জাতি চায় -
আবেগে বেগবান হোক রাজনীতিকরা
*
মানুষ বড়ই অকৃতজ্ঞ, যোগ্যতার মূল্য দিতে জানে না।
*
মানুষ বড়ই দুর্ভাগা; যারা নিজেদের কল্যাণ অকল্যাণ বুঝে না।
*
যে জাতি যেমন তাদের গণতন্ত্র তেমন।
শাহ্
নাসরিন ॥ মিথ্যাচারের শক্তি দেখে সচেতন দেশবাসী স্তম্ভিত, দিধান্বিত। ধ্বংস কত সহজ,
বিনির্মাণ কত কঠিন, ধ্বংস মুহুর্তের ব্যাপার, বিনির্মাণ সময় সাপেক্ষ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে কয়েক মুহুর্তের
মধ্যে ধ্বংস হয়েছিলো নাগাসাকি - হিরোসীমা নগরী। আজও জাপান তার ফলাফল বয়ে বেড়াচ্ছে।
সেদেশে আজও জন্ম নিচ্ছে ব্লাড ক্যান্সারের শিশু। ব্লাড ক্যান্সারের উপর এত গবেষণা বোধ
হয় আর কোন দেশে হয় না। একটা আশা ছিলো এ সরকার হয়তো তলে তলে কঠিন প্রস্তুতি নিচ্ছে।
কিন্তু জাতি হতাশ হচ্ছে। এদেশের মানুষ কি বুঝতে পারছে না যে রাষ্ট্র গত ৪২ বছরের জীবনে
এরকম সঙ্কটময় অবস্থায় আর পৌঁছায়নি। এ সঙ্কট মোকাবেলা করতে না পারলে কি ভয়ানক মাসুল
দিতে হবে জাতিকে। ধর্মের নামে সন্ত্রাসীদের ষড়যন্ত্রের জাল কতটা বিস্তৃত কতটা শক্ত
তা কি এখনও উপলব্ধি করতে পারছে না এদেশের মানুষ।
সবচেয়ে
অবাক লাগে মানুষ এত সহজে কি করে ভুলে গেলো বিএনপি সরকারের সীমাহীন দুঃশাসনের স্মৃতি।
মানুষ অতীতের কঠিন অসুখের কষ্টের কথা ভুলে যায়। বর্তমানে সর্দিও তার কাছে অনেক বড় বলে
মনে হয়। কিন্তু ২০০১-২০০৬ এর বিএনপি সরকারের দুঃশাসনের কষ্ট কাহিনীতো ভুলে যাওয়ার কথা
নয়। এ সময়ের পত্রিকাগুলো বের করলে দেখা যাবে ৪২ বছরের বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন দুঃশাসন,
গণতন্ত্রের নামে স্বৈরশাসন আর আসেনি। ওই সময়ে একজন নিরপেক্ষ ডাক্তার মহিলার একটা মন্তব্য
মনে পড়ছে, তিনি বলেছিলেন বাংলাদেশে আল্লাহর এক গজব নাজিল হয়েছে। আর তা হলো তারেক জিয়া।
তারেক জিয়ার ঘনিষ্ঠ মহল থেকে একটা কথা শুনেছিলাম যে তারেক জিয়া নাকি তখন বলেছিলো, আগামী
নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীই দিতে পারবে না। তার প্রমাণ আমরা তখন পেয়েছিলাম র্যাব
এর ক্রস ফায়ারের মাধ্যমে। সংখ্যালঘুদের উপর তখনকার সীমাহীন অত্যাচার ’৭১ এর নির্যাতনের
কাহিনী মনে করিয়ে দিচ্ছিলো। বিশেষ করে ভোলা অঞ্চলের ঘটনাগুলো ভালো মনে আছে। প্রতিদিন
টিভির টক শো গুলোতে তাদের অতীত কীর্তি কলাপের কাহিনীগুলো মনে করিয়ে দেয়। তাদের দুঃশাসনের
ফিরিস্তি এ স্বল্প পরিসরে দেয়া যাবে না। অশিক্ষিত শ্রেণী না হয় বুঝেনা, শিক্ষিত শ্রেণী
কি করে ধর্মের নামে আফিম খেয়ে বুদ হয়ে আছে। সত্য উপলব্ধির অবকাশটুকুও কি তাদের নেই।
ক্ষমতাসীন
সরকার সবসময়ই ১০-২০% বা তার চেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা হারায়। কারণ বর্তমানটাই মানুষ অনুভব
করে। অতীতের বহুকিছু মানুষ ভুলে যায়। বর্তমান সরকারকে তো আমি মন্দের ভালো হিসেবে নিয়েই
বলছি এ সরকারে ব্যর্থতার যে ঢাকঢোল বিরোধীরা পেটাচ্ছে সাফল্যের প্রচারতো তেমন নেই,
প্রচারণায় তারা সফলতা পেয়েছে। বিশ্ব ব্যাংকের কর্মকর্তারা গত এক বছর ধরে লেফট-রাইট
করে এদেশে আসা-যাওয়া করে এদশের প্রতিটি কর্ণারে প্রতিটি মানুষের কাছে পৌছে দিলো পদ্মাসেতুর
দুর্নীতির কাহিনী। যে দুর্নীতি হয়ইনি, হতে পারতো।
তবে
আমি বলব এ সরকারের ব্যর্থতার চেয়ে সাফল্য অনেক বেশি। ’৭১এর পরাজিত শক্তির ষড়যন্ত্র,
বিরোধী জোটের ষড়যন্ত্র, বিদেশীদের ষড়যন্ত্র যেভাবে সামাল দিয়েছে এবং এত প্রতিকূল অবস্থার
মধ্যে যেভাবে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে, যেভাবে জনগণের মৌলিক চাহিদার যোগান
দিয়েছে তা প্রশংসার যোগ্য। ১৮ দলীয় জোটের যত ভাগ ভোট আছে, যত ভাগ সমর্থন আছে, ততো ভাগ
এদের অবস্থান আছে এদেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে। এদেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে আছে ’৭১
এর পরাজিত শক্তি ও তাদের ষড়যন্ত্রের জাল। যা এদেশের মানুষের ধারণারও অতীত আত্মরক্ষার
জন্য এমন কোন পথ নেই তারা বেছে নেয়নি। তাদের হিংস্র থাবা কতটা বিস্তৃত তা অনুমান করতে
পারার কথা সচেতন মানুষ মাত্রই। এ ষড়যন্ত্রের মধ্যে কাজ করা কত কঠিন ছিলো এবং আছে, তাও
সামাল দিয়েছে এ সরকার। ’৭১ এর পরাজিত শক্তি নিজের অর্থনীতিকে যেমনি মজবুত করেছে, তেমনি
এদেশের অর্থনীতি ধ্বংসের মহড়ায় নেমেছে। গাজীপুরের নির্বাচনের ঘটনায় হঠাৎ করেই আশা সঞ্চার
হলো চিন্তার জগতে। দুর্ভাগ্যের মধ্যে সৌভাগ্যের আভাস দেখতে পেলাম। আজমত উল্লাহ হারেনি,
আজমত উল্লাহরা কখনও হারে না, আজমত উল্লাহ হেরেও জিতে গিয়েছেন। এদেশের প্রতিটি কোণে
আজমত উল্লাহর খবর পৌছে গেছে, তিনি নতুন করে পরিচিত হয়েছেন জাতির কাছে। এতদিন আজমত উল্লাহ
ছিলেন শুধু গাজীপুরের। এখন তিনি হলেন সারা দেশের, তিনি যেনো হিরো হয়ে উঠলেন। হয়তো এই
পরাজয় তার দলের জন্য আরও বড় দরজা খুলে দিবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন