মঙ্গলবার, ৯ জুলাই, ২০১৩

বদলের ধারায় জাতি বিভ্রান্ত!

বদলের ধারায় জাতি বিভ্রান্ত!

সাদি ॥ বিশ্ববাজার এবং বিশ্বমহাজনদের নিয়ন্ত্রিত উপমহাদেশে আর্থ-সামরিক ও বেসরকারী নীতির স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলাদেশ। দুর্নীতি দমনের নামে যে বুদ্ধিবৃত্তিক সন্ত্রাস এবং লুটপাট চালাচ্ছে তদারকিরাজনীতিক ও সুশীলরা এবং তার আগের পাঁচ বছর স্বঘোষিত রাজনৈতিক ইসলামপন্থীরা, তা দেখে বাংলার মানুষ বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করা আরম্ভ করেছে। ইতিহাস বলছে, আমলা-সুশীল-সামরিক শাসনের থেকে যে-কোনও নির্বাচিত রাজনৈতিক দলের শাসন ব্যবস্থা অনেক ভাল। পচতে পচতে রাজনীতিকরা এক জায়গাতে থামতে বাধ্য হয় বলেই একসময় তারা বদলায়। সীমাহীন মিথ্যাচার, ভন্ডামী, বেঈমানী, অকৃতজ্ঞতা থেকে তারা সহজে নিজেদের বদলায় না।
কিন্তু জনতার চাপ পড়লে বা তাদের ওপর আস্থাহীন হলে বদলায় অনেক সময়।
শুধুমাত্র সংস্কার চাইলে, মুখে বললে নিজের চারিত্রিক বদলও হয় না। এগুলোর বদল করতে গেলে রাজনীতিকদের স্বভাব বদলাতে হবে, ত্যাগ করতে হবে অনবরত মিথ্যা তথ্য দিয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার অভ্যাস। রাজনীতিকরা বলতে বলতে একজন মাদক-আসক্তের মতো মিথ্যাবাদী হয়ে যায়। মসজিদের অনেক ইমামদের মতো কুরআনের আয়াত বিশ্লেষণ করতে গিয়ে হাদিসের নামে মিথ্যা বলা শুরু করে। রাজনৈতিক ইসলামের নামে একসময় ধর্মজীবী মসজিদের ইমামরা মসজিদের নামাজীদের ডাকেন মুসলমানদের উদ্ধার করার নিমিত্তে জেহাদ করার জন্য। মিথ্যার মজা হচ্ছে দুধ দোয়ার মতো, মনে হয় বালতি ভরে গেছে, রেখে দিলে একটু পরে দেখা যাবে ২০০ গ্রাম! অল্প সময়ে স্বরচিত ধর্মের কথা বলে প্রচুর লোক জমায়েত করা যায়, কিন্তু সব মানুষকে তো আর চিরকাল বোকা বানানো যায় না। বুঝতে পেরে তারা সরে পড়ে, মুখ ফিরিয়ে নেয়। রাজনৈতিক ইসলামপন্থীরা সামপ্রদায়িকতাকে লালন করে, স্রেফ লাভের জন্য মনোজ্ঞকিংবা ধর্মের আবেগে সুড়সুড়ি দেয়। কৌশল ফাঁস হয়ে যায়। মানুষ দ্বিগুণ ঘৃণা করে। সাধারণ?মানুষ নিজের ধর্মের মূল্যবোধগুলো অনুশীলন করে নিজের ধ্বংস হতে বাঁচতে চাচ্ছে বর্তমানে। ত্যাগ করতে হয় মাথা-মুখ-হাতের স্ববিরোধিতা। মুখে বলব জনগণ’, মাথায় থাকবে বুদ্ধিবৃত্তিক দূর্নীতি বা সম্পদের চিন্তা, কাজে করব আধিপত্যবাদীদের পুঁজির সেবা -আজকের মানুষ তা বুঝতে পারে। ত্যাগ করতে হয় চাটুকারিতা নিজের ভোগের, ধ্বংস করতে হয় আমার-আমারশব্দকে। কেউ যদি সত্যি সত্যি সমাজ ও দলের চরিত্র বদলের কাজে হাত লাগান, তার আকাঙ্খাগুলো ধ্বংস হয়। তিনি নিজেও বদলে যান। যখন দেখা যায় তিনি বদলাচ্ছেন না, অথচ বদলের কথা বলছেন, মানে তিনি নিজের বদল চাইছেন না বরং মোনাফেকী করছেন।?
মানুষ কেন চোরের জায়গায় ডাকাত এনে বদলানোর পথে যাবেন? সুখের থেকে স্বস্তি ভাল। ইতিহাস বলে  হিটলার ভেবেছিল মিথ্যা, হুমকি আর মস্তানি করে দুনিয়াটা শাসন করবে। লিখেও ছিল, শারীরিক মানসিকভাবে মানুষকে সন্ত্রস্ত করে রাখো। অনবরত ভয় দেখাও, মানুষ তোমাকে অনুসরণ করবে। শান্তিপ্রিয় মানুষ জার্মানিতে গুন্ডামির অভ্যুত্থানের মুখে নিরাপত্তা-বিধানকারী রাষ্ট্রকে যখন দেখল, গুন্ডামির সামনে অসহায় মানুষ ঘরে ঢুকে গেল। মস্তানের সঙ্গে সমঝোতা করে বাঁচতে চাইল। যা ঘটেছে সাম্প্রতিক নির্বাচনে। নিস্ক্রিয় প্রতিরোধ মানুষকে ফ্যাসিস্টদের হাতে ঠেলে দেয়। কিন্তু কতদিন? দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে মানুষ খালি হাতেই তাদের ডাস্টবিনে ছুঁড়ে দেয়। তান্ডবের ফল হল অনেক মিথ্যার সঙ্গে কিছু সত্যও মানুষ বর্জন করলেন। যেমন প্রাক্তন শাসকদের দুর্নীতি, ষড়যন্ত্র সেগুলোও মানুষ মনে রাখছেন না। না-রাখাটাই স্বাভাবিক। আগের সরকাররা যে এসব ক্ষেত্রে সমস্ত সীমা অতিক্রম করে ফেলেছিল। বিশ্বব্যাঙ্ক এবং আমেরিকাও বিব্রত ছিল। সত্যিকারের দুর্নীতিগ্রস্তরা জাল কেটে বেরিয়ে গেল। সন্ত্রাস দমনের নামে দেশপ্রেমিক রাজনীতিক ও সত্যভাষী মানুষের ওপর নামিয়ে আনা হয়েছিল অবর্ণনীয় অত্যাচার। কিন্তু সব অতীত কর্মকান্ড পাল্টে দিচ্ছে বাংলাদেশের জনগণ। আড়ালে চলে যাচ্ছে অতীতের রাজনৈতিক চৌর্যবৃত্তি, দুর্নীতি আর গ্রামবাংলার চিৎকার।  গ্রামবাংলার মানুষ মরিয়া হয়ে?উঠছে। জড়ো হচ্ছে এবং সেই সুযোগ নিচ্ছে নানা অনভিপ্রেত শক্তি। বড় গলা করে সস্তায় বাজিমাত করতে চাচ্ছে স্বরোচিত ধর্মের নামে রাজনৈতিক ইসলামপন্থীরা। সাধারণ লোকের হাতে পয়সাও নেই। ১৫ কোটির দেশে শুধু হাহাকার। ষড়যন্ত্রের কবলে পড়ে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে আমদানি-চাল, ডাল, গম, বিদ্যুৎ আর গ্যাস নিয়ে হাহাকার রূপান্তরিত হচ্ছে ক্ষোভে। মানুষ অন্যপথে ভাবতে শুরু করছে। ভাবনাটা বার করে দিতে না পারলে পুরো দেশটাই নষ্ট লোকেদের খপ্পড়ে পড়ে যেতে পারে। তাই সরকারকে সংকীর্ণতার অবসান ঘটিয়ে মানুষের উত্তেজনা প্রশমনের জন্য নির্বাচনী ঘোষণা এবং দলীয় কোন্দল?কঠোরভাবে ঠেকাতে হবে দেশ ও জাতিকে বাচাঁবার জন্য। যেহেতু তারা যে মই দিয়ে ক্ষমতার গাছে উঠেছিলেন সেই মই তাদের অজান্তে কেড়ে নেয়া হচ্ছে অতি গোপনে।
সুতরাং বদলান বললেই বদল হয় না।?‘বদলানোএকটা প্রক্রিয়া, যার মধ্যে দল ও  নিজেকে বদলিয়ে নিয়ে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে হয়। প্রক্রিয়া মানেই গতি’, ভাঙা রেকর্ডের পুনরাবৃত্তি নয়।
এক অস্ত্র বার বার ব্যবহার করলে ভোঁতা হয়ে যায়। গতিতে থাকলে পরিবর্তন আসে, এই পরিবর্তনে থেমে থাকলে দেশ ও জাতি পিছিয়ে পড়ে হাবুডুবু খেতে বাধ্য। আর রাজনৈতিক দল ও রাজনীতিকরা ভাঁড়েপরিণত   হয়ে জনগণের কাছে হাস্যকর হয়ে ওঠে।

পরিবর্তন আনে বিকাশ। প্রতিটি স্তরে বিকাশ-সচেতন থেকে দল ও নিজেকে পাল্টে নিতে হয়। একজনের মুখে থেকে বদলে দেয়ারআহ্বানকে তখনই মানুষ গুরুত্ব দেন, যখন দেখেন দলের  সব মাথা নিজেদের বদলানোর প্রক্রিয়াতে রত আছেন এবং বদলাচ্ছেন নিজের স্বভাব, চরিত্র, ব্যক্তিত্ব, জীবন-জীবিকার সংগ্রামে জীবন চলার পথে। না-হলে ব্যাপারটা হয়ে যাবে যাত্রাদলের অভিনয়ের মতো।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন