মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর, ২০১৩

সাক্ষাতকারে মওদুদীপুত্র হায়দার ফারুক - ‘জামাত ধর্মের নামে সুবিধাবাদের রাজনীতি করে’



সাক্ষাতকারে মওদুদীপুত্র হায়দার ফারুক -
‘জামাত ধর্মের নামে সুবিধাবাদের রাজনীতি করে

সংলাপ ॥ জামাতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ আবুল আলা মওদুদীর ছেলে সৈয়দ হায়দার ফারুক মওদুদী বলেছেন, 'জামাত পাকিস্তান না চাইলেও পাকিস্তান সৃষ্টির পর মওদুদী বললেন, আমি (মওদুদী), জিন্নাহ আর ইকবাল মিলেই তো পাকিস্তান বানালাম।' তিনি বললেন, জামাত বাংলাদেশের শুধু বিরোধিতাই করেনি, এখানে গণহত্যায় অংশ নিয়েছে। জন্ম-পরিচয়হীন সন্তানের যেমন সম্পত্তিতে কোনো অধিকার থাকে না, জামাতেরও এ দেশে রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই। ইসলাম রক্ষায় জামাত হেফাজতের মতো কোনো দলের প্রয়োজন নেই। ঢাকায় 'ধর্ম ও রাজনীতি : দক্ষিণ এশিয়া' শীর্ষক দুই দিনব্যাপী একটি আন্তর্জাতিক সেমিনারে অংশ নিতে এসে বিভিন্ন গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। পাকিস্তানের লাহোরে জন্ম নেয়া হায়দার ফারুক মওদুদী জামাতের ধর্মভিত্তিক রাজনীতির অসাড়তা তুলে ধরে বলেন, আমার বাবা তার সন্তানদের, মানে আমাদের কাউকেই ধর্মভিত্তিক রাজনীতি কিংবা জামাতের রাজনীতি করতে বলেননি। তিনি আমাদের ৯ ভাইবোনকে পড়াশোনা করিয়েছেন দেশের বাইরে। আমার ভাইবোনদের প্রত্যেকেই দেশে-বিদেশে বিভিন্ন পেশায় খুব ভালো অবস্থানে আছে। তিনি বলেন, বাবা আমাদের জামাত এবং জমিয়ত উভয় দল থেকে দূরে সরিয়ে রাখতেন। বিষয়টিকে তিনি মাদক ব্যবসার সঙ্গে তুলনা করে বলেন, একজন মাদক ব্যবসায়ী যেমন চায় না তার সন্তানরা কেউ মাদক সেবন করুক, তেমনি বাবাও আমাদের জামায়াতের কর্মকান্ড থেকে দূরে রাখতেন। এমনকি দূর থেকে দাঁড়িয়ে যদি কখনো ভাইবোনরা জামাতের সমাবেশ দেখতে চাইত কিংবা দেখতাম, তাও দেখতে দিতেন না। জামাত রাজনৈতিক দল, ফ্যাসিস্টদের দল। এ দলে আমিরের অবস্থা হচ্ছে সেনাপ্রধানের মতো। তাকে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না। হায়দার ফারুক মওদুদী ১৯৭১ সালে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের বিচার সম্পর্কে বলেন, 'মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করায় কাউকে ছাড় দেয়া উচিত নয়। সবাইকে বিচারের মুখোমুখি করা উচিত। আইনের চোখে অপরাধী হলে সবার সাজা হওয়া উচিত। তিনি বলেন, ১৯৪৭ সালে জামাত পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছে। ১৯৭১ সালে তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে। এ অপরাধেই ২ রাষ্ট্রে জামাতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা দরকার। এক প্রশ্নের জবাবে হায়দার ফারুক মওদুদী বলেন, 'শেখ সাহেবের (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) মৃত্যুর পর ক্ষমতাসীনরাই জামাতকে পতনের মুখ থেকে টেনে তুলেছে। সেই ধারাটা এখনো অব্যাহত আছে। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর গঠিত বাংলাদেশ সরকারের প্রথম সিদ্ধান্ত ছিল পাঁচটি রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করা। এর মধ্যে জামাতও ছিল। বাকি দলগুলো ছিল মুসলিম লীগ, পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টি, নেজামে ইসলাম ও পাকিস্তান পিপলস পার্টি। সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়ায় জামাতসহ বাকি দলগুলো কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে জামাতসহ এসব দলকে আবারও বাংলাদেশে রাজনীতি করার সুযোগ দেন। এসব দল শুধু বাংলাদেশের স্বাধীনতাকেই অস্বীকার করেনি, পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীকে গণহত্যাসহ নানা ধরনের যুদ্ধাপরাধ ঘটানোর কাজে সরাসরি সহযোগিতা করেছিল। তিনি বিশ্বাস করেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করায় এই ধর্মভিত্তিক দলটিকে এ দেশের মাটিতে রাজনীতি করতে দেয়া মোটেই উচিত নয়। হায়দার ফারুক মওদুদী বলেন, জামাতে ইসলামীর রাজনীতি হচ্ছে ধর্মের নাম ভাঙিয়ে সুবিধাবাদের রাজনীতি। জামাত নেতারা কখনো নিজেদের সন্তানকে বিপদের মুখে ঠেলে দিতে চান না। আর তাই জামায়াত যত সহিংসতায় জড়ায়, সেগুলোতে সব সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাধারণ মানুষ। আর এর ফায়দা লুটেন দলটির নেতারা।
হায়দার ফারুক মওদুদী পাকিস্তানে জনপ্রিয় কলামিস্ট। পাকিস্তানের দৈনিকগুলোয় নিয়মিত তার কলাম প্রকাশিত হয়। এ ছাড়া সে দেশে তিনি জামাতের সমালোচক হিসেবেও ব্যাপক পরিচিত। ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে জিহাদের বিরোধিতাও করেছেন তিনি। বাংলাদেশে কেমন লাগছে প্রশ্নে স্মিত হেসে তিনি বলেন, মনে হচ্ছে, আমি নিজের দেশেই আছি, কেবল আবহাওয়া ভিন্ন। ভূখন্ডের দিক দিয়ে তেমন পার্থক্য নেই। চিন্তাগত পার্থক্য আছে। এটাকে রাজনৈতিক পার্থক্যও বলা যেতে পারে। কাঁচা-পাকা দাড়ি, সাদা পাঞ্জাবি ও কালো কোট পরা ফারুক বলেন, পাকিস্তান যে উদ্দেশে প্রতিষ্ঠা হয়েছিল, বাংলাদেশ সে উদ্দেশে হয়নি। এ দেশ হয়েছে স্বাধীনতার উদ্দেশ্য নিয়ে। পাকিস্তানের উদ্দেশ্য ছিল ধর্মীয়। কিন্তু এই উদ্দেশ্য নিয়ে পাকিস্তান কতটা সফল হয়েছে প্রশ্নে তিনি জানান, রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহারের ফলেই পাকিস্তানে এত সমস্যা-সহিংসতা। পাকিস্তানি ইসলামিক স্কলার হায়দার ফারুক মওদুদী ইসলাম রক্ষায় ধর্মভিত্তিক রাজনীতির বিরোধিতা করে বলেন, ইসলাম হেফাজতের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। কুরআনে আল্লাহ পরিষ্কার বলেছেন, 'এই কুরআনকে আমিই হেফাজত করব।' সংগঠন করে ইসলামকে হেফাজত করার কোনো প্রয়োজন নেই।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন