বৃহস্পতিবার, ৭ মে, ২০১৫

রাজনীতির উদ্দেশ্য ক্ষমতা না মমতাবোধ?

রাজনীতির উদ্দেশ্য ক্ষমতা না মমতাবোধ?

সংলাপ ॥ আমাদের দেশে রাজনীতিকরা ভোটের আগে জনগণের কাছে আবেদন জানান যেন তাকে ভোট দিয়ে দেশ ও দশের সেবা করার সুযোগ দেয়া হয়। যে রাজনীতিক ভোটে প্রার্থী হয়েছেন তার আসল উদ্দেশ্যটা কি? সেটা কি দেশ ও দশের সেবা না-কি ক্ষমতা? দেশ ও দশের সেবা করার জন্য কি ক্ষমতা অপরিহার্য? ক্ষমতায় না গেলে কি মানুষের সেবা করা যায় না? ক্ষমতা কি মানুষকে সেবাপরায়ণ করে? ক্ষমতার সাথে সেবার সম্পর্ক কি? ‘ক্ষম তাড়িত যাহাতে’ সে ক্ষমতাবান। যার ক্ষমতা আছে সে ইচ্ছে করলে ক্ষমা করতে পারে আবার ইচ্ছে করলে শাস্তিও দিতে পারে। ক্ষমা করার যোগ্যতা যার নেই সে অক্ষম। অন্যদিকে, আমি থেকে ‘সে’- কে যে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে তিনি সেবক। সুতরাং সেবার সাথে ক্ষমতার কোন সম্পর্ক নাই। ‘সে’ অস্তিত্ব দিশাগ্রস্ত থাকে যাহাতে। যারা জনসেবার নাম করে জনগণের ভোট চায় আসলে তাদের উদ্দেশ্য জনসেবা নয়। তাদের উদ্দেশ্য ক্ষমতা। তুমি আমাকে ভোট দিয়ে এমন ক্ষমতা দাও যেন আমি তোমাকে শাস্তি দিতে পারি। এটাই মূল কথা। তোমার ভোটটা আমার প্রয়োজন দেশ ও দশের সেবা করার জন্য নয়, সেটা উপলক্ষ মাত্র; আসল লক্ষ্য হচ্ছে নিজের বিত্ত ও ক্ষমতা-প্রতিপত্তি বাড়ানো।
সেবার জন্য ক্ষমতা নয় মমতার প্রয়োজন। মমতা কি? মম মানে আমার, মমতা হচ্ছে মম তারণের আধার। মমতা হচ্ছে একটা বোধ।
এ বোধের প্রথম পর্যায় হচ্ছে অন্যের কষ্টকে নিজের কষ্ট হিসেবে উপলব্ধি। এ উপলব্ধি থেকে যখন কষ্টবোধটি আমিত্ববোধের অন্তর্গত হয় তখন তাকে মমতা বলে। মমতার মধ্যে ‘আমার আমার’ বোধ থাকে না। থাকে ‘আমি আমি’ বোধ। কোন ব্যক্তি, জীব বা বস্তুর প্রতি আমার বোধ যখন প্রত্যাশাহীনভাবে প্রকাশিত হয় তখন তাকে বলে মমতা। ক্ষমতা এবং মমতার অবস্থান দুই বিপরীত মেরুতে। যার মধ্যে মমতাবোধ জাগ্রত হয়েছে সে ক্ষমতার দিকে যাবে না আর যার মধ্যে ক্ষমতার লোভ ক্রিয়ারত আছে তার মধ্যে মমতাবোধ থাকবে না।
রাজনীতিকদের মমতা থাকলে চলে না। তাদেরকে শৃগালের মতো ধূর্ত এবং সিংহের মতো হিংস্র হতে হয়। সুতরাং, ‘দেশ ও দশের সেবা করার সুযোগ দিন’, ‘আমাকে ভোট দিয়ে জনসেবার সুযোগ দিন’ - বলে ভোটারদের হাত-পা ধরা, পা ছুঁয়ে দোয়া নেয়া, বিনয়ে অবনত হওয়া ইত্যাদি ভোট আদায়ের কৌশল মাত্র। দেশপ্রেম, মানবপ্রেম ইত্যাদি অধিকাংশ রাজনীতিকদের বাহিরের আবরণ মাত্র আসলে এরা ভেতরে ভেতরে লালন করেন ঘৃণা, অসহিষ্ণুতা, অধৈর্য, লোভ। রাজনীতি এখন হয়ে উঠেছে ক্ষমতা ও বিত্তের আধার। রাজনীতির আশ্রয়ে ক্ষমতাকে ব্যবহার করে বিত্ত ও প্রতিপত্তির সম্প্রসারণ সহজ হচ্ছে তাই সুযোগ সন্ধানীরা নামছে রাজনীতির মাঠে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ধনী ব্যবসায়ী, প্রাক্তন সেনাপতি, আমলা, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, উকিল, উপাচার্য, ব্যাংকার সবাই এখন রাজনীতির মাঠে খেলোয়াড়।

রাজনীতি এখন নীতি ও মূল্যবোধের সংকটে। ফলে দেশ ও দশের মধ্যে বাড়ছে অসহিষ্ণুতা এবং অশ্রদ্ধার চর্চা। দেশ পতিত হচ্ছে গভীর  থেকে গভীরতর সংকটে। রাজনীতিতে চলছে নীতি লালন-পালনের আকাল। এর থেকে উত্তরণের  পথ ক্ষমতা নয় মমতাবোধের জাগরণ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন