শনিবার, ৯ এপ্রিল, ২০১৬

সময়ের সাফ কথা.... গণমাধ্যম সেবিরা পথ হারাচ্ছে



সময়ের সাফ কথা....
গণমাধ্যম সেবিরা পথহারাচ্ছে

 অ্যাডভোকেট এম. মাফতুন আহম্মেদ ॥ দৈনিক আজাদ থেকে পাক্ষিক আজাদ বার্তা। অধুনালিপ্ত বিখ্যাত দৈনিক আজাদে শুরু হয় সাংবাদিকতার হাতে খড়ি। খুলনা থেকে প্রকাশিত পাক্ষিক আজাদ বার্তা আজও নিরলসভাবে নির্ভিকতার সাথে সম্পাদনা করে যাচ্ছি। এর মধ্যে কয়েকটি পত্রিকা বের করেছি। অনেক পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে কাজ করার সুযোগ হয়েছে। খ্যাতিমান অনেক সাংবাদিকের সান্নিধ্যে যাবার সুযোগ পেয়েছি। যদিও সাংবাদিকতার এই জগতে খুব বেশি দিনের নয়। তবুও মেঘে মেঘে কেটে গেল অনেক দিন। অনেক বছর। আজও অবিরাম গতিতে লিখে চলেছি। কোন কলামটি প্রকাশ হবে, আর কোনটি হবে না এ নিয়ে কোন চিন্তা করি না। মাথা ব্যথা করি না। চোখের সামনে যা দেখি, তা নিয়ে নিরবে নিভৃতে ভাবি, আর এসব নিয়ে গভীরে বিচার বিশ্লেষণ করি। বাস্তবতার ওপর ভিত্তি করে প্রতিদিন দু’চার লাইন লেখার চেষ্টা করি।
ছোট হোক আর একটি বড় কাগজের সম্পাদক হোক তার কাঁধে দায়িত্ব অনেক। একটি পত্রিকা তিনি দেখভাল করেন। গোটা পত্রিকার দায়বদ্ধতা থাকে তার ওপর। তিনি ভাল-মন্দ বুঝে-শুনে পত্রিকা সম্পাদনা করেন। শুনেছি পরাধীন ব্রিটিশ ভারত-পাকিস্তান আমলে যারা পত্রিকা সম্পাদনা করতেন বা সাংবাদিকতার সাথে জড়িত ছিলেন তারা সৎ এবং নির্ভীক ছিলেন। এক কথায় সকল সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে থেকে অন্যায় অ-সত্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতেন।
পরাধীন ব্রিটিশ থেকে ঔপনিবেশিক পাকিস্তান আমল। দীর্ঘ এক পথ-পরিক্রমা। এ সময়ে রাজনীতি, সাংবাদিকতা, সাহিত্য জগতে যারা ছিলেন পথিকৃত তারা দেশ বা জাতির স্বার্থে অভিন্ন ভূমিকা পালন করতেন। যদিও ওই সময়কার নেতৃবৃন্দের আদর্শিক পথ বা চেতনা ছিল ভিন্ন। কিন্তু রাষ্ট্রের জনগণের প্রশ্নে তারা ছিলেন অভিন্ন।
কাজী নজরুল ইসলাম, ইসমাইল হোসেন সিরাজী, শেরে বাংলা আবুল কাশেম ফজলুল হক, কাঙাল হরিনাথ মজুমদার, বারীন্দ্র ঘোষ, আকরাম খাঁ, মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদি, আব্দুল হামিদ খান ভাসানি, মোহাম্মদ মোদাব্বের, মুজিবর রহমান, আবুল মুনসুর আহম্মদ, আবুল কালাম শামসুদ্দীন, বিপ্লবী অরবিন্দ ঘোষ, তোফাজ্জেল হোসেন মানিক মিঞা প্রমুখরা ছিলেন এই উপমহাদেশে বাংলা সাংবাদিকতা জগতের দিক্পাল। এসব ব্যক্তিরা একাধারে দার্শনিক, রাজনীতিক, সাংবাদিক ও সু-সাহিত্যিক ছিলেন। তারা ছিলেন শতভাগ দেশ প্রেমিক। তারা দেশের মানুষের অধিকার আদায়ে ব্রত ছিলেন। তারা অপ-শক্তির মুখোশ উন্মোচন করেছেন। আমজনতার রাজত্ব কায়েমে জীবনবাজি রেখে লড়েছেন। অবশেষে জনগণের অধিকার বাস্তবায়ন করেছেন। এখন স্বাধীন দেশে নির্ভীক সম্পাদক বা সৎ সাংবাদিকের আকাল দেখা দিয়েছে, এ কথা বলি না। তবে সংখ্যায় তারা খুব বেশি নয়। যা কোন আলোচনার পর্যায়ে আসে না।
এখন প্রশ্ন বাংলাদেশের গণমাধ্যম সেবিরা কী পথ হারিয়েছে? নানা জনের নানা মত। কেউ বলেন, ঠিক পথ হারায়নি; গতি হারিয়েছে। তবে এ কথা সত্য যে, কোন কোন ক্ষেত্রে সাংবাদিকরা আজ আদর্শচ্যুত হয়েছে। মূল শিকড় থেকে দূরে সরে গিয়েছে। অনেকে দাস সাংবাদিকতায় নাম লিখিয়েছে। সস্তা কিছু প্রাপ্তির আশায় রাজনীতির রঙ্গালয়ে হাবুডুবু খাচ্ছে। তবে সব যে একই পথের পথিক তা কিন্তু নয়। আসলে সংবাদপত্র অন্য দশটি ব্যবসার মত কোন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান নয়। শুধুমাত্র মুনাফা লাভই তার উদ্দেশ্য নয়। এক সময় সংবাদপত্র কোন রাজনৈতিক আদর্শের অনুরাগি হলেও গণমানুষের স্থান ছিল সবার আগে। গণমানুষের অধিকার আদায়ে প্রাধান্যতা ছিল বেশি। পত্রিকার সাথে সংশ্লিষ্টরা দেশ-জাতির স্ব-পক্ষে সু-স্পষ্ট অবস্থান নিতেন।
আর এখন! নানা জুজুর ভয়। অত:পর আইনের নানা ধারা-উপধারার বেড়াজালে বাঁধা থাকায় সংবাদপত্র তার লক্ষ্যচ্যুত হচ্ছে। আদর্শ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তার উদ্দেশ্য ব্র্যাকেটে বন্দি হচ্ছে। তাই গণমানুষের মুখপত্র নামে খ্যাত আজকের সংবাদপত্রে তথ্য নির্ভর সঠিক লেখা আসে না। ঘটনার সঠিক বর্ণনা প্রকাশ পায় না। তাহলে সংবাদপত্রে নির্ভিকতার স্থান কোথায়? আদর্শ কোথায়? স্বাধীনতা কোথায়? গণমানুষের জন্য সংবাদপত্র এই শ্লোগানের মাজেজা কোথায়?

রাজনৈতিক সাপোর্টার হলে ভাল তবে -

প্রতিটি সংবাদপত্রের স্বাধীন নীতিমালা থাকে। আদর্শ থাকে। সম্পাদকীয় রীতিনীতি থাকে। তবে সব রীতিনীতি এবং আদর্শের মর্মমূলে অবস্থান করে গণমানুষের অধিকারের কথা। জাতীয় স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার কথা। সম্পাদক অন্য দশ জনের মত একজন মানুষ। তাই তার মানবীয় গুণাবলী রয়েছে। দায়িত্ববোধ রয়েছে। জাতির কাছে, দেশের কাছে একরাশ দায়বদ্ধতা রয়েছে। এ কথা সত্য যে, রাজনীতির বাইরে এদেশে কিছুই ভাবা যায় না। তাই রাজনীতির বাইরে থেকে সাংবাদিকতা করা সহজ নয়।
একজন সম্পাদক বা সাংবাদিক তিনি যে কোন একটি রাজনৈতিক দলের দর্শনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করতে পারেন। রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে¡ অবস্থান করতে পারেন। একজন রাজনীতিক আর সাংবাদিকের মধ্যে রয়েছে হরিহর আত্মার সম্পর্ক। একই আত্মার আত্মীয়। এক কথায় রাজনীতিক আর সাংবাদিক পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। তাই বলে একজন রাজনীতিক সম্পাদক বা সাংবাদিক হলেই অন্য কোন মত-পথের সংবাদ পরিবেশনে কী কোন বাঁধা আছে? রাজনৈতিক আদর্শ বিশ্বাসী হয়ে একতরফা  প্রতিবেদন বা সংবাদ লিখলে তা হবে অন্যায়।
দেশে বহু উল্লেখযোগ্য সংবাদপত্র ছিল। এ সব পত্রিকার সম্পাদকরা তুখোড় রাজনীতিক ছিলেন। এই উপমহাদেশে সাংবাদিকতায় অতন্দ্র প্রহরী মোহাম্মদ আকরাম খাঁ। তিনি ছিলেন দৈনিক আজাদের প্রাণ পুরুষ। তিনি অখন্ড বাংলার মুসলিম লীগের সভাপতি ছিলেন। দৈনিক আজাদ ছিল মুসলিম লীগের মুখপত্র। দৈনিক আজাদ কী তৎকালীন ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের সমালোচনা করেনি। মুসলিম লীগের ভুল শুধরিয়ে দেয়নি। গঠনমূলক ভূমিকা পালন করেননি। তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া। দৈনিক ইত্তেফাক সম্পাদক। আ’লীগের প্রখ্যাত নেতা। ইত্তেফাক পত্রিকা বাঙালির স্বাধীকারের প্রশ্নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। কোন কোন ক্ষেত্রে আ’লীগের কড়া সমালোচনা করে লিখেছেন। মজলুম নেতা আব্দুল হামিদ খান ভাসানি। আন্দোলন-সংগ্রামের এক অগ্নি পুরুষ। তিনি পাকিস্তান-বাংলাদেশ আমলে সাপ্তাহিক হক কথার সম্পাদক ছিলেন। তার দল ন্যাপের কথা হক কথার পাতায় লিখেছেন। কিন্তু দু:শাসন, আধিপত্যবাদ সর্বোপরি জনগণের কথা আগে তুলে ধরতে ভুল করেননি। পাশাপাশি তারা সকলে দল নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশনে গুরুত্ব দিয়েছেন।
আর এখন! পত্রিকার সাথে সংশ্লিষ্টরা দলবাজিতে অভ্যস্ত। ফায়দা লুটার মোসাহেবিতে ব্যস্ত। অন্যের মত প্রকাশের সময় হাতে নেই বললে চলে। এ কারণে পত্রিকার অনুসন্ধানী বা সরকারকে শুধরিয়ে দেবার মত সত্যনিষ্ট সংবাদ তেমন একটা পরিবেশন হয় না। যা হয় একপেশে বাণিজ্যিকভাবে।

সত্য প্রকাশে বাধা কোথায়

বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয়। অবাধ তথ্য প্রবাহের যুগ। ইন্টারনেট নিমিষেই সব কিছু দ্রুত পৌঁছে দিচ্ছে। কিছুদিন আগে কয়েকটি সংবাদপত্রে একটি সম্পাদকীয় কলাম পাঠিয়েছিলাম। কলামটিতে অপ্রিয় হলেও অনেক তথ্য নির্ভর সত্য কথা তুলে ধরেছিলাম। দুর্ভাগ্য! নানা পত্রিকার নানা মত। যারা নিরপেক্ষ তাদের হয় নানা মছিবত। একটি বহুল প্রচারিত জাতীয় দৈনিকের সম্পাদকীয় বিভাগের দায়িত্বরত বিনয়ের সাথে বললেন বর্তমান সময়টা ভাল না, একটু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে লিখবেন। আর একটি দৈনিকের সম্পাদকীয় বিভাগের ইনচার্জ বলেন, স্যারের (সম্পাদক) অনুমতি ছাড়া কোন সম্পাদকীয় কলাম প্রকাশ করা সম্ভব নয়। সব থেকে চমৎকার এবং উৎসাহের কথা বলেছেন ঢাকাস্থ হাক্কানী মিশনের সাপ্তাহিক বর্তমান সংলাপ পত্রিকার সাথে সংশ্লিষ্ট একজন। তিনি বলেছেন, লিখতে ভুলবেন না। পাঠাতে ত্রুটি করবেন না। প্রতিটি সাবজেক্টকে আমরা দল নিরপেক্ষভাবে সম-গুরুত্ব দিয়ে থাকি। যে কোন ভাল কাজকে স্বাগত জানিয়ে থাকি। কোন সন্দেহ নেই যে, এ সাপ্তাহিক সংবাদপত্রটি নিরপেক্ষতা, সততা এবং নির্ভীকতার প্রশ্নে আপোষহীন। আপোষহীন বিধায় জনগুরুত্বপূর্ণ আমার কলামটি প্রকাশ করেছেন।
প্রিয় পাঠক, উপরোক্ত কথাগুলো এ কারণে বললাম যে, কোন একটি লেখা সরকার বা বিরোধী দলের পক্ষে যেতে পারে, না ও পারে। তবে লেখাটি তথ্য নির্ভর হতে হবে। গঠনমূলক ভূমিকা থাকতে হবে। দেশ-জাতির স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে ডান-বামে না তাকিয়ে সত্য প্রকাশে নির্ভীক হতে বাঁধা কোথায়? যে লেখার কোন গুরুত্ব নেই, দেশ-জাতির কোন উপকারে আসে না অর্থাৎ অন্ত:সার শূন্য, বিজ্ঞাপনে কানায় কানায় পরিপূর্ণ, মোসাহেবিতে অভ্যস্ত; সে সব চাটুকারি লেখা পত্রিকার পাতা ভরে লাভ কী? সাংবাদিকতা একটি ঝুঁকিপূর্ণ পেশা। জনগণের অধিকারের কথা স্পষ্ট ভাষায় লিখতে বা প্রকাশে যদি এতই ভীতি কাজ করে তাহলে সংবাদপত্র প্রকাশের কী প্রয়োজনীতা আছে? কর্তৃপক্ষের উচিত এ ধরণের পত্রিকা বন্ধ করে দেয়া। আর বাণিজ্যিক মনোভাব নিয়ে পত্রিকা বের না করে অন্য কোন ব্যবসা করলে দ্বিগুণ অর্থ রোজগার করা যায়। এখানে মেধা অপচয় করে সময়ক্ষেপনের কোন যুক্তি আছে বলে মনে হয় না।

কেন এত জজুর ভয়

এদেশের সংবাদপত্রের যারা পথিকৃত ছিলেন তাদের কাছ থেকে আমাদের অনেক কিছু শিক্ষণীয় আছে। তারা কেমনভাবে সংবাদপত্র বের করতেন আর আমরা হাল জামানায় কেমনভাবে সংবাদপত্র প্রকাশ করছি। এক সময় বলা হতো ভাল সাংবাদিকের কোন বন্ধু নেই। বর্তমানে কথাটি একেবারে অচল। এখন সাংবাদিকদের বন্ধু বেশি। কারণ এ পেশায় এক সময় ঝুঁকি নিতে হতো। প্রতিযোগিতার মাঠে অবতীর্ণ হতে হতো। এখন সেই রামও নেই অযোধ্যাও নেই। এখন সস্তা কথা বলে অপরের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দিতে অভ্যস্ত। অনেক পত্রিকা কর্র্তৃপক্ষ বলেন, সরকার অলিখিতভাবে খড়গ উঁচিয়ে রেখেছে। তাই সব সংবাদ প্রকাশ করা যায় না। তবে এটা সত্য যে, বর্তমানে সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ‘সেলফ সেন্সরশিপ’ বিরাজমান। রাষ্ট্রের ‘বডি ল্যাঙ্গুয়েজ’ বুঝতে পেরে অনেকে ঝামেলাহীন সাংবাদিকতায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। ফলে ভাল সংবাদ অন্ধকারে থেকে যায়। কথাটি অপ্রিয় হলেও সত্য; তবে-সরকার তথ্য নির্ভর বা গঠনমূলক সংবাদ পরিবেশনে কি কোন বাঁধা দিয়েছে? হয়রানি করার কি কোন উদ্যোগ নিয়েছে? আমরা
দলবাজি,দাসবাজি সাংবাদিকতায় এত জড়িয়ে পড়েছি যে, পথ ভুলে অন্ধ গলিতে হাবুডুবু খাচ্ছি। সাদাকে সাদা বলতে পারছি না। রাজনীতির চোরা গলিতে সংবাদপত্র ডুবে আছে। তাই এমন দলবাজি-দলদাসী মানুষিকতা সৃষ্টি হয়েছে যে, তথ্য নির্ভর কোন সংবাদ বা কলাম ছাপা সম্ভব নয়। তখন পত্রিকা অফিস থেকে বলা হয় প্রকাশে অনেক ঝুঁকি আছে। ঝামেলা আছে। বাধা আছে। অথচ এসব সংবাদ বা কলামে থাকে ১৬ কোটি জনতার কথা। দেশের কথা। একটি জাতিকে সঠিক দিক নির্দেশনার নানা জ্ঞানগর্ভ  কথা।
মিডিয়ায় পাখি নেই, মশারাই খ্যাতির শিখরে।
একটি ভাল মানের পত্রিকার কোন ব্যবসায়িক স্বার্থ থাকে না। কোন রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, সরকার বা বিদেশি রাষ্ট্র বা তাদের কোন এজেন্টদের কাছে কোন দায়বদ্ধতা থাকে না। দায়বদ্ধতা শুধুমাত্র দেশ-জনগণের কাছে। কিন্তু আমাদের দেশে হীতে বিপরীত। এখানে অধিকাংশ সম্পাদক-সাংবাদিক ম্যানেজড্ মিডিয়ার সাথে জড়িত। তাই এদের এত জজুর ভয়। কারণ পেশাদারি সম্পাদক-সাংবাদিক এখন কোথায়? আছে; আবার নেই বললেও চলে। বাংলাদেশের প্রিন্টিং এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়া বলতে যা কিছু আছে, তার সবটুকুর মালিক এখন কারা? মিডিয়ার মালিক বলতে সরকার প্রধান, কতিপয় মন্ত্রী, রাজনৈতিক দল, বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বহুজাতিক কোম্পানী। জনগণ তাদের কাছে কোন মূখ্য নয়। ব্যবসা বা স্বার্থ সিদ্ধিই তাদের একমাত্র মোক্ষম উদ্দেশ্য। ক’জন পেশাদারি সম্পাদক বা সাংবাদিক এই পেশার সাথে জড়িত রয়েছে। এক কথায় ব্যবসায়ীরা এই পেশাকে ঘিরে ফেলেছে। তারা চ্যান্স সম্পাদক-সাংবাদিক সেজেছেন। উদ্দেশ্য সম্পাদক বা সাংবাদিকের তকমা গায়ে লাগিয়ে দু-পয়সা কামানো। কবি আবু হাসান শাহরিয়ার ‘অর্ধসত্য’ নামে রচিত এক গ্রন্থে লিখেছেন ‘মিডিয়ায় পাখি নেই, মশারাই খ্যাতির শিখরে’। এই মশাদের কাছে আদর্শ বড় কথা নয়, কিছু নগদ নারায়ণ হলে যথেষ্ট। এ দেশের হাল জামানায় টর্চলাইট মেরে একজন নির্ভীক সাংবাদিক-সম্পাদক খুঁজে পাওয়া দুস্কর। তাই তারা মানুষিকভাবে দুর্বল। আর এই দুর্বলতার কারণে সমাজে নানা জুজুর ভয়ে আতংকিত, সন্ত্রস্ত।

চাই রাজনীতির মোহমুক্ত সাংবাদিকতা

একথা সত্য ভক্তিতে মুক্তি। তবে কোন কাজে অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ। অতি ভক্তির নামে কুটিল রাজনীতির কাছে গণমাধ্যমের পরাজয় মানে জনগণের পরাজয়। জনগণের পরাজয় মানে রাষ্ট্রের পরাজয়। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশে কোন অজুহাত নয়। একপেশে, দলবাজি সাংবাদিকতা নয়, বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য নয়, গণমানুষের মনের কথা পত্রিকার পাতায় পাতায় তুলে ধরতে হবে। যতই অলিখিত সরকারি কালাকানুন থাকুক না কেন গণমানুষের কথা বলতে কোন বাধা নেই। আর গণমানুষের কথা বলতে যেয়ে কোন সংবাদপত্র বন্ধ হলে বা রোষাণলে পড়লে ইতিহাসের পাতায় তিনি হবেন জাতির শ্রেষ্ঠতম ব্যক্তির একজন। জনগণ দাস সাংবাদিকতাকে মনে-প্রাণে ঘৃণা করে। তাদের অ-আদর্শকে নিন্দা করে। তাই অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে সম্পাদক-সাংবাদিককে নির্ভীক, নির্লোভ ভূমিকা পালন করতে হবে। সংবাদপত্র জাতির দর্পন শুধু কাগজ-কলমে নয়, বক্তৃতা-ভাষণে নয়; জাতির বিবেকের ভূমিকা পালন করতে হবে।
রাজনীতির মোহমুক্ত হয়ে সাংবাদিকতা করতে পারলেই টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া, রূপসা থেকে পাথুরিয়া পর্যন্ত সত্যিকারের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখবে। স্মরণ রাখা উচিত, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মুখ থেকে উচ্চারিত কোন কথা সৃষ্টিকর্তার মুখ থেকে আশ্রিত এক প্রকার বাণী। জনগণের অধিকারের কথা, দেশের কথা সর্বাগ্রে পত্রিকার পাতায় স্থান দেয়া উচিত। তখন বলা যাবে সংবাদপত্র গণমানুষের অধিকারের কথা বলে। মজলুমের পক্ষে নির্ভীক ভূমিকা পালন করে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন