মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৩

গণতন্ত্র কেবল নির্বাচনী খেলা নয়



সময়ের সাফ কথা ....
গণতন্ত্র কেবল নির্বাচনী খেলা নয়

সিদ্ধার্থ হক ॥ গণতন্ত্র কেবল নির্বাচনী খেলা নয়। গণতন্ত্র হচ্ছে - সংখ্যাগরিষ্ঠের ইচ্ছা-অনিচ্ছার মূল্য দেয়া, পারস্পরিক সহযোগিতা ও সমঝোতার বাতাবরণ সৃষ্টি করা, নাগরিকদের অধিকার ও সুযোগের সাম্য প্রতিষ্ঠিত করা। কিন্তু স্বাধীনতার পর গত ৪২ বছরে আমাদের অভিজ্ঞতা কি বলে যে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে? নাকি উল্টো ঘটনা ঘটেছে? বাংলাদেশে যে গণতন্ত্র নেই তার বহু প্রমাণ চারদিকে জ্বল জ্বল করছে। এদেশে নাগরিকদের অধিকার ও সুযোগের সাম্য তো আসেই নি, বরং বৈষম্য আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের দেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী খেলার অন্তরালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থ। তবে বাংলাদেশের শাসক শ্রেণী সুকৌশলে গণতন্ত্রকে নির্বাচনের সমার্থক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। এদেশের মানুষ মনে করে নির্বাচনে ভোট দিতে পারলেই গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলো।
বাংলাদেশে বিশেষভাবে কৃত রাজনৈতিক ব্যবস্থা জাতীয়তাবাদ ও পররাষ্ট্রনীতির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ঐকমত্য গড়ে উঠতে দেয় না এবং গড়ে উঠতে থাকলেও তাকে বাধাগ্রস্থ ও ধ্বংস করে। এই দূষিত ব্যবস্থা বহুত্ববাদ বিলুপ্ত করে, এমনকি রাজনৈতিক দলের মধ্যেও গণতান্ত্রিক মতপার্থক্যের অবকাশ রাখে না। এ ব্যবস্থার আওতায় গণতন্ত্রের অন্যতম প্রধান উপাদান, সংবিধানসম্মত বিরোধী দলকেও সুবিন্যস্তভাবে দুর্বল করা হয়। এ ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দল কূটকৌশল ও বল প্রয়োগ করে রাষ্ট্রক্ষমতার বাইরে থাকা বিরোধী পক্ষকে দমন, পীড়ন ও নিয়ন্ত্রণ করে। এ ছাড়া ক্ষমতাসীন দল আইনসভা, বিচার ও নির্বাহী বিভাগের স্বাধীনতা ও শক্তি খর্ব করে। এ ধরনের ব্যবস্থায় গণতন্ত্রের খোসা ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না।
গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির মূলে রয়েছে আইনের শাসন, ন্যায়বিচার ও ভিন্নমতের প্রতি সহিষ্ণুতা মৌলিক সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিষয়ে সাধারণ ঐকমত্যের ওপর ভিত্তি করেই গণতন্ত্রের ভুবন তৈরি হয়। পারস্পরিক শ্রদ্ধা থাকলেই কেবল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।
সামপ্রতিক কালে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির মধ্যে যে দ্বনদ্ধ চলছে তা আদর্শের দ্বনদ্ধ নয়, ক্ষমতার দ্বনদ্ধ। এই দ্বনদ্ধ আমাদের গণতন্ত্রকে রক্ষা করবে না, বরং ১৯৭৫ পরবর্তী, কিংবা ২০০১ থেকে ২০০৮ সময়ের ধারায় ঠেলে দিতে পারে।  বিএনপি যদি নির্বাচনের ট্রেনে না ওঠে জামাত-হেফাজতের ট্রেনে ওঠে তাহলে বাংলাদেশের দুর্বল গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহ আরো বেশি দুর্বল ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। রাজনৈতিক দলগুলো চলমান সংকটকে গভীরভাবে বিবেচনায় নিয়ে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষায় ভূমিকা রাখবে এটাই বর্তমান সময়ের ঐতিহাসিক দায়িত্ব। এই ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনে যে বা যারা ব্যর্থ হবে ইতিহাস তাদের ক্ষমা করবে না।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন