বুধবার, ১৯ মার্চ, ২০১৪

ধর্মাবলম্বী মানব জাতি তিন শ্রেণীতে বিভক্ত

ধর্মাবলম্বী মানব জাতি তিন শ্রেণীতে বিভক্ত

সংলাপ ॥ আজকের সমাজ ব্যবস্থায় গণজীবনে ধর্মের অবস্থান বিবেচনা করে আমরা ধর্মাবলম্বী মানব জাতিকে তিন শ্রেণীতে বিভক্ত দেখতে পাইঃ ধর্মভীরু, ধর্মান্ধ ও ধার্মিক। ধর্মভীরু মানুষ তারাই যারা জীবনাচরণ ও ধর্মাচরণের মাঝে কোন যোগসূত্র খুঁজে পায় না অথবা খোঁজে না। তারা ধর্মের দর্শনগত দিক উপেক্ষা করে শুধু আচরণবিধি পালন করে। ধর্মের শিক্ষা গ্রহণ করে না। স্থান-কাল ভেদে আচরণবিধি পরিবর্তনের পক্ষেও নয়। ধর্মীয় মূল্যবোধগুলো ধারণ, পালন ও লালন করে না। সরল-সাধারণ শ্রেণীর মানুষ আনুষ্ঠানিকতায় ভরপুর। ভাগ্যে বিশ্বাসী ও ব্যক্তিস্বার্থ কেন্দ্রিক কর্মের মধ্যে সর্বদা নিয়োজিত। এরাই সংখ্যায় সবচেয়ে বেশি। ক্ষমতা এই শ্রেণীকে অতি সহজে ব্যবহার করে।
ধর্মান্ধ-শ্রেণী সারা পৃথিবীতে ধর্মকে গতির মধ্যে বিচার করতে না পারার কারণে সবচেয়ে গোঁড়া হিসেবে বিবেচিত। ধর্মের দার্শনিক দিক স্বীকার করে কিন্তু ধারণ করে না। সমাজ পরিবর্তনে ধর্মের যোগসূত্র তৈরি করতে পারে না। সীমাহীন উগ্রতার আনুষ্ঠানিকতায় ভরপুর মনগড়া ধর্মতত্ত্ব তৈরি ক'রে ধর্মভীরু শ্রেণীর উপর তা চাপিয়ে দিতে জবরদস্তির আশ্রয় নেয়। ভাগ্যে বিশ্বাসী, কর্মে নয়। ধর্মশিক্ষায় বাহ্যিক শিক্ষিত কিন্তু জ্ঞানী নয়। তাদের ধর্মান্ধতা যুগোপযোগী জ্ঞানকে গ্রহণ করতে আপত্তি তোলে। ফলে চিন্তায় তারা বন্ধ্যা, গ্রহণশীলতায় তাদের অনীহা বিদ্যমান। ব্যক্তিস্বার্থ কেন্দ্রিক কর্মে সর্বদা নিয়োজিত থাকে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কাছে আত্মসমর্পন করে তাদের সহায়ক শক্তি হিসেবে সমাজে আধিপত্য বিস্তারের নেশায়। পৃথিবীর সকল ধর্মভিত্তিক অনাসৃষ্টির জন্য এই শ্রেণী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যদিও এরা সংখ্যালঘু শ্রেণী কিন্তু ধর্মভীরুদের উপর এদের প্রাধান্য সবচেয়ে বেশি।
ধার্মিক শ্রেণী সৃষ্টি রহস্যের গূঢ়তত্ত্ব ধারণ, পালন ও লালন করে, তাই তাঁরা সৃষ্টিশীল। তাঁরা বোঝেন ও বিশ্বাস করেন ধর্ম ও প্রগতি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। ধর্ম কর্মের প্রকৃতি আর প্রগতি তার গতি। গতির নিরিখে ধর্ম ও সভ্যতার জন্য এই শ্রেণী চিন্তা ও চেতনায় ব্যক্তিস্বার্থ ত্যাগ করে। সংস্কারমুক্ত হওয়ার জন্য নিজের সাথে অবিরত যুদ্ধ করেন। ধার্মিক শ্রেণী ধর্মভীরু ও ধর্মান্ধ শ্রেণীর উপর প্রভাব বিস্তার করতে চান না বরং তাদের পথ দেখাতে চান। ক্ষমতার দিকে এই শ্রেণীর দৃষ্টি নেই। ধর্মভীরু শ্রেণীর কাছে ধার্মিক শ্রেণী শ্রদ্ধেয়। ধর্মান্ধ শ্রেণী ধার্মিক শ্রেণীকে শত্রু মনে করে এবং প্রয়োজনে তাঁদের বিরুদ্ধাচরণ করতে কুণ্ঠাবোধ করে না। ধার্মিক শ্রেণী সংখ্যায় খুবই কম। সংস্কারমুক্ত হয়ে তাঁরা প্রকৃত মানুষ হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিতে ভালবাসেন।
এই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ তথা বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত সকল ধর্মের ধার্মিক শ্রেণীর ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। যেহেতু
* ধর্মভীরু শ্রেণীকে ধর্মান্ধ শ্রেণীর হাত থেকে রক্ষা করতে হবে।
* সত্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে।
* সংস্কারমুক্ত ক'রে দেশবাসীকে এক কাতারে আনতে হবে।
* ব্যক্তি-মানুষের মনুষ্যত্ববোধ জাগরিত ক'রে মানবতাকে দুস্থ, দুর্বল, অসহায়দের রক্ষাকবচ হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
* যুব সমাজকে সত্য, শান্তি ও অহিংসার ধর্মশিক্ষা দিতে হবে।
* 'ধর্ম মানবতার জন্য, ব্যক্তি বা গোষ্ঠী স্বার্থের জন্য নয়' - এই বোধ ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র তথা বিশ্ব জীবন ব্যবস্থায় প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

* ধর্মান্ধ শ্রেণীকে চিহ্নিত ক'রে শুদ্ধ হওয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে নচেৎ কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন