বুধবার, ১৭ জুলাই, ২০১৩

`বিসমিল্লাহ' নিয়ে শুরু ঘৃণ্য রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র ও খেলা আজও চলছে ....!


`বিসমিল্লাহ' নিয়ে শুরু ঘৃণ্য রাজনৈতিক

ষড়যন্ত্র ও খেলা আজও চলছে ....!

 
সংলাপ ॥ সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায় বাস্তবায়িত হলে জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসনামলে জারি করা সংবিধানের সকল পরিবর্তিত অংশগুলো বাতিল হয়ে যাবে। এর ফলে ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শ নিয়ে যে সংবিধান রচনা করা হয়েছিল দেশ সেই সংবিধানটাকে ফিরে পাবে-এমনি একটি সম্ভাবনার দোলায় যখন জাতি দোল খাচ্ছিল তখনি বর্তমান সরকারের   আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদেরকে বলেছিলেন, সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল হলেও সংবিধান থেকে ‘বিসমিল্লাহ' আরবী শব্দটি উঠে যাবে না। এই শব্দটি যেখানে ছিল সেখানেই থাকবে। কেউ একে স্পর্শ করবে না। দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র থাকবে, বাকশাল কোনোভাবেই আর আসবে না। পঞ্চম সংশোধনী বাতিল হলে শুধু মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি-গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ ও সমাজতন্ত্র আবার সংবিধানে সন্নিবেশিত হবে।

এ প্রসঙ্গে বিএনপি নেতা সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদসহ তাদের দল ও জোটভুক্ত নেতারা বলেছিলেন, পঞ্চম সংশোধনী বাতিল হলে দেশে অরাজকতা তৈরি হবে। সংবিধান থেকে বিসমিল্লাহ শব্দটি উঠে যাবে, দেশে একদলীয় বাকশাল কায়েম হবে।

বলা চলে, সেইসময় এমন একটি পরিবেশ ও পরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছিল যেন ‘বিসমিল্লাহ' শব্দটি থাকলেই দেশের সকল সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, আর না থাকলে সবকিছু শেষ হয়ে যাবে! ধ্বংস হয়ে যাবে! এরপর আসল রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। কিন্তু রাজনীতিকদের মধ্যে ইসলামী মূল্যবোধগুলো আজও প্রতিষ্ঠিত হয়নি বরং ধর্মান্ধ, ধর্মজীবী এবং রাজনৈতিক ইসলামপন্থীরা সন্ত্রাসের পথ ধরে গর্ত থেকে বের হয়ে ক্ষমতার সঙ্গে লেপটে থাকার জন্য রাজনৈতিক পাশা খেলায় মত্ত হয়ে উঠেছে। পবিত্র ইসলাম ধর্ম নিয়ে কপটতা ও মিথ্যাচার যখন বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে সেখানে বাংলাদেশ আর পিছিয়ে রইলো না। একথা তো দিবালোকের মতো সত্য যে, তৎকালীন সামরিক প্রশাসক ও রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের পর তার সকল কার্যক্রমের বৈধতা দানের জন্য সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী আনা হয়েছিলো। এ সংশোধনীর আওতায় জিয়াউর রহমান ও তার দোসরদের অনৈতিক ইসলাম পরিপন্থী ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যা থেকে শুরু করে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বেআইনী কার্যক্রম আইনগত বৈধতা পেয়েছিলো। এর মধ্যে কাজগুলো ছিল খন্দকার মোশতাক আহমদের ক্ষমতা গ্রহণ, বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমের ক্ষমতা গ্রহণ ও সরকার গঠন, সরকার গঠন পদ্ধতি - ইত্যাদি। ২০০৫  সালের ২৯ আগস্ট হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ পঞ্চম সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয় রাজধানীর মুন সিনেমা হলের পরিত্যক্ত সম্পত্তি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে একটি রিট মামলায়। তৎকালীন বিএনপি সরকারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায়ের কার্য কারিতা স্থগিত ঘোষণা করে। বর্তমান মহাজোট সরকার এই আপিল প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিলে বিএনপির হৈ চৈ শুরু করলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। বর্তমান সরকার নিজেদের মতো করে সংবিধান সংশোধন করেছে যা বাঙালি জাতির জন্য কতোটা সহায়ক তা সময় বলে দিচ্ছে।

সত্যানুসন্ধানী দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে বিচার করলে দেখা যায়, জিয়াউর রহমান তার সকল বিতর্কিত কর্মকান্ড অনুমোদন করতে গিয়ে সংবিধানে যে সংশোধনী আনেন তাকে তথাকথিত ধর্মের লেবাসে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য করার জন্য ‘বিসমিল্লাহ' শব্দটি সংযোজন করেছিলেন। পবিত্র ইসলামী মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার জন্য নয়। অথচ কোনো কাজ বা কোনো শুভ কাজ শুরুর আগে ‘বিসমিল্লাহ' বলতে হবে এমন কোনো আদেশ-নির্দেশ সম্বলিত আয়াত পবিত্র কুরআনের কোথাও পাওয়া যায় না। তবে কুরআনের ১৬ নম্বর সুরার ৯৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘অতএব, যখন কুরআন পাঠ কর তাই তোমরা (তখন) প্রস্তরাহত শয়তান হইতে আল্লাহর সহিত আশ্রয় লও (বা আশ্রয় সন্ধান কর)। কুরআনের এই নির্দেশের জবাবে আমরা বলিয়া থাকি : ‘আমি আল্লাহর সহিত আশ্রয় সন্ধান করি প্রস্তরাহত শয়তান হইতে'-(সূত্র-সদরউদ্দিন আহমদ চিশতি, কুরআন দর্শন প্রথম খন্ড)। এই বাংলা বাক্যটিরই আরবী অনুবাদ: ‘আউযুবিল্লাহ হিমিনাশ শয়তানির রাযীম।'

এ প্রসঙ্গে সূফী সাধক সদর উদ্দিন আহমদ চিশতি আরো লিখেছেন, ‘এই দুনিয়ার জিন্দেগী জাহান্নামেরই একটি জিন্দেগী। এই জীবন বহু প্রকার দুঃখ-কষ্ট-ভরপুর। দৈহিক, মানসিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ইত্যাদি বহুপ্রকার কষ্ট হইতে উদ্ধার লাভের জন্য মানুষ আশ্রয় সন্ধান করিয়া থাকে। কখনও ধন-সম্পদকে আশ্রয়রূপে গ্রহণ করে, আবারও কখনও বা স্বাস্থ্য ক্ষমতা, মান-মর্যাদা, আত্মীয়-স্বজন ইত্যাদি অনেক কিছুকেই অর্থাৎ বস্তুগত আশ্রয়কে বিপদ মুক্তির আশ্রয় মনে করিয়া গ্রহণ করে। কিন্তু ইহাই আক্ষেপ যে, আল্লাহ ব্যতিত বস্তুর যে কোনো আশ্রয় তাহাকে এক জাহান্নাম হইতে অন্য জাহান্নামে নিক্ষেপ করিয়া থাকে। এইরূপ আশ্রয় সন্ধানের ফলশ্রুতি এবং উপজাত (বাই প্রডাক্ট) হইল বস্তুজগতের বৃদ্ধি বা তথাকথিত উন্নয়ন।

সকল প্রকার দুঃখভোগের একমাত্র কারণ হলো কুমন্ত্রণাদাতা (শয়তান)। এখন শয়তান কী? মানুষের আমিত্বই শয়তান। ‘আমি ও আমার' - ইহাই শয়তানের কথা। আমিত্বের আশ্রয়ে থাকা জাহান্নাম। আল্লাহর আশ্রয়ে থাকা জান্নাত। যে যত বেশি আমিত্ব প্রকাশ করে সে তত বেশি জাহান্নামের গভীরে বাস করে।

আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করিলেই আল্লাহর আশ্রয় লাভ করা যাইবে না। ইহার জন্য পূর্বশর্ত হইল ‘আমি ও আমার' পরিপূর্ণ সমর্পণ করা বা কুরবানী করা। এইরূপ সমর্পণের নামই ইসলাম ধর্ম। ইহা হইতে সরিয়া থাকিলে তাহা হয় আমার ধর্ম, আল্লাহর নয়।

সমগ্র কুরআনে উল্লেখিত জীবন দর্শন ‘তা-আউজ' এর কথারই সুবিস্তার (কুরআন দর্শন)।

নিজের জীবন ও পরিবেশ-পারিপার্শ্বিকতাকে সকল অশুভ কর্মকান্ড ও চিন্তা-চেতনা থেকে মুক্ত করতে ইসলামী মূল্যবোধগুলো নিজের মধ্যে  প্রতিষ্ঠিত না করে শুধুমাত্র মুখে ‘বিসমিল্লাহ' বলা  শুরু করে বা রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করে যে দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণ বয়ে আনে না তা আজ রাজনীতিক, রাজনৈতিক ইসলামপন্থী ধর্মজীবী ও      সচেতন দেশবাসীর কাছে স্পষ্ট। তাই ‘বিসমিল্লাহ' এবং ‘ইসলাম' নিয়ে রাজনীতির ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র ও খেলা অবসান কবে হবে এবং সত্য ও শান্তির পথ ধরে ধর্মীয় মূল্যবোধগুলো প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম কবে শুরু হবে তারই প্রতীক্ষায় দিন গুনছে দেশবাসী।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন