শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৩

বাংলাদেশে জনগণ কারা?



বাংলাদেশে জনগণ কারা?

সংলাপ রাজনীতিকরা বলেন - জনগণ হরতাল করেছে কিংবা জনগণ হরতাল প্রত্যাখান করেছে কিংবা জনগণ এটা বরদাস্ত করবে না, জনগণ এটা প্রত্যাখ্যান করেছে, জনগণ এর জবাব দেবে ইত্যাদি প্রশ্ন ওঠে - জনগণ কারা? যারা ভোট দেয় তারা কি জনগণ? ভোট কি? ভোট গণরোষ থেকে বাঁচার জন্য শাসক শ্রেণীর কৌশল, অত্যাচারের আধুনিক হাতিয়ার জনগণ যে অত্যাচারিত হচ্ছে এটা যেন তারা বুঝতে না পারে এজন্য তাদেরকে একটা নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর ভোটবাক্সের সামনে দাঁড় করানো হয় জনগণ ভাবে যে তারা নেতা নির্বাচন করছে কিন্তু আসলে তা নয় নেতা ভোটের আগেই নির্বাচিত হয়ে থাকে জনগণ ভোটের প্রহসনে অংশ নেয় মাত্র  শোষণকে সহনশীল পর্যায়ে রাখার জন্য এর চেয়ে কার্যকর আর কোন পদ্ধতি এখন পর্যন্ত তৈরি হয়নি একদল পাঁচ বছর জনগণের ওপর অত্যাচার করে ফলে জনগণ অতীষ্ঠ হয়ে অন্যদলকে নির্বাচন করে নব নির্বাচিত দল আরো অধিক মাত্রায় অত্যাচার চালায় পাঁচ বছরে মানুষ অতীত অত্যাচারের কথা ভুলে যায় ফলে আবার পূর্ববর্তী দলকে ক্ষমতায় বসায় এভাবে জনগণ জ্বলন্ত উনুন থেকে ফুটন্ত কড়াইয়ে আবার ফুটন্ত কড়াই থেকে জ্বলন্ত উনুনে লাফালাফি করে ব্যবস্থার নাম দলতন্ত্র দলতন্ত্রে শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ভালো-মন্দ সব সমান যে কোন শিক্ষিত ব্যক্তিও দলের অন্তর্ভূক্ত হলে দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি দোষে দুষ্ট হয় তাই দলতন্ত্রে জনগণের কোন বিবেক-বুদ্ধি থাকে না মানুষ যখন কোন একটা দলের ছত্রছায়ায় আসে তখন বিবেক-বুদ্ধি দলের মধ্যে নিমজ্জিত হয়
দলতন্ত্রে জনগণের যারা নেতা তারা সাধারণতঃ স্বল্পে উত্তেজিত, স্নায়ু দুর্বল, বুদ্ধিভ্রম লোক এরা প্রায় উন্মাদের পর্যায়ভূক্ত এদের চিন্তা-ভাবনা যতই উদ্ভট অস্বাভাবিক হোক না কেন তারা তাদের চিন্তা-ভাবনাকে কোটি মানুষের চিন্তা-ভাবনা থেকেও শুদ্ধ মনে করে তবে নেতাদের একটি গুণ আছে বটে - এরা বাকচাতুর্যে দক্ষ বাকচাতুর্যের মাধ্যমে এরা জনগণের হিংসাত্মক প্রবৃত্তিগুলো উস্কে দিয়ে নিজেদের ব্যক্তিস্বার্থ দলের স্বার্থ হাসিলের জন্য অতিমাত্রায় তৎপর থাকে নেতাদের কাজই হচ্ছে জনমনে বিদ্বেষ উস্কে দেয়া প্রতিপক্ষকে নীচ, ছোটলোক, ইতর, বদমায়েশ অপদার্থ হিসেবে আখ্যা দেয়া নির্বাচক জনগণ কখনও নেতাদের বক্তব্যের সত্যতা যাচাই করে না নির্বাচক জনগণ বারবার প্রতারিত হয় নেতাদের মিষ্টি কথা আর অসম্ভব-অবাস্তব-উদ্ভট অঙ্গীকারে জনগণ বারবার প্রতারিত হয় তবুও শাসিত হবার জন্য উদগ্রীব থাকে কারণ, শাসক ব্যতীত দেশের মানুষ জনগণ হয় না
দলতন্ত্রের ভাড়াটে তাত্ত্বিকরা প্রতিদিন দূরদর্শনে রাজনীতিকদের সমালোচনা করে একে বলেটক শো জনগণ এসব সমালোচনা গিলে তৃপ্তির ঢেকুর তোলে দেশ উচ্ছন্নে যায়, লুট হয় জনগণের মান-সম্মান-ইজ্জত, সম্পদ আবার ভোট আসে - নির্বাচক জনগণ আবার প্রহসনের নির্বাচনে ভোট দেয় অতীত-পতিত অত্যাচারীকে অতীতের পতিতদের হাতে আবার রাষ্ট্রক্ষমতা তুলে দিয়ে কয়েকদিন তৃপ্তি অনুভব করে শাসকগোষ্ঠী জনসেবার নামে জনগণকে পিষতে থাকে শাসকগোষ্ঠী কথায় কথায় জনগণকে রক্ষা করার ভাষণ দেন জনগণ বারবার তাদের মিষ্টি কথায় প্রতারিত হয় জনগণ ভেবে দেখে না হাজার হাজার বছর ধরে এদেরকে রক্ষা করার ভাষণ দেয়া হচ্ছে কিন্তু জনগণ রক্ষা পাচ্ছে না
জনগণের নিরাপত্তার জন্য সরকার এবং বিরোধীদল যা কিছু করছে তাতে জনগণ প্রতিদিন নিরাপত্তাহীন হচ্ছে অবস্থার বিশ্লেষণে ধারণা জন্মে, রাজনীতিকরা যদি দয়া করে জনগণের উপকার করা বন্ধ করতেন তাহলে জনগণ ভালো থাকবে দেশ এবং দেশের মানুষকে যদি রক্ষা করতে হয় তাহলে তাদেরকে রক্ষা করতে হবে রক্ষাকারীদের হাত থেকে
মাথা যদি দেহকে শাসন করে তবেই দেহ সুস্থ থাকতে পারে পেটকে দেহ শাসনের ক্ষমতা দিলে পেট মোটা হবে আর মাথার ব্যামো হবে, অন্তর সংকীর্ণ হবে একইভাবে একটি রাষ্ট্র সুস্থ সুন্দরভাবে তখনই পরিচালিত হতে পারে যখন তা আদর্শিক পথে দূরদর্শিতার সাথে পরিচালিত হয় পেটের ওপর মাথার মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত না হলে সুস্থতা আশা করা যায় না বরং অসুস্থতা বাড়তে থাকবে এবং কালক্রমে সংক্রামক ব্যাধির আকার ধারণ করে দেহকে অচল করে দেবে
তাই দেশবাসীকে দেখতে হবে এবং নিজেকে নিজের প্রশ্ন করতে হবে এবং নিজের বিবেক দিয়ে নিজেকে বিচার করে দেখতে হবে কোনটা ঠিক - জনগণ কারা? দেশের ১৫ কোটি মানুষ/৮কোটি নির্বাচক নাগরিক/ রাজনৈতিক দলীয় কর্মীরা/রাজনৈতিক দলের সমর্থকরা? হরতাল কি? স্বেচ্ছায় কর্মবিরতি/দলীয় সন্ত্রাস/ ভাংচুর-বোমা ফাটানো-দেশের মানুষের  সম্পদ নষ্ট করে ক্ষমতা প্রদর্শন?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন