মঙ্গলবার, ২ জুলাই, ২০১৩

সত্যের পথ ধরে নস্যাৎ করতে হবে সব ষড়যন্ত্র


সত্যের পথ ধরে

নস্যাৎ করতে হবে সব ষড়যন্ত্র

 
* আর যারা মন্দ কাজের ষড়যন্ত্র করে তাদের জন্য আছে কঠিন শাস্তি। তাদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হবেই। - সূরা ফাতিরঃ ১০

* তারা পৃথিবীতে ঔদ্ধত্য দেখাতো ও কূট ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। যারা ষড়যন্ত্র করে, ষড়যন্ত্র তাদেরকেই ঘিরে ফেলে। - সূরা ফাতিরঃ ৪৩

* যারা অপরাধ করেছে ষড়যন্ত্র করার জন্য, আল্লাহ্‌র কাছ থেকে তাদের উপর লাঞ্ছনা ও কঠোর শাস্তি পড়বে। - সূরা আনআমঃ ১২৪

* ওদের পূর্ববর্তীরাও ষড়যন্ত্র করেছিল, আল্লাহ্‌ ওদের ষড়যন্ত্রের কাঠামোর ভিত্তিমূলে আঘাত করেছিলেন (আর সেই) কাঠামোর ছাদ ওদের উপর ধ্বসে পড়েছিল। আর ওদের ওপর এমন দিক থেকে শাস্তি এলো যা ছিল ওদের ধারণাতীত। - সূরা নাহলঃ ২৬

 সংলাপ ॥ নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা নাটকের একটি বিখ্যাত সংলাপ এক সময় মানুষের মুখে মুখে ছিলো। নাটকে নবাবের মুখ নিঃসৃত বহুল উচ্চারিত ওই সংলাপটি ছিলো ‘বাংলার ভাগ্যাকাশে আজ দুর্যোগের ঘনঘটা, কে তাকে দেবে আশা, কে দেবে ভরসা, কে শোনাবে সান্তনার বাণী’।

ইংরেজ বেনিয়াদের বাংলা তথা গোটা ভারতবর্ষ দখলের আগের পটভূমি ফুটিয়ে তুলতেই আশ্রয় নেয়া হয়েছিল এই রূপকের। যার অন্তর্নিহিত রূপ ছিল বাংলাকে ঘিরে ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত। কাশিমবাজার কুটিরকে ঘিরে পরিচালিত সেই ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের এক মাথায় ছিল এদেশীয় বিশ্বাসঘাতকের দল, অপর প্রান্তে ছিল বৃটিশ বেনিয়া ইংরেজ। বলা বাহুল্য এই চক্রান্তেরই ফসল ছিল বাংলা তথা গোটা ভারতবর্ষে দু’শ বছর ইংরেজের গোলামী। আজ আবারও তৈরি হচ্ছে সেই একই পটভূমি। নাটুকে ভাষায় যাকে বলা যেতে পারে ‘বাংলার দুর্বাঘাসে আজ চক্রান্তের জাল পাতা।’ এই জালের এক মাথায় উগ্র ধর্মান্ধ, ধর্ম ব্যবসায়ী, ধর্মবেত্তা ও তাদের দেশীয় সহযোগী রাজনীতিকরা যাদের অবস্থান ক্ষমতার ভেতর ও বাইরে এবং জালের দড়িটাকে ধরে,  আর এক প্রান্তে বসে আছে পশ্চিমা প্রশাসন ও তার সহযোগী সৌদি আরবের সেবাদাস বেনিয়ারা।

এই চক্রান্ত বাংলার অমিত সম্ভাবনাকে ঘিরে। বাংলার মাটির তলায় ছড়িয়ে থাকা প্রাকৃতিক সম্পদকে ঘিরে। হাজার হাজার বছর ধরে পরিপুষ্ট বাংলার সোনালী ঐতিহ্যকে ঘিরে। অগণিত সাধকের পদধূলি ধন্য বাংলার পবিত্র জমিনকে ঘিরে এবং বাংলার মাটি-জল-বায়ু মথিত করে উঠে আসা এর ‘অমৃতের সন্তান’দের ঘিরে।

ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় বাংলাকে ঘিরে বাংলার মানুষকে ঘিরে, সমৃদ্ধ তিন হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতিকে ঘিরে চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র নতুন নয়। এই চক্রান্তেরই ধারাবাহিকতায় ইতিহাসের পরতে পরতে দেখা যায় বাংলার ভাঙ্গা-গড়া, বিশেষ করে ১৯০৫ সালের ‘বঙ্গভঙ্গ’ এবং ১৯৪৭ সালের মহা প্রতারণার বাংলা বিভক্তি।

১৯৭১। বাঙালির সশস্ত্র যুদ্ধ। এই যুদ্ধে বাঙালি অসম্পূর্ণ এক খন্ডিত বাংলার পূর্বাংশ নিয়ে প্রতিষ্ঠা করে একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ - বাংলাদেশ। কিন্তু, বাঙালির বিরুদ্ধে, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত থেমে থাকেনি। ’৭১-এ স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থানকারী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের মার্কিন পদলেহী শাসকরা ষড়যন্ত্রকারীদের যোগাচ্ছে অর্থ, অস্ত্র, প্রশিক্ষণ সহ প্রয়োজনীয় উপকরণ। ১৯৭৫ সাল থেকে ধর্মান্ধতার বিষবৃক্ষের চাষ আবারও শুরু হয় বাংলার জমিনে। এই বিষবৃক্ষের বীজ আমদানী হচ্ছে সৌদী গবেষণাগার থেকে।?চারা ফুটানো হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে আর পাকিস্তান- আফগানিস্তানের  মাটিতে। বপনের পালা চলছে সমগ্র এশিয়ায় এবং বাংলাদেশের মাটিতে মসজিদ-মাদ্রাসা আর তথাকথিত ইসলামী নামের প্রতিষ্ঠান-সংগঠনগুলোর মধ্যে।

চার দশকে দেশব্যাপী ধর্মান্ধদের মস্তিষ্কে বিছানো ষড়যন্ত্রের জাল এখন সুবিস্তৃত সুসংহত। এখন চলছে বিভিন্ন পটভূমি তৈরির পালা।

ওদের দরকার বাংলাদেশ। দরকার বাংলাদেশের সমুদ্র বন্দর। দরকার এদেশের মাটির তলায় পড়ে থাকা প্রাকৃতিক সম্পদ। দরকার পার্বত্য-চট্টগ্রাম। চট্টগ্রাম-পার্বত্য চট্টগ্রাম কেন্দ্র করে ভারতের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় ‘সেভেন সিস্টার’ বলে পরিচিত সাতটি রাজ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠা করতে চায় আর একটি রাষ্ট্র - ঠিক ইসরাইলের স্টাইলে। যে রাষ্ট্র দিয়েই গোটা এশিয়া বিশেষত ভারত ও চীনকে তাদের ইচ্ছা দাসে পরিণত করার মহাপরিকল্পনা।

এ লক্ষ্যেই বাংলাদেশের মাটিতে চাই ধর্মের নামে সন্ত্রাসীদের ঘাঁটি। এক্ষেত্রে পাশে পেতে চাইছে প্রতিবেশী ভারতের ধর্মীয় সন্ত্রাসীদের। বাংলাদেশকে জঙ্গি অধ্যুষিত অকার্যকর রাষ্ট্র হিসাবে তুলে ধরার সকল পদক্ষেপও নেয়া হয়েছিল কিন' ব্যর্থ হয়েছে। একের পর এক বিস্তৃত করা হচ্ছে ষড়যন্ত্রের জাল সন্তর্পণে। এখন চলছে আগ্রাসনের নতুন পটভূমি তৈরির পালা।

পরিকল্পনা মতোই ষড়যন্ত্রের জালের পরতে পরতে ছেড়ে দেয়া হয়েছে ধর্মের নামে সন্ত্রাসের ভয়ঙ্কর কীট। এর বিষাক্ত কামড়ে গত কয়েক বছরেই জর্জরিত রক্তাক্ত হয়েছে মাজার, উরস, সভা-সমাবেশ, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, সাংস্কৃতিক  সভা-সমাবেশ,  সাংস্কৃতিক ও বিনোদন কেন্দ্রস'ল।

আতঙ্কিত মানুষের মনে স্বভাবতই জিজ্ঞাসা এই চক্রান্ত ষড়যন্ত্রের পরিণতি কী? শান্তির ধর্ম ইসলামের  পবিত্র গ্রন্থ আল কুরআনে এর ফয়সালা দেয়া আছে সুস্পষ্টভাবে।
তাই সকল অঙ্গনে ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করার জন্য সংকীর্ণতার উর্দ্ধে উঠে সত্যের পথ ধরে বাঙালি জাতিকে আবারও প্রস্তুত হতে হবে শান্তি (ইসলাম) ধর্ম প্রতিষ্ঠায়। সময়ই বলে দেবে কখন কি করতে হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন