মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৩

অর্থনীতিতে ধর্মজীবীদের দাপট !



অর্থনীতিতে ধর্মজীবীদের দাপট !


ফাতেমা ॥ বাংলাদেশ জন্মের পরপরই মুক্তিযুদ্ধের ধারাটা বাধাগ্রস্থ হয়েছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকান্ডের মাধ্যমে। মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি সামরিক শাসনের ছত্রছায়ায় ধীরে ধীরে নিজেদের অবস্থান সংহত করতে থাকে। একদিকে ধর্মীয় আবরন তৈরী আর অন্যদিকে অর্থনৈতিক ভাবে একটা ভিত্তি তৈরীর প্রক্রিয়া শুরু করে। এই পুরো প্রক্রিয়াটা চলছিলো গোপনে এবং বিষয়টা তেমন আলোচনায় আসেনি। বিশ্বব্যাপী ভু-রাজনৈতিক অবস্থাও তাদের পক্ষে কাজ করেছিল। সমাজতান্ত্রিক শক্তির বিরুদ্ধে পুজিঁর যুদ্ধে পুজিঁবাদী শক্তির সাথে মৌলবাদের একটা আঁতাতে যেমন ওসামা বিন লাদেনের জন্ম হয়েছে - তেমনি বাংলাদেশে মৌলবাদের বিকাশ হয়েছে - কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী নাগরিকত্ব লাভ করে রাজনৈতিক কর্মকান্ড চালানোর সুযোগ পেয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিতরে মৌলবাদের নিজস্ব একটা অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যে কতটুকু গভীর হয়ে মূলধারার ভিতরে চলছে তা প্রথম উপস্থাপন করেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবুল বারাকাত। অধ্যাপক বারাকাতের গবেষনাপত্র থেকে জানা যায় - অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে মৌলবাদীদের কর্মযজ্ঞ চলছে। তার ফলাফল দেখি মৌলবাদীদের জঙ্গীত্ব ও জঙ্গী কর্মকান্ড চালানোর পিছনে মৌলবাদের ব্যঙ্কিং ব্যবস্থা কিভাবে সহায়তা করেছে। এদের প্রভাব এতো বেশী হয়েছে যে - খাদ্য রপ্তানীর নামে এরা মাদক পাচার করে দেশের রপ্তানীকে বিরাট ক্ষতির মুখে ফেললেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
অধ্যাপক আবুল বারাকাতের গবেষনাপত্র থেকে বিশেষ কয়েকটি বিষয় হলো:-
১) মৌলবাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা হলো “একটা অর্থনীতির ভিতরে আরেকটা অর্থনীতি।"
২) এই অর্থনীতির মূল লক্ষ্য হলো দেশের প্রচলিত অর্থনীতিকে প্রতিস্থাপন করে মৌলবাদী মতাদর্শের আলোকে একটা অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চালু করা।
৩) মৌলবাদের অর্থনীতি এনজিও থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা পর্যন্ত চালু করেছে।
৪) এই অর্থনীতির মোট পরিমান প্রায় ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
৫) এই ২০০ মিলিয়ন ডলারে থেকে যা লাভ হয় তার ১০% ব্যয় করা হয় রাজনৈতিক কর্মকান্ডে। যা বর্তমান অবস্থায় ৫ লক্ষ রাজনৈতিক কর্মীর বেতন ভাতার জন্যে যথেষ্ঠ।
৬) এরা সরকার এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলিতে তাদের অনুসারীদের বসিয়ে তাদের মতো করে সরকারের সিদ্ধান্তগুলো তৈরী করে।
৭) মৌলবাদীদের নিয়ন্ত্রণে আছে উন্নয়ন বাজেটের ৬% এবং রপ্তানী আয়ের ৪% ।
৮) দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি যেখানে ছিল ৪%-৫% সেখানে মৌলবাদের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ৭.৫%-৯%।
অধ্যাপক বারাকাত তার গবেষনাপত্রের এক পর্যায়ে মৌলবাদের অর্থনীতির সাথে জঙ্গীবাদের সম্পর্ক দেখিয়েছে এই ভাবে - জেএমবি মূলত মৌলবাদী মেইনস্ট্রীমেরই একটা শাখা হিসাবে সৃষ্টি হয়েছে। নিষিদ্ধ ঘোষিত হওয়ার আগ পর্যন্ত এরা মৌলবাদের অর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সকল প্রকার সহযোগিতা  পেয়েছে। এদের নেতাদের সবাই মূল ধারার মৌলবাদী দলের সাথে সম্পর্কিত ছিল। পত্রিকায় প্রকাশিত কিছু খবরের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষন করা হয়েছে - “পাঁচজন জেএমবি নেতা চট্টগ্রামের গ্রেফতার হয় - যারা জামাতের রাজনীতির সাথেও জড়িত। (দৈনিক প্রথম আলো সেপ্টেম্বর ২১, ২০০৫)। “জেএমবির ১৬০,০০০ টাকা ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন"  (৩১  আগস্ট ২০০৫ এর ডেইল স্টার)। “৩৪টি মৌলবাদী এনজিও বছরে ২০০ কোটি টাকা বাইরের অনুদান পায়। (৩১, আগস্ট ২০০৫, ডেইলি স্টার)। “জামাতের সাথে জঙ্গীদের সম্পর্ক প্রমানিত। (২২ সেপ্টেম্বর ২০০৫, ডেইলি স্টার)। “১০০০ এর বেশী জঙ্গী মুক্তি পেয়েছে - যাদের ৪০% জামাতে ইসলামী কর্মি। (২৬শে সেপ্টেম্বর ২০০৫)। “নভেম্বর ২৬ এর বোমা হামলার কয়েকদিন আগে সরকার করাচী ভিত্তিক এক এনজিওর বাংলাদেশ শাখার প্রায় ২০ মিলিয়ন টাকার ফান্ড অবমুক্ত করে সরকার। (ডেইলি স্টার, ডিসেম্বর ৫, ২০০৫)।
বাংলাদেশের মানুষের দারিদ্রতাকে ব্যবহার করে মৌলবাদীরা যে সমান্তরাল অর্থনৈতিক ব্যবস্থা তৈরী করেছে তার সাথে মুক্তবুদ্ধির মানুষদের সংঘাত অনিবার্য। দেশে অবাধে মৌলবাদী অর্থনীতি চলতে দিলে সকল প্রগতিশীল উদ্যোগ হুমকির মুখে পড়তে পারে। বাঙালি জাতিয়তাবাদ টিকিয়ে রাখতে হলে তাদের রুখতে হবে। এজন্য কেবল সরকারের উপর দায়িত্ব চাপিয়ে দিলে হবে না। দেশের প্রত্যেক প্রগতিশীল মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে তাদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে বর্জনের মাধ্যমে। 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন