অধিকার দিতে না পারি তাহলে তা হবে শহীদদের আত্মত্যাগের সাথে চরম প্রতারণা
মহান মুক্তিযুদ্ধকে তখনই সম্মান জানানো যাবে যখন মুক্তিযুদ্ধের মৌল চেতনাকে প্রতিষ্ঠিত করা যাবে মুক্তিযুদ্ধের সেই চেতনা হচ্ছে - ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রগঠন রাষ্ট্র সকল মানুষের কথা বিবেচনা করে বলেই রাষ্ট্রের কোনও ধর্ম থাকে না রাষ্ট্রের ধর্ম হওয়া উচিত জনগণের নিরাপত্তা, জনগণের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা লক্ষ্য বাস্তবায়নে রাষ্ট্রকে ধর্মনিরপেক্ষ হতেই হবে রাষ্ট্র ব্যক্তি মানুষের ধর্মপালনে যেমন বাধা দেবে না তেমনি কোন ধর্মের পৃষ্ঠপোষকতাও করবে না যে কোন ব্যক্তি যে কোন ধর্ম পালনের ক্ষেত্রে পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করবে এমনকি কোন ধর্ম পালন না করার স্বাধীনতাও প্রত্যেক ব্যক্তির থাকবে এই ধর্ম নিরপেক্ষ নীতি গৃহীত হলেই কেবল সমাজে শান্তি আসতে পারে সব মানুষ এক ধর্ম পালন করবে এটা ভাবাই যায় না এমনকি ইসলাম ধর্মও আজ এক ধর্ম নেই পরস্পরবিরোধী ৭৩টি সমপ্রদায়ে বিভক্ত হয়েছে ইসলাম এবং এসব সম্প্রদায়ও নিজেদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সংঘাতে লিপ্ত রয়েছে ইসলাম ধর্মের ভিত্তিতে যেসব রাজনৈতিক দল গড়ে ওঠেছে তাদের আদর্শ অনুসৃত নীতিও এক নয় এসব সমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা এবং ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র গঠন করা
এই লক্ষ্যে, প্রথমে মুসলমানদের মধ্যে এই বোধের জাগরণ জরুরি যে, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রই প্রকৃত অর্থে ইসলামী (শান্তির) রাষ্ট্র মানুষে মানুষে ভেদাভেদ সৃষ্টি করার কোন পরিকল্পনা আল্লাহ তায়ালার নেই শত অত্যাচার নির্যাতনের পরও মক্কা বিজয়ের পর রসুল (সা.) মক্কায় বসবাসকারী বিভিন্ন ধর্মবিশ্বাসী এবং মূর্তিপূজকদের নিয়ে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র গঠন করেছিলেন মক্কা বিজয়ের পর তিনি সকলের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছিলেন হযরত হামজার প্রতি চরম নৃশংসতা সত্ত্বেও তিনি ক্ষমা করেছিলেন হিন্দাকে মক্কা বিজয়ের পরদিন খুসাআ গোত্রের এক ব্যক্তি এক মূর্তিপূজারীকে হত্যা করলে রসুল (সা.) রাগান্বিত হয়ে ঘোষণা করেন - ‘যে কেউ আল্লাহ শেষ বিচারের দিনে বিশ্বাস করে তার পক্ষে এখানে রক্তপাত করা বৈধ নয় এটি আমার পূর্বেও বৈধ ছিল না, আমার পরেও বৈধ হবে নাহুদায়বিয়ার সন্ধিও একটি বড় প্রমাণ যে, মক্কার বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের নিয়ে রসুল (সা.) ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র গঠনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন মক্কা বিজয়ের পর  যে সব আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে তাতেও রয়েছে দ্বন্দ্ব-সংঘাতের পরিবর্তে সমন্বয়ের সুর কুরআন বিশ্লেষণেও ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ছবিই প্রতিভাত হয় সুরা বাকারার ১৪৩ নং আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদেরকে একটি মধ্যপন্থী ন্যায়পরায়ণ জাতি হিসেবে গঠন করতে চেয়েছেন মধ্যপন্থাই ইসলামের মূল কথা একমাত্র ধর্মরিপেক্ষ রাষ্ট্রই মধ্যপন্থী রাষ্ট্র হতে পারে
সুতরাং, ‘ধর্মনিরপেক্ষতাবাস্তবায়িত হোক নিষিদ্ধ হোক রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার তাহলে নিঃসন্দেহে বাঙালি জাতি মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে, হাজার বছরের ঐতিহ্যে জাতি-ধর্ম-বর্ণ সম্মিলিতভাবে বেঁচে থাকার প্রয়াস সফল সার্থক হবে

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন