শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৩

বর্তমান ও সংলাপ



বর্তমান সংলাপ

শাহ্মোঃ লিয়াকত আলী বর্তমান সংলাপহাক্কানী মিশন বাংলাদেশ হতে প্রকাশিত সাপ্তাহিক পত্রিকা বর্তমান সংলাপ শব্দ দুটি নিয়ে আমার ভাবনা অনুভুতি কি লেখায় তারই কিছুটা সার সংক্ষেপ তুলে ধরার চেষ্টা করবো আবর্তনরত যা কিছু তাই কি বর্তমান? তাহলে প্রশ্ন ওঠে বর্তমান বলতে কি বুঝায়? সেদিকে দৃষ্টিপাত করতে গিয়ে প্রথমেই আসে আবর্তনরত আছে এমন কোন্কোন্বিষয়ের কথা আমরা জানি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের দিকে লক্ষ্য করলে কি দেখা যায়? আমরা সূর্যোদয়ের সাথে সাথে একটি সকাল পাই, আবার সূর্য্যের পৃথিবীর আবর্তনের সাথে সাথে একটি দুপুর, একটি সন্ধ্যা একটি রাত্রি এমনিভাবে আসে আবার একটি সকাল এবং এমনিভাবে বার বার আমাদের জীবনে সকাল, দুপুর, দিবা-রাত্রের আবর্তন হয়ে থাকে একইভাবে বাংলার আবহমান জলবায়ুর প্রভাবে সৃষ্ট গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত, বসন্তের ষড় ঋতু বাংলাকে আবর্তন করে থাকে প্রতি বছর আপেক্ষিক বিচারে সময়ের আবর্তনের ধারা প্রতি মুহুর্তেই প্রভাবিত করছে আমাদের জীবনকে তথা বাংলার জনপদকে জীবন পরিসরে সময়ের আবর্তনের ধারাকেই আমরা কখনও ক্ষণ, কখনও দিবা-রাত্রি, কখন বা মাস বছর হিসেবে গণনা করে থাকি তাই বলা যায় প্রত্যক্ষ ব্যক্তির জীবন তথা জন্ম থেকে মৃত্যুর ব্যবধানই হল ক্ষণ, দিন, মাস বছর ইত্যাদি সময় আবর্তনের সমাহার প্রশ্ন উঠতে পারে কে এই সময়? যে অহর্নিশি জীবন পরিসরে আবর্তনরত বিচিত্র প্রভাবশালী সত্ত্বা
লক্ষ্য করলে দেখা যায়, ব্যক্তির জীবনে অনুভূত ভোরের প্রভাব দুপুরের প্রভাব থেকে ভিন্ন, আবার রাতের প্রভাব দিবসের প্রভাব থেকে ভিন্ন হয় একইভাবে ব্যক্তির জীবনে গ্রীষ্মকাল অপেক্ষা শীতকালের প্রভাব ভিন্ন এমনকি বছরের প্রতিটি ঋতুর প্রভাবই ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে অর্থাৎ জীবনের প্রতিটি স্তরেইবর্তমান শক্তিভিন্ন ভিন্ন বিচিত্র মান সম্পন্ন
আবর্তনরত ভিন্ন ভিন্ন মান সম্পন্ন সময়ের প্রভাবই ব্যক্তি জীবনেবর্তমান শক্তিহয়ে আসে এবং ব্যক্তি বর্তমান শক্তির বিচিত্র রূপ-রস স্বাদ-গন্ধ ইত্যাদির অনুভূতি আস্বাদন করে থাকে
অন্যভাবে বলা যায় আবহমান প্রকৃতির পরিবেশে ব্যক্তির মাঝে নানান বৈচিত্রময় মান-সম্পন্ন প্রভাবের রসদ সম্ভার নিয়ে আবর্তনশীল যে শক্তি, সে শক্তিই হল ব্যক্তির নিকট সদা বিদ্যমান- তথা জীবন্তবর্তমানশক্তি
উজ্জীবিত বর্তমান শক্তির আবর্তন থেকে যে স্পন্দনের  উদ্ভব হয় সে স্পন্দন থেকেই সঞ্চারিত হতে থাকে আমাদের জীবনের প্রতিটি স্তরের জীবনীশক্তি ফলশ্রুতিতে আমাদের চিন্তাজগৎ হয় উদ্ভাসিত, কর্মক্ষম আত্মবল সম্পন্ন
তাই বলা যায়, ব্যক্তি তার চিন্তাজগতে যতক্ষণ বর্তমান শক্তির আবর্তনে বলীয়ান থাকে ততক্ষণই সে জীবন চলার পথে সাহসিকতার সাথে আস্থাপূর্ণ নিশ্চিন্ত আনন্দঘন জীবনের সন্ধান লাভ করতে সক্ষম হয়
বর্তমান শক্তির আবর্তন কেবল সময় পরিবেশেই নয় বরং গবেষণায় দেখা গেছে বিশ্ব ব্রম্মান্ডের সর্বত্রইবর্তমান শক্তিরস্বক্রিয়তা বিদ্যমান থাকে
কোন কারণে ব্যক্তির চিন্তাজগৎ বর্তমান শক্তি আশ্রয়ী হতে না পারলে ব্যক্তি ক্রমেই বাস্তবতা থেকে দূরে সরে যায় এবং জীবন চলায় সফলতার পথে পথ চলতে পারে না
বিশ্ব ব্রম্মান্ডের সৃষ্টিরাজির গবেষণায় দেখা গেছে সৃষ্ট জগতের রবি, শশী গ্রহ তারা সব কিছুই বর্তমান শক্তির শক্তিতে আবর্তনরত আছে অন্যদিকে তারা সৃষ্টিরাজির মাঝে যে সকল মৌল সত্তা তথা অনু-পরমানুর সন্ধান লাভ করেছেন সে সব মৌল সত্তার আবর্তনের কার্যক্রমে পরম সত্তাই বর্তমান থাকে
পরম সত্তার গুণাবলীর সমন্বয়েই গঠিত সৃষ্টিরাজির সকল ক্ষুদ্র বৃহৎ সত্তা সৃষ্ট জগতের বৃহৎ সত্তা ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র সকল সত্তার মাঝেই রয়েছে পরম সত্তার সঞ্চারণশীলতা পরম সত্তাই হল অবিনশ্বরবর্তমান শক্তি
শক্তিকেই কখনও ব্রম্মা কখনও বিষ্ণু কখনও শীব কখনও ঈশ্বর কখনও স্রষ্টা নামে নামকরণ করেছে বিভিন্ন জনে শাস্ত্রে সত্তাকেই সদা বর্তমান বলে উল্লেখ করা হয়েছে
* সকল কিছুই ধ্বংস হবে কেবল তোমার প্রভু ইশ্বরই বর্তমান থাকিবে (সুরা রহমান)
* তোমার প্রভুর স্মরণই তোমার অন্তরকে সুপ্রসন্ন করে থাকে (আল কুরআন)
* প্রত্যেক ব্যধি দুর করার ব্যবস্থাপত্র আছে, অন্তরের ব্যধি পরিষ্কার করার উপায় হলো একমাত্র প্রভুর স্মরণ
উপরের আলোচনায় বলা হয়েছে জীবনের সকল শক্তির যোগানদাতা প্রভুশক্তিই হলো বর্তমানশক্তি যাঁর সাহায্য ছাড়া কারও পক্ষে কোন কর্ম করা সম্ভব নহে জগতের অধিকাংশ মানুষই তার চিন্তাজগতে বর্তমান প্রভুশক্তিতে নির্ভর না করে অন্য কিছুর উপর নির্ভর করে কর্ম করে থাকে ফলে ব্যক্তি পবিত্র আনন্দঘন জীবনের স্বাদ গ্রহণ থেকে বঞ্চিত হয়
এবারবর্তমান সংলাপএর পরবর্তী শব্দসংলাপনিয়ে আমার ভাবনা সংক্ষেপে তুলে ধরছি
সংলাপ শব্দটিকে সম+আলাপ দুটো অংশে ভাগ করে দেখলে যা পাওয়া যায় তা হলো - যখন ব্যক্তি যে কর্ম করে ব্যক্তির কর্মের সে পর্যায়ের আলাপকেই সংলাপ হিসেবে গণ্য করা যায়, কিন্তু ব্যক্তি যা করেনি সে বিষয়ে অতিরঞ্জিত কিম্বা বানোয়াট আলোচনাকে কখনই সংলাপ বলা যেতে পারে না
বাস্তবে দেখা যায় অধিকাংশ মানুষই সঠিকভাবে কর্ম না করে কিম্বা কর্মে ফাঁকি দিয়ে এসে নিজেকে জাহির করা পছন্দ করে অনেক পরীক্ষার্থী পড়ালেখা ঠিকমতো না করে নকল করে পাস করেই নিজেকে সমাজের কাছে জাহির করতে দেখা যায় কাজে ফাঁকি দিয়ে বা সঠিকভাবে কর্ম না করে নিজেকে জাহির করার জন্য যে আলাপচারিতা, তা ব্যক্তির সম-পর্যায়ের সঠিক আলাপ নহে তাই ব্যক্তির জীবনের এধরনের আলাপকে সংলাপ বলা যায় না
আমাদের অনেকেই দৈনন্দিন জীবনে যে কাজ করি সে কাজে একাগ্র না হয়ে অন্য কিছু চিন্তা করতে করতে কাজ করে থাকি যেমন বাথরুমে গোসল করার সময় সেখানে রান্নাঘরের কথা চিন্তা করলে কিম্বা রান্নাঘরের কাজ করার সময় জামা কাপড়ের বিষয় চিন্তা করলে কর্মে একাগ্রতা থাকেনা এভাবে একাগ্রতাহীন ভাবেই আমাদের জীবনে রান্নাঘরে বাথরুমের চিন্তা, খাওয়ার সময় গালগপ্প ইত্যাদি করা হয় ফলে একদিকে যেমন কর্মে বর্তমানের আশ্রয়ে থাকা হয় না, অন্যদিকে একাগ্রতাহীনভাবে কর্ম করেই নিজেকে মিথ্যাভাবে জাহির করার আলাপচারিতা করে থাকি ব্যক্তির এধরনের অসংলগ্ন আলাপচারিতা যেমন বর্তমান বিবর্জিত, তেমনই অসম-আলাপ তাই জীবনের এধরনের আলাপ কখনই বর্তমান সংলাপের পর্যায়ভুক্ত হতে পারে না ব্যক্তির ধরনের সংলাপ হলো মিথ্যাচার এবং নিজের সাথে নিজের প্রতারণার সামিল তাই বলা যায়- স্রষ্টা বিবর্জিত কর্ম চিন্তার সংলাপকে কখনইবর্তমান সংলাপবলা যায় না সাপ্তাহিকবর্তমান সংলাপ জাতীয় মিথ্যাচার থেকে বিরত থাকতে সাধনায় রত তাইবর্তমান সংলাপঘোষণা করতে পারে - “আমরা নিরপেক্ষ নই-সত্যের পক্ষে 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন