মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর, ২০১৩

৩ নভেম্বর ইতিহাসের কলঙ্কিত দিন



৩ নভেম্বর ইতিহাসের কলঙ্কিত দিন

সংলাপ ॥ ৩ নভেম্বর বাঙালি জাতির ইতিহাসে একটি কলঙ্কিত দিন। ১৯৭৫ সালের এই দিন ভোরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে চার জাতীয় নেতাকে সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। ঢাকা জেলে নিহত এই চার মহান জাতীয় নেতা হচ্ছেন- স্বাধীনতাযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, মন্ত্রী এম মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামরুজ্জামান।
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর চার জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, এএইচএম কামরুজ্জামান এবং ক্যাপ্টেন মনসুর আলীকে গ্রেপ্তার করে কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠায় তৎকালীন সরকার। ১৫ই আগস্টের নির্মম হত্যাকান্ডের পর তিন মাসেরও কম সময়ের মধ্যে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সেলের অভ্যন্তরে জাতীয় এ চার নেতাকে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার সবচাইতে ঘৃণিত বিশ্বাসঘাতক সদস্য হিসেবে পরিচিত এবং তৎকালীন স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট খন্দকার মোস্তাক আহমদের প্ররোচনায় এক শ্রেণীর উচ্চাভিলাসী মধ্যম সারির জুনিয়র সেনা কর্মকর্তা এ নির্মম হত্যাকান্ড ঘটায়। দেশের এই চার শ্রেষ্ঠ সন্তানকে ১৫ই আগস্টের হত্যাকান্ডের পর কারাগারে পাঠিয়ে ষড়যন্ত্রকারীরা প্রথমে গুলি এবং পরে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। জাতীয় এ চার নেতা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি সামরিক জান্তার হাতে আটক বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দান করেন। বঙ্গবন্ধুর আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা ঘোষণার পর পরই পাকিস্তানের সামরিক জান্তা ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুকে ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করে। পরে দীর্ঘ নয় মাস সৈয়দ নজরুল ইসলাম যুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সরকারের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাজউদ্দিন আহমেদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বঙ্গবন্ধুর অপর ঘনিষ্ঠ সহযোগী এএইচএম কামরুজ্জামান ও ক্যাপ্টেন মনসুর আলী আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনার ক্ষেত্রে নীতি ও কৌশল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, মনসুর আলী ও এএইচএম কামরুজ্জামান শুধু বড় মাপের রাজনৈতিক নেতাই ছিলেন না, সামাজিক ও ব্যক্তি জীবনেও তারা ছিলেন অসাধারণ মানুষ। তাদের হত্যাকান্ডের বিচার করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। তবে দেশের রাজনীতিকরাও তাদের নৈতিক দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। এ হত্যাকান্ডের পেছনের ষড়যন্ত্রে কারা জড়িত ছিল, সে ব্যাপারে রাজনীতিকদের উচিত ছিল ব্যাপক অনুসন্ধান করা এবং সত্য খুঁজে বের করা। সেই কাজটি তাদের রাজনৈতিক সহকর্মী ও সহযোগীরা এখনো করতে পারেনি। বাংলাদেশের রাজনীতিকদের এ জন্য ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।
আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য চারনেতার হত্যার বিচার হওয়া জরুরি। জাতি আশা করে জাতীয় চারনেতার হত্যার সুষ্ঠু বিচার এদেশে সম্পন্ন হবে। জাতি হত্যার কলঙ্ক থেকে মুক্তি চায়। খুনিদের শাস্তি চায়। সেই সঙ্গে হত্যা ও নৃশংসতাকে যারা উৎসাহ দিয়েছে তাদেরও বিচার করা জরুরি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন