মঙ্গলবার, ২ জুলাই, ২০১৩

দেশবাসী জানতে চায় - ভেজাল ওষুধ প্রস্তুতকারীরা কিভাবে পার পেয়ে যাচ্ছে বছরের পর বছর


দেশবাসী জানতে চায় -

ভেজাল ওষুধ প্রস্তুতকারীরা কিভাবে পার পেয়ে যাচ্ছে বছরের পর বছর

 
সংলাপ ॥ ভেজাল ওষুধ প্রস্তুত ও বাজারজাতকারী দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বর্তমান সরকার কিন্তু কোন ফল?পায়নি দেশবাসী। র‌্যাপিড একশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) গোয়েন্দা শাখার কর্মকর্তাদের একটি রিপোর্টের ভিত্তিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বহু উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু জাতির স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়নি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিম্নমানের ভেজাল ওষুধ প্রস্তুত ও বাজারজাত করার পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার অভিযোগে বেশ কিছু ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানকে সন্দেহের তালিকায় রেখেছিল। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জরুরি বৈঠক করার পর ওষুধ প্রশাসন পরিদপ্তর কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর অনিয়ম নিয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে বলে জানা গেছে কিন্তু কারও শাস্তি হয়েছে বলে জানা যায়নি। র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার একটি টিম তদন্ত ও অভিযান চালিয়ে ভেজাল ওষুধ প্রস্তুতকারী কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করেছে। এছাড়াও ভেজাল ওষুধ প্রস্তুতকারী ও ওষুধের কাঁচামাল আমদানি করে অবৈধভাবে বাজারে বিক্রয়কারী কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করে সরকারের উচ্চপর্যায়ে একটি তদন্ত প্রতিবেদন ও করণীয় সম্পর্কে গাইডলাইন দিয়েছে। ওই গাইডলাইনে ওষুধ নীতিমালা অনুযায়ী শক্তিশালী টাস্কফোর্স গঠন করে ভেজাল ওষুধ প্রস্তুতকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়াসহ বিভিন্ন সুপারিশ করা হয়েছিল বলে জানা যায়।

জানা যায়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়া সুপারিশ অনুযায়ী ওষুধ প্রশাসন পরিদপ্তর কর্তৃপক্ষ নিম্নমানের ভেজাল ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সম্পর্কে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন এটাই ছিল জাতির প্রত্যাশা। প্রশ্ন আসে - তাহলে কি ওষুধ প্রশাসন পরিদপ্তরের অজান্তে ভেজাল ওষুধ তৈরি হচ্ছে?

দুর্নীতিবাজ অসাধু ওষুধ ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরে নিম্নমানের ভেজাল ওষুধ উৎপাদন ও বাজারজাত করে আসছে। এছাড়াও অসাধু ব্যবসায়ীরা ওষুধের কাঁচামাল (বিক্রি নিষিদ্ধ) আমদানি করে বাজারে এনে তা বেশি দামে পাইকারি কেমিক্যাল মার্কেটে বিক্রি করছে। এসব নিয়ে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে একাধিক রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছে। বর্তমান সরকারের আমলে র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখা সরেজমিনে কয়েকটি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানে গিয়ে তদন্ত করে এবং ক্রেতা সেজে ভেজাল ওষুধ কিনে জালিয়াতির তথ্য উদ্‌ঘাটন করে। এ নিয়ে কয়েকটি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের মালিককে র‌্যাব গোয়েন্দা শাখার কর্মকর্তারা জিজ্ঞাসাবাদ করে চাঞ্চল্যকর তথ্যও উদ্‌ঘাটন করে। র‌্যাব সদস্যরা নানা বেশে ঢাকা, গাজীপুর ও মিটফোর্ডসহ বিভিন্ন জায়গায় পাইকারি ওষুধ মার্কেটে তদন্ত করে ভেজাল ওষুধের লেভেল, নমুনা সংগ্রহ করে সরকারের উচ্চপর্যায়ে তদন্ত রিপোর্ট দিয়েছে। এ নিয়ে  স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের সভাপতিত্বে বহু জরুরি সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে ওষুধ প্রশাসন পরিদপ্তর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, ওষুধ বিশেষজ্ঞ, ওষুধ শিল্প সমিতি ও কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

অসাধু ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফা লাভের জন্য জনজীবনকে জিম্মি করে এবং ওষুধনীতিকে না মেনে জনস্বাস্থ্যে যে ধ্বস নামিয়ে আনার চেষ্টা করছে তার বিরুদ্ধে আপামর জনগণকে রুখে দাঁড়াতে হবে। নচেৎ ওই ব্যবসায়ীদের নীতি আয়ত্তে আনা যাবে না। তারা ট্যাক্স ও ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি করছে। বাজারে বেশি চালু ওষুধ কোম্পানির মোড়ক ও প্রোডাক্ট নকল করা হচ্ছে। এছাড়াও বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির কারখানা তদন্ত করে অপরিচ্ছন্নভাবে ওষুধ উৎপাদন করতে দেখা গেছে। ওষুধের কাঁচামাল সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা সন্তোষজনক নয় বলে  বহু রিপোর্টে বলা হয়েছে।

ওষুধ প্রশাসন, এনবিআর ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে টাস্কফোর্স গঠন করে নিম্নমানের ভেজাল ওষুধ প্রস্তুত ও বাজারজাতকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া ও ভেজাল বিরোধী অভিযানকে সামাজিক আন্দোলনে রূপ দিতে বর্তমান সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে। এছাড়াও সন্দেহভাজন ভেজাল ওষুধ প্রস্তুতকারী ও সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আসছে এমন প্রতিষ্ঠানকে শুধু সন্দেহের তালিকায় রাখা হলে সেটা নিয়েও দুর্নীতি হবার সম্ভাবনা থাকবে। তাই প্রতিটি ক্ষেত্রে জনগণকে সম্পৃক্ত করে সত্যের পথে এগিয়ে যাবার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও ওষুধ প্রশাসন পরিদপ্তরের মধ্যে যারা স্বচ্ছতার আওতাভুক্ত নয় তাদেরকে সরিয়ে সৎ ও দেশপ্রেমিকদের নিয়ে জনস্বাস্থ্য রক্ষার্থে বারবার অভিযান চালাতে হবে। তবেই হয়তো দেশের মানুষ আস্থা আনতে পারবে, যে ওষুধ খাওয়া হচ্ছে তার মান আন্তর্জাতিক সম্পন্ন এবং ঔষধ খেয়ে?মরবো না।

সর্বশেষে জানা গেছে সর্বোচ্চ ১৪ বছর কারাদন্ডের বিধান রেখে নিরাপদ খাদ্যআইন-২০১৩ এর খসড়ায় অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। গত সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়।

অনুমোদিত আইনের খসড়ায় খাদ্যে ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য ও ভেজাল মেশানোর জন্য ৭ বছরের জেল অথবা ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। একই অপরাধ দ্বিতীয় বার করলে ১৪ বছরের জেলের বিধান রাখা হয়েছে। এছাড়া মাতৃদুগ্ধের বিকল্প খাদ্যদ্রব্যের বিজ্ঞাপন প্রচারে নিষেধাজ্ঞা এনে বিকল্প শিশুখাদ্যের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে শিশুখাদ্য আইনে চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এ আইনে ৫ লাখ টাকা জরিমানা ও তিন বছর কারাদন্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন