শনিবার, ৯ এপ্রিল, ২০১৬

অর্থ-অনর্থে দৌঁড়-ঝাপ খেলা



নজরুল ইশতিয়াক ॥ খেলার মাঠে, কখনও শিল্প সংস্কৃতির সরস আড্ডায়, কখনো কোন বৈদ্যুতিন মাধ্যমের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে সদা ব্যস্ত তিনি। ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে উৎসব পার্বনের সাথে তাল মিলিয়ে তিনি রং বাহারী পোষাক পরেন। সব বিষয়ের আলোচনায় তিনি সজ্জন সর্বজ্ঞ হিতৈষী মানুষ হিসেবে পরিচিত। বাঙালির কৃষ্টি ঐতিহ্য সংরক্ষণের আয়োজনেও তিনি নিবেদিতপ্রাণ। শত ব্যস্ততার মধ্যেও অনুর্দ্ধ অনুজদের শরীর গঠনে, মেধা বিকাশে, সৃজনী চিন্তা সম্প্রসারণে, শিক্ষাবৃত্তি, পণ্য পরিচিতি মূলক অনুষ্ঠানেও তাকে পাওয়া যায়। পণ্যের মোড়ক উঁচুতে তুলে ধরে তিনি হাসছেন, খোশগল্প করছেন একাই উচ্চস্বরে হাসছেন আবার গম্ভীর ভারাক্রান্ত মন খারাপ, গালগল্পের আসরে দারুন আড্ডাবাজ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থমন্ত্রী।
নব পুস্তকের মোড়ক উন্মোচন, ছবি প্রদর্শনী, চলচ্চিত্র উৎসবেও সচরাচর দেখা মেলে প্রাণ উচ্ছল প্রবীণ এই কর্মবীরকে। বিভিন্ন সময়ে তার মন্তব্য আমাদেরকে মনে করাতে বাধ্য করে তিনি যা মনে আসে তাই প্রকাশ করেন।
এত কাজ তবু বাজারে প্রচলিত রয়েছে তিনি নন, তিনি আমাদের নন। খোদ সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা তার আচরণে রুষ্ট ত্যক্ত বিরক্ত। তার বকোয়াজ শব্দ দুষণে দল ও সরকারের প্রবীণ নেতা মন্ত্রীরাও চরম বিরক্ত। প্রকাশ্যে তার সমালোচনা হয় তিনি নিজেও তা জানেন আবার ক্ষমা চান, কিছুক্ষণ মাথা নিচু করে বসে থাকেন। আত্মপক্ষ সমর্থন করে বয়স বাড়ার অজুহাতও দেন। টেবিলচারিতায় ফোনালাপে মাননীয় অর্থমন্ত্রী কবে বাদ পড়ছেন কেন তাকে বাদ দেয়া হচ্ছে না এ সব আক্ষেপ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দলীয় কর্মী সমর্থকসহ অনেকের। এমনকি টিভি টকশোতে তাকে অপদার্থ অপ্রয়োজনীয় বলা হয়েছে বহুবার। কেন তাকে অপসারণ করা হচ্ছে না এ নিয়ে বিশিষ্টজনদের আক্ষেপ প্রকাশ পেয়েছে। বাংলাদেশ আওয়ামলীগে তার কোন অবস্থান পদ পদবী নেই। এমনকি তিনি দলীয় দু-একজন প্রবীণ নেতার বাইরে দলের মাঝারী উচ্চ, নি¤œ কোন পর্যায়ের নেতাকে সিডিউল দেন না। তার সিডিউল নিতে হলে ষ্পষ্টভাবে কারণ উল্লেখ করতে হয় দলীয় নেতা কর্মীদেরকে।
এবারের আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার আগে তিনি রাজনীতি আর না বলেছিলেন তারপরও রাজনীতি তাকে ছাড়ে নাই। কেন তিনি এই বয়সেও অর্থমন্ত্রণালয়ের মত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব নিলেন তার ব্যাখ্যা জনগণকে দেবার প্রয়োজন তিনি দেখেননি, কারণ কোন মন্ত্রী রাজনীতিক এটি দেখান না।
নিশ্চয় তাকে উপযুক্ত মনে করেই স্বপদে পূনর্বাসিত করা হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন আসে স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশে জবাবদিহিতার এই সময়ে তিনি কোন্ চাপে কেন অপরিহার্য হয়ে বারবার ফিরে আসছেন সরকারে, কেন বিকল্প পাওয়া যাচ্ছে না যেখানে তিনি নিজেই বলেছেন বয়সের কারণে অনেক কিছু মনে থাকে না, এসব জল্পনা কল্পনা চলছে চলবে।
অর্থনীতি সেক্টরের এত বড় বড় কেলেংকারীর পরও তিনি পদত্যাগ করার কোন দায় অনুভব করেন না, উপলব্ধিতেও আসে না, চেতনায় কুঠারাঘাত করে না, তিনি বারবার ক্ষমা চান। জনগণের চিন্তায় উঁকি মারে তার পদে আসীন থাকার নেপথ্যে কি কোন মতলব কাজ করছে?
জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ড বরকত তো প্রকাশ্যে সাংবাদিক সম্মেলনে তাকে বিশ্বব্যাংকের দালাল এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় তার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। আবুল বারকাতের গুরুতর অভিযোগ ছিল অর্থমন্ত্রী সব সময়  দালাল খোঁজেন।
সাংবাদিক মহলে অর্থমন্ত্রী বড্ড রসিক মহাজন। ক্যামেরাম্যান পিছনে পিছনে ছুটছে আর তিনি লিফটে উঠে পিছন ফিরে, কখনো গাড়ির গ্লাস একটু ফাঁক করে বাংলিশ মন্তব্য করেন। সাংবাদিক মহলে চাওর রয়েছে জনাব মুহিত সব সময় সাংবাদিকদের বোঝাতে চান তোমরা দৌঁড়ের উপরে থাকো আমার সময় নেই।
বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বড় অবকাঠামোগত ষড়যন্ত্রের নাম পদ্মা সেতু। পদ্মাসেতুতে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগে মন্ত্রীত্ব হারাতে হয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী সহ সচিবকে। সেই পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ অনেক দূর এগিয়েছে বিশ্বব্যাংকের ঋণ ছাড়াই। কিন্তু এটি নিজস্ব অর্থায়নে সম্ভব নয় বলেছিলেন এই অর্থমন্ত্রী। যারা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণের পক্ষে যুক্তি দেখিয়েছিলেন তাদের তিনি অপদার্থ কল্পনাবিদ অবাস্তব আখ্যায়িত করেছেন। এমনকি বর্তমান যোগাযোগ মন্ত্রী যখন পদ্মাসেতুর কাজ অচিরেই শুরু হবে বলে বারবার মিডিয়াকে জানাচ্ছিলেন তখন অর্থমন্ত্রী মহোদয় তাকেও ভাবাবেগ তাড়িত অবাস্তববাদী মন্ত্রী বলতেও দ্বিধা করেননি। তারপরও এটা সত্য পদ্মাসেতুর কাজ অনেকদূর এগিয়েছে। দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ আশায় বুক বেধে বসে আছে। দেশরত্ন শেখ হাসিনার পাশে যেসব অর্থনীতিবীদ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্ভব বলে যুক্তি দেখিয়েছিলেন তাদের কাউকেই অর্থমন্ত্রী সরকারী কোন দায়িত্বে আনার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেননি। তাই বাঙালি জাতির মধ্যে উদ্বেগ আছে এবং চিন্তায় কাজ করছে সন্দেহ - তিনি অর্থমন্ত্রী থাকলে পদ্মাসেতু নির্মাণ সম্পন্ন হবে কিনা, না আবার কোন ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পড়ে সরকারকে হেনস্থা করা হবে!
ড. আতিউরকে তিনি নিয়োগ দিয়েছেন আর আতিউর সব জায়গায় বলে বেড়ান প্রধানমন্ত্রী তাকে নিয়োগ দিয়েছেন এটি অর্থমন্ত্রীকে চরম কষ্ট দিয়েছে কিন্তু তিনি পদত্যাগ করেননি। কেন ড. আতিউর বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ বৃদ্ধিকে একটি সফলতা হিসেবে দেখান এটিও মাননীয় অর্থমন্ত্রীর আক্ষেপ এবং সংকীর্ণতার মাধ্যমে নিজের অযোগ্যতার বহিঃপ্রকাশ। উপরন্তু নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্বুদ্ধ করাটাকে তিনি ধৃষ্ঠতা হিসেবে কোন কোন আপলাচারিতায় প্রকাশও করে ফেলছেন। তারপরও তিনি বহাল তবিয়তে অ-র-থমন্ত্রী।
অর্থমন্ত্রী উচ্চ শিক্ষিত, আন্তর্জাতিক অর্থ ষড়যন্ত্রকারী প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করেছেন। বিশ্ব অর্থনীতিতে রাজনীতি ক্ষমতাধরদের সাথে উঠা বসা অনেক কিছুই জুটেছে তার কপালে। ক্ষমতায় থাকার ক্ষেত্রেও দল-মত নির্বিশেষে তিনি বহু পদ পদবীতে ভূষিত হয়েছেন। ফলে তার চিন্তা হতে পারে অর্থমন্ত্রী হিসেবে তিনি অপ্রতিদ্বন্দ্বি। উপরন্তু সিলেটের মানুষ হিসেবে বিশাল একটি সিলেটি আন্তর্জাতিক বলয়ের সাথে আর্থ সামাজিক যোগাযোগ তার অহংভাবকে প্রকাশ করতে দেখা গেছে তার কথায় এবং আচরণে।
বাজেটে তার পারদর্শীতা কোথায় এটি নিয়ে সংশ্লিষ্টরা গবেষণা করুক। কিন্তু কৌতূহলী অনুসন্ধিৎসুতায় বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় - সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলেছে, তার কোন পরিবর্তন নেই। বাজেটের নামে তিনি যা উপহার দিয়েছেন তাতে দেশপ্রেম অগ্রগতি উন্নতি লক্ষ্য রূপকল্প কোন কিছুরই প্রতিফলন ও বাস্তবায়ন নেই। তার দেয়া কোন বাজেটই জাতিকে সত্যিকার অর্থে এগিয়ে নিতে কোন বাস্তব ভূমিকা রাখেনি।
তার বাজেট বক্তৃতার ভিডিও ফুটেজ কিংবা বাজেট বিবরণী একটু গভীরভাবে অনুসন্ধানী দৃষ্টিতে পাঠ করলেও যা পাওয়া যাবে তাতে কোন প্রজ্ঞা মেধা সৃজনশীলতা দূরদর্শিতাতো দূরে থাক বরং পক্ষপাতিত্ব অবজ্ঞা এবং কখনো কখনো হালকা হাস্যরসের খোরাক যোগাবে। উপরন্তু আনাড়ী দিয়ে চলমান নকল করালে যা হয় তারই প্রতিফলন দেখা যাবে সেসব বাজেটে। খোলামেলা আলোচনায় অর্থমন্ত্রীর বকোয়াজ অন্তসারশূন্য চাপাবাজি নিয়ে আলোচনা চলছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও যা বাংলার বাতাসে কান পাতলে শোনা যায়। সেই আলোচনা অর্থমন্ত্রীকে নিয়ে, ব্যক্তি মুহিতকে নিয়ে নয়।
লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত এই দেশের প্রত্যেকটি বাঙালি সরকারের যে কোন পদধারির চাটুকারিতা কর্মকা- নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে। বর্তমান অর্থমন্ত্রী মহাকালে প্রশ্নবিদ্ধ ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিগণিত হবে এতে কোন সন্দেহের অবকাশ আছে কি নেই তা সময় বলে দেবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন