শুক্রবার, ২২ জুলাই, ২০১৬

কর্মই ধর্মের শ্রেষ্ঠ পরিচিতি

কর্মই ধর্মের শ্রেষ্ঠ পরিচিতি

  • ·      অবশ্যই যারা ধর্ম সন্বন্ধে নানা মতের সৃষ্টি করেছে ও বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে তাদের কোনো কাজের দায়িত্ব তোমার নেই, তাদের বিষয় আল্লাহ্ এখতিয়ারভুক্ত। আল্লাহ তাদের কৃতকর্ম সন্বন্ধে তাদের জানাবেন’। (আল কুরআন-৬:১৫৯)।
  • ·        ‘তুমি কি দেখেছ তাকে যে কর্মফল অস্বীকার করে? সে-তো সে-ই যে পিতৃহীনকে রূঢ়ভাবে তাড়িয়ে দেয় আর অভাবীকে অন্নদানে উৎসাহ দেয় না’। (আল কুরআন-১০৭: ১-৩)।
  • ·        ‘আল্লাহ্ আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন যথাযথভাবে যাতে প্রত্যেক ব্যক্তি তার কর্মানুযায়ী ফল পেতে পারে, তাদের ওপর অত্যাচার করা হবে না’। (আল কুরআন-৪৫:২২)।
  • ·        ‘প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ কৃতকর্মের জন্য দায়ী’। (আল কুরআন - ৫২:২১)।

শেখউল্লাস ॥ ইসলামের (শান্তির) নবী মুহাম্মদ (সা.)-এঁর উপর আরব দেশে কুরআন নাযিল হয়েছিল চৌদ্দ শ’ পঞ্চাশ বছর আগে। এখন আমরা বাস করছি বাংলাদেশে। কিন্তু কুরআনের নির্দেশনাবলী বাংলাদেশের মানুষ তথা মানবজাতির শান্তি ও মঙ্গলের জন্য আজও সমানভাবেই প্রযোজ্য। মুহাম্মদ (সা.)-এর শান্তি ও সত্যের ধর্মকে তখনো যেমনিভাবে বিধর্মীরা মেনে নিতে পারেনি, আজও পারছে না সেই বিধর্মীদেরই অনুসারীরা যারা মানবতার শত্রু, ধর্মের শত্রু। এই শত্রুরা কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠী, এরা আজও ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করে, ব্যবসা-বাণিজ্য করে, পার্থিব ভোগ-বিলাসের জন্য সম্পদের পাহাড় সৃষ্টি করে মানুষে-মানুষে বৈষম্য তৈরি করে চলেছে। কিন্তু কর্মই বাংলার সাধারণ মানুষের ধর্ম, এদেশের মানুষ শান্তিপ্রিয়-হাজারো বছরের ইতিহাসের  বিভিন্ন পথ-পরিক্রমায় তারা এই পরিচয় দিয়েছে। বিশ্বে বাঙালিদের একমাত্র স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সুকঠিন সংগ্রামে অংশগ্রহণের মাধ্যমে এদেশের মানুষ তাদের কর্ম ও ধর্মের প্রমাণ রেখেছে। ১৯৫২, ’৫৪, ’৬২, ’৬৬, ’৬৯ ও ’৭১-এ এদেশের মানুষ শত্রুর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে, রক্ত দিতে কখনো দ্বিধা করেনি। তাই দেখা যায়, সঠিক সময়ে সঠিক কাজটি করতে বাংলার মানুষ কখনো ভুল করেনি। এভাবে তারা প্রমাণ করেছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলা, সত্য ও ন্যায়ের জন্য প্রয়োজনে প্রাণ বিসর্জন দেয়া-এ সবকিছুই তাঁদের কর্ম ও ধর্মেরই অংশবিশেষ। যারা এর ব্যত্যয় ঘটিয়েছে, মানুষে-মানুষে হানাহানি সৃষ্টি করেছে, অন্যায় করে সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করেছে, মানবতা ও মনুষত্বের বিরুদ্ধে কাজ করেছে তাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে এদের কোনো ধর্ম নেই। আবহমান কাল থেকে এদেশের প্রচলিত মূল্যবোধটাই এরকম। অথচ যুগে যুগে এক শ্রেণীর মানুষ লোভ, হিংসা, পরশ্রীকাতরতাসহ পার্থিব নানা মোহে আচ্ছন্ন হয়ে হত্যা-ব্যভিচারসহ নানা অন্যায়-অত্যাচার-নির্যাতন করে সমাজে অশান্তি ও বৈষম্য সৃষ্টি করেছে, মনুষ্যত্ব ও মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের আশ্রয় নিয়েছে। মানুষের ধর্ম যে মানবতা ও মনুষ্যত্ব তাকে তারা অপমান করেছে। সূফী সাধক আনোয়ারুল হক-এঁর একটি বাণী এক্ষেত্রে স্মরণযোগ্য-‘মানুষ যদি হতে চাও, মনুষ্যত্বকে জাগ্রত করো’।          
এদেশের প্রবাদে ও উপদেশবাণীতে বলা হয়েছে, ‘হও কর্মেতে বীর, আর ধর্মেতে ধীর’। এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ সাধারণ মুসলমান। আর এ মুসলমান সম্প্রদায় এদেশে হাজার বছর ধরে শান্তি (ইসলাম) ধর্মের অনুসরণ করে আসছে। এখানকার মুসলমানদেরকে নতুন করে ধর্ম শেখাতে চায়-এরা কারা? ‘অলি-আল্লাহ্ বাংলাদেশ, শহীদ-গাজীর বাংলাদেশ, তাঁদের ওয়াস্তে, তাঁদের ওয়াস্তে রহম করো আল্লাহ, রহম করো আল্লাহ’, ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে বাংলার আকাশে রক্তিম সূর্য আনলে যারা,  তোমাদের এ ঋণ কোনোদিন শোধ হবে না’ ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা, আমরা তোমাদের ভুলবো না’, অথবা ‘একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার সারা বিশ্বের বিস্ময়, তুমি আমার অহংকার’-এ জাতীয় কত শত গান ও কবিতার মধ্যে বিধৃত রয়েছে বাংলাদেশের পরিচয়, বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের তথা বাঙালিদের আবেগ-অনুভূতি ও উপলব্ধি। স্বাধীনতার ফসল হিসেবে এদেশের সাধারণ মানুষের এখন অর্থনৈতিকভাবে অনেক উন্নতি ঘটেছে। গ্রাম ও শহরের মধ্যেকার ব্যবধান অনেক ক্ষেত্রেই ঘুচে যাচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তির বদৌলতে। কিন্তু দুঃখজনক ঘটনা হচ্ছে, এই অর্থনৈতিক উন্নতি, তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ সুযোগ-সুবিধা মানুষের চিন্তা-চেতনাকে কোন্ দিকে নিয়ে যাচ্ছে সেটাই প্রশ্ন। বিগত বছরগুলোতে বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নামে বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক ও উগ্রবাদী কর্মকা-, নিরীহ মানুষ হত্যা ও  বিদেশি নাগরিক হত্যার ঘটনা যেভাবে বেড়ে চলেছে তাতে প্রকৃত ধার্মিক মানুষেরা উদ্বিগ্ন না হয়ে পারছে না। মানুষকে উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তার মধ্যে ফেলে দিয়ে সমাজে অশান্তি ও অস্বস্তি তৈরি করা যাদের কর্ম ও ধর্ম তারা কখনো সফলতা অর্জন করতে পারে না, তাদের ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে বহুবার কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারণ করা হয়েছে। বস্তুত মানুষের কর্ম ও ধর্ম পরষ্পর হাত ধরাধরি করে চলে। কর্ম ভালো না হলে তার ধর্মও কখনো ভালো হতে পারে না। আদম (আ.)-এর পর থেকে যত নবী-রাসুল-অলি-আউলিয়া-সূফী সাধক-দরবেশ এই পৃথিবীতে এসেছেন, মানুষকে শান্তি ও সত্যের পথে আহবান জানিয়েছেন, তাঁরা সবাই নিজ নিজ কর্ম যথাযথভাবে সম্পাদনের মাধ্যমে মানুষদেরকে সে পথ দেখিয়ে গেছেন। এজন্য তারা জীবনে স্বীকার করেছেন অপরিসীম কষ্ট, ত্যাগ করেছেন পার্থিব ভোগ-বিলাস। কর্ম সম্পাদনের মধ্য দিয়ে তাঁরা জীবনে ধীরতা ও  স্থিরতা অর্জন করেছিলেন। মানবজাতির শান্তি, মঙ্গল ও কল্যাণের পথে তাঁরা আজও রেখে গেছেন নিদর্শন। তাঁদের প্রদর্শিত সরল পথই শান্তি ও সত্যের পথ। অপরদিকে, যারা অশান্ত, পথভ্রষ্ট, যারা বিপথগামী ও অভিশপ্ত তাদের থেকে দূরে থাকার প্রার্থনাই সারাক্ষণ করে থাকে সাধারণ মুসলমানরা।

বর্তমানে ধর্মের নামে যে উগ্রতা, সহিংসতামূলক কর্মকা- বাংলাদেশ তথা বিশ্বের অনেক দেশে বিরাজ করছে, তার পেছনে মদদ দিচ্ছে ইসলাম (শান্তি) ধর্মের শত্রুরা। এই শত্রুরা দেশে-বিদেশে সর্বত্রই তৎপর রয়েছে। এরা এজিদী ইসলামের ধারক ও বাহক। তাদের চক্রান্ত থেকে বাঙালি মুসলমানদের ধর্মকে রক্ষার জন্য সবাইকে সচেতনভাবে এগিয়ে আসার এখনই সময়। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন