মা-বোনেদের সম্মান রক্ষার্থে- জাতিকে
কলুষমুক্ত করতে
নতুন প্রজন্ম-বাঙালি জাতির হাতিয়ার
*
বিশ্বাসী নর-নারী একে অপরের বন্ধু। এরা সৎকর্মের নির্দেশ দেয় ও অসৎকর্মে নিষেধ করে।
(৯ঃ৭১)
*
তুমি মিথ্যা আরোপকারীদের আনুগত্য করিও না। তুমি অনুসরণ কোরো না তাকে যে কথায় কথায় শপথ করে, যে পিছনে নিন্দা করে, যে একের কথা অপরের
কাছে লাগায়, যে ভালো কাজে বাধা দেয়, যে অত্যাচারী, পাপী, বদমেজাজী ও অজ্ঞাতকুলশীল।
সে ধনসম্পদে ও সন্তানসন্ততিতে ধনী বলেই তার অনুসরণ কোরো না। (৬৮ঃ৯-১৪) - আল কুরআন।
সংলাপ ॥ ছোটবেলা থেকে শুনে এসেছি নারীদের
গায়ে হাত দেয়া গুরুতর অপরাধ। হাজার অপরাধী হলেও নারীদের গায়ে হাত দেয়া যেত না। এমন
কি পুলিশও এ ব্যাপারে সাবধান থাকতো ভয়ে। কারণ নারীর গায়ে হাত দেয়ার অপরাধে না আবার
আইনের চোখে ফেঁসে যায়। আর আজ আমরা কি দেখছি। ধর্মের নাম করে, স্বরোচিত ইসলাম ও ওহাবী-মওদুদী
ইসলামকে মুহাম্মদী ইসলাম বলে ধর্মান্ধ ও ধর্মজীবীরা প্রচার করে এ দেশের নারী নির্যাতনের
জন্য কমবেশি সবাই মাঠে নেমেছে। পরিকল্পনা করে চালাচ্ছে হত্যা-পাশবিক অত্যাচার এবং?কটুক্তি।
বর্তমানে দেশে দুই নেত্রী (প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধী দলীয় নেত্রী) প্রধান দুই শক্তিমান
দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তারপরও এ দেশে নারী নির্যাতন ও কটুক্তি কমেনি বরং দিনে দিনে
বাড়ছে। নারীদের সম্মান বর্তমানে দেয়া হচ্ছে না। ক্ষমতায় যাওয়ার হীন প্রচেষ্টায় স্বাধীনতার
পর হতে রাজনীতিকরা পয়সার বিনিময়ে ধর্মজীবী ধর্মন্ধদেরকে অস্ত্র হিসেবে গ্রহণ করেছে,
ব্যবহার করছে তাদের মিথ্যাচার ও ফতোয়া।
তাদের তথাকথিত ইসলামী হওয়ার প্রথম শর্ত নারীদের বোরখা
পরাও, হিজাব লাগাও এবং বাড়ীর মধ্যে বন্ধ রাখো। হিজাব দেখলে দেশবাসীর এখন দম বন্ধ হয়ে
যাচ্ছে। শান্তি উবে যাচ্ছে কারণ তারা ধর্মান্ধ জঙ্গীদলের সদস্য হচ্ছে। হিজাবওয়ালাদের
সাথে কথা বলতে বাংলার মা-বোনদের এখন অস্বস্তি লাগে এবং তারা সবসময় ঘৃণার চোখে দেখছে
তবুও অনেকে হিজাব পড়ছে ধর্মান্ধদের চাপে।
নারী
জাতিকে বোরখার মধ্যে আটকে রাখার এবং তাদের দিয়ে জঙ্গী হামলার ষড়যন্ত্র কার্যক্রমের
পিছনে এখনো লেগে আছে '৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদলের মহিলা কর্মীরা। তারা এখন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে
স্কুল-কলেজে যেখানেই মহিলাদের সমাবেশ ঘটে, সেখানেই বোরখা পরে ঢুকে পড়ে দোয়া খায়ের,
তসবীহ গণনা আর মোনাজাতের মাধ্যমে প্রমাণ করতে চায় তারা ইসলামের পায়রবী করছে। যার প্রতি
গ্রামের অশিক্ষিত ধর্মভীরু মহিলারা অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়ছে, চুপ করে থাকছে।
তারা
তাদের রাজনৈতিক দলের নাম মুখে নেয় না। সুকৌশলে তাদের মনগড়া ইসলামের নামে করণীয় বিভিন্ন
কথা বলে ঢুকে পড়ছে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। যুদ্ধাপরাধী দলের অশিক্ষিত ধর্মান্ধ পুরুষরা
হাটে-ঘাটে ওয়াজের মাধ্যমে নারী বিদ্বেষী কার্যক্রম
চালিয়ে যাচ্ছে। এরাই বিজ্ঞানের আবিষ্কারের বিরুদ্ধে যুগে যুগে অবস্থান নিয়েছে বিভিন্ন
সময়ে। আবার বিধর্মীদের আবিষ্কারের বাহনে সওয়ার হয়ে হজ্ব করছে, দুনিয়া ভোগ করছে, টাকা
বানাচ্ছে, দুনিয়ায় নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে সারা বিশ্বে ইসলামের নামে সন্ত্রাসী কার্যক্রম
ছড়াচ্ছে। বিশ্বে ইসলামকে একটা সন্ত্রাসী ধর্ম রূপে পরিচিত করার পিছনে রাজনৈতিক ইসলামপন্থী
ধর্মান্ধদের এবং বিশ্বব্যাপী তাদের দোসরদের অবদান কতটা তা বিভিন্ন তত্ত্ব এবং তথ্য
থেকে বেরিয়ে আসছে। সহযোগীতায় সঙ্গে আছে যুগে যুগে লাদেন সৃষ্টিকারী আমেরিকা আর তার
দোসররা বিশেষ করে সৌদী বাদশাহী।
বর্তমানে
সারা বিশ্বে মুসলমানদের চরম দুর্দশা এর থেকে বাংলাদেশ বাদ নেই। '৭১-এ মসজিদে মসজিদে
হাত তুলে এরাই মোনাজাত করেছিলো আবার মা-বোনদের ইজ্জত নষ্ট করেছিলো। কিন্তু আল্লাহ তাদের
কথা শোনেননি। এখনো শুনছেন না। তারপরও রাজনীতিকদের বোধোদয় হয়নি। যারা জেনেশুনে সত্য
গোপন করছে ক্ষমতা, শোষণ ও শাসনের জন্য, ধর্মান্ধ
ও ধর্মজীবীদের ব্যবহার করছে তাদেরকে বাঙালি জাতি ঘৃণা করে। ধর্মভীরু বাঙালি বুঝতে পারছে
কিন্তু বলতে পারছে না যেহেতু বাঙালি শান্তিপ্রিয়?জাতি।
নেতাদের
মিথ্যাচার বর্তমান যুগের ইয়াজিদরা এবং তাদের
সঙ্গী রাজনৈতিক ইসলামপন্থীরা যতই নামাজ পড়ুক, রোজা রাখুক, দাড়ি রাখুক আর মহিলাদের বোরখা-হিজাব
পরাক তাদেরকে তো কোনদিন সমর্থন করতে পারেনি, এখনও পারছে না বাংলার শান্তিপ্রিয় মা-বোনেরা
কারণ তারা কুরআনিক মুসলিম।
আল্লাহ্র
ওলী, আল্লাহওয়ালা, দরবেশ এক কথায় সাধক শ্রেণী যাঁদের রাজত্ব কোনো ভৌগলিক সীমায় সীমাবদ্ধ
নয়, তাঁরা আছেন বিশ্বজুড়ে। ধর্মান্ধ, ধর্মব্যবসায়ী আর রাজনৈতিক ইসলামপন্থীরা তাদের
জানে না, চেনে না। এমনকি খবরও রাখে না, যেহেতু তারা শারিয়ার জালে আবদ্ধ। তাদের নিজস্ব কোনো
আধ্যাত্মিক শক্তি নেই, চর্চা এবং চর্যা করে না। তাদের হাতিয়ার ইসলামের নামে ক্ষমতা
দখলের ফতোয়া এবং নারীদের নিয়ে?কটুক্তি করা যা দ্বারা ধর্মভীরু জনগণকে সহজে বিভ্রান্ত
করা যায়, দুর্বল করা যায় সর্বোপরি দেশকে অশান্ত রাখা যায়। তারা পার্থিব কালো ধন-সম্পদের
পাহাড় গড়ে সারা বিশ্বময় সম্পদের নেটওয়ার্ক তৈরি করে ফেলেছে সন্ত্রাসী তৈরি করার জন্য
এবং বাংলাদেশে তাদের মনগড়া ইসলাম কায়েম এবং দেশের ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য এখন নারীর বিরুদ্ধে
মিথ্যাচার ও ফতোয়ার অস্ত্র হাতিয়ার করে নারী নেতৃত্বের আঁচলের তলায় থেকে দেশবাসীকে
বিভ্রান্ত করছে - 'ইসলাম গেলো ইসলাম গেলো বলে' এবং রব তোলার চেষ্টা করছে যুদ্ধাপরাধীদের
পক্ষে। কিন্তু আজও সফল হতে পারেনি। পারবেও না কোনোদিন! শুধুমাত্র সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি
করা ও রক্তপাত ঘটানো ছাড়া।
বৈদ্যুতিন
মাধ্যমের যুগে সারা বিশ্ব ছোট হয়ে আসছে। ইসলাম ধর্মের সত্যটা জানা মানুষের নাগালের
মধ্যে চলে এসেছে। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে থেকে মুক্তচিন্তার মানুষের ধর্মীয় গবেষণা
দিনকে দিন তীব্রতর হয়ে উঠছে। পিপাসিত মানুষ তা নিয়ে গবেষণা করছে। আর ধর্মান্ধরা প্রচার
করছে ধর্মের নামে মিথ্যাচার। আজকাল বেশির ভাগ টিভি চ্যানেল এদেরকে টকশোতে ডাকছে এবং
দেশবাসীকে দেখাচ্ছে এবং শুনাচ্ছে তাদের ধর্মীয় মিথ্যাচারের কথা। বুঝে ফেলেছে বাংলাদেশের
জনগণ। জনগণ আর তাদেরকে গ্রহণ করছে না। বস্তাপঁচা কথা দিয়ে আর জনগণকে ভুলানো যাচ্ছে
না বলে এবার বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে নারীদের নিয়ে।
সামাজিক
মূল্যবোধগুলো সমাজ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। বাসে উঠলেই তার প্রমাণ পাওয়া যায়। বর্তমান প্রজন্মের
ধর্মান্ধ মধ্যপ্রাচ্যের লেবাসধারীদের কাছেও মহিলাদের সম্মান নেই। মায়ের জাতকে যারা
সম্মান দেখায় না বা সম্মান দেখাতে শেখায় না তারা কোন্ ইসলাম পন্থী! ষড়যন্ত্রকারীদের কূটকৌশলের চাপে পড়ে ইসলাম ধর্মাবলম্বী মায়ের সন্তানরা
মা জাতির অপমান দেখছে। এতটুকু প্রতিবাদ নেই। সার্বিক সমস্যায় জর্জরিত হয়ে দেয়ালে পিঠ
ঠেকে যাওয়ার কারণে মায়েদের এখন রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ মুখর হয়ে উঠতে হবে। নতুন প্রজন্মকে কান্ডারী হয়ে মা-বোনেদের সম্মান
রক্ষার্থে এবং যুদ্ধাপরাধীদের অবিলম্বে বিচার শেষ করার দাবীতে সোচ্চার হতে সময় ডাক
দিচ্ছে। সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য ধর্মের লেবাসধারীদের কালো হাত মুচড়ে ভেঙ্গে দিতে বাংলার
মা-বোনদের একত্রিত হয়ে ঘরে-বাহিরে প্রতিরোধ গড়ার সময় এসেছে। গুমরে গুমরে কাঁদার সময়
নেই। চক্রান্তের ফাঁদে পড়ে নারী দ্বারা নারী নির্যাতিত হচ্ছে। কে কাকে বলবে সে কথা!
দুই নারী নেত্রীর দেশে নারীরা শান্তির সাগরে অবগাহন করতে পারছে না। কিন্তু কেন তা হচ্ছে
না? জবাব চায় বাংলার মা-বোনেরা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন